খুব ছোটবেলায় আমার শিকারের গল্প শোনার ভীষণ ঝোঁক ছিল । আমার ঠাকুরদাদা ছিলেন গল্পের খনি । আমি তাঁকে ডাকতাম গল্পদাদা বলে । কত যে অজানা বিচিত্র গল্পের অফুরন্ত সম্ভার সাজানো ছিল দাদার ঝুলিতে তা বলার নয় । কতকালের কত অজানা দেশের হাতছানি, অচেনা মানুষ, পশু পাখির সম্ভব-অসম্ভবের আশ্চৰ্য রোমাঞ্চে ভরা সব গল্প ।
বাবা চাকরি করে আর মা সংসার সামলে সময় দিতে পারতেন না ।তাই ওই বয়সে দাদাই ছিলেন আমার গৃহ শিক্ষক | দুপুরে দেয়া ট্রান্সলেশন আর পাটিগণিতের টাস্ক রাতে পড়তে বসে তাঁকে নির্ভুল বুঝিয়ে দিতেই পারলেই চুকত পড়াশোনার পাট।শুরু হয়ে যেত গল্পের আসর । ওটা ছিল আমার পড়া আদায়ের জন্য দাদার কৌশল । প্রতি রাতে দাদার কাছে আমি শিকারের গল্প শোনার বায়না করতাম । সবসময় না হলেও মাঝে মধ্যেই শিকারের গল্প শোনাতেন তিনি ।আমি বড় বড় চোখে সে গল্প শুনতাম আর বড় হয়ে বিরাট শিকারী হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম ।
একদিন দাদা আমাকে এমন একটা শিকারের গল্প শুনিয়েছিলেন আজ পর্যন্ত যার একবর্ণও আমি ভুলতে পারিনি । ঘটনার স্থান, কাল ,পাত্র, বর্ণনা সব আমার মনে আছে । ঠিক অবিকল যেমনটা দাদা আমাকে বলেছিলেন ।আজ সেই গল্পটাই আপনাদের বলবো । বিশ্বাস করা না করা অবশ্য আপনাদের ইচ্ছে । গল্পটা দাদা শুনেছিলেন তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে ।
দাদার মুখেই শুনুন তাহলে : তখন আমি রাঁচিতে । ইংরেজ আমল । ব্রিটিশ মিলিটারিতে এয়ারফোর্সের একটা স্টোরে ম্যানেজারের অস্থায়ী চাকরি করি। গোটা দুনিয়া জুড়ে তখন সাজ সাজ রব । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো বলে । রাঁচিতে সেসময় আমার এক এংলো – ইন্ডিয়ান সাহেব বন্ধু ছিল । নাম ওয়াল্টেয়ার ডি ভ্যাজ । আমি ডাকতাম ওয়াল্টেয়ার বলে ।মিলিটারির বড় কন্ট্রাক্টর ছিল সে । বড় ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে । আদি বাড়ি গুজরাতের সূরাতে । কর্মসূত্রে রাঁচিতেই থাকতো । চোস্ত ইংরেজি বলতো ।ওর সাথে আমার আলাপ হয়েছিল রাঁচিতে একটা কফি বাগানে কাজ করার সময় । পরে খুব বন্ধুত্ব হয়ে যায় । ওর তদ্বিরেই আমার মিলিটারিতে ম্যানেজারের চাকরি । আমার সঙ্গে ওর পারিবারিক মেলামেশা ছিল ।
রাঁচিতে আমার মিলিটারি কোয়ার্টারে ও প্রায়ই আসতো, থাকতো, খাওয়াদাওয়া করতো আর আড্ডা দিতো । বাঙালি খানা ওর খুব পছন্দ ছিল । কড়া তামাকের চুরুট খেত ওয়াল্টেয়ার । বয়সে আমার চেয়ে বছর দশেকের বড় ছিল ও ।বয়সের সেই ফারাক অবশ্য আমাদের বন্ধুত্বে কোনোদিন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এমনিতে ব্যক্তিগত জীবনে ওয়াল্টেয়ার ছিল বড় নির্দয় প্রকৃতির লোক । হলে কি হবে, বন্ধু হিসেবে সে ছিল খাসা| উদার, খোশমেজাজি, হুজুগে আর যথেষ্ট বিশ্বস্ত। ওয়াল্টেয়ারের অবশ্য আরো একটা বড় পরিচয় ছিল । সে ছিল একজন পেশাদার শিকারী । বন্দুকের নিশানা ছিল তার নির্ভুল । শিকারে বেরিয়ে এক গুলিতে হিংস্র জংলী জানোয়ারের খেল খতম করার খ্যাতি ছিল তার । লক্ষ্যভেদে সে ছিল একেবারে যাকে বলে “ক্র্যাকশট” । তখন এক দেশি রাজা রাজড়া আর শেতাঙ্গ সাহেবরা বাদে অন্য কেউ বন্য জন্তু শিকার করতে পারতো না । প্রায়ই সে নানা রাজ্যের রাজা, রাজপুত্র বা শেতাঙ্গ সাহেবদের আমন্ত্রণে তাদের শিকার অভিযানে সঙ্গে যেত । শিকারী হিসেবে ওয়াল্টেয়ারকে ভাড়াও করতো কেউ কেউ ।দেশের নানা প্রান্তে জঙ্গলে জঙ্গলে প্রচুর বাঘ, চিতাবাঘ, ভালুক মেরেছিলো ওয়াল্টেয়ার।রাঁচিতে তার বাংলোতে আমি সেই সব জানোয়ারের স্টাফ দেখেছি ।
সেই ওয়াল্টেয়ার হঠাৎ একদিন দুম করে শিকার ছেড়ে দিলো । বেশ দিলো তো দিলো, মানুষটাও যেন কেমন একটু একটু করে পাল্টে যেতে শুরু করলো । আগের মতো আমোদ আল্হাদ করে না । কথায় বার্তায় সেই ঝাঁঝ কোথায় যেন হারিয়ে গেছিলো তার । লোকজনের সঙ্গে মেলা মেশা তো বটেই, কথাবার্তাও কমিয়ে দিলো সে । দুনিয়া চষে বেড়ানো ডানপিটে, দুঃসাহসী লোকটা হঠাৎই ঘরকুনো নির্জীব গোছের হয়ে গেলো । কেবল দফতর থেকে বাংলো আসে আর বাংলো থেকে দফতর যায়। একদিন আমি কারন জিজ্ঞাসা করতে এড়িয়ে গেলো । শুধু আমার অনুরোধে নিজের বাংলোয় বড়দিনের উৎসবটা বজায় রেখেছিলো ওয়াল্টেয়ার ।
তখন রাঁচিতে বড়দিনের উৎসব খুব জাঁকিয়ে হতো । কারণ রাঁচিতে তখন প্রচুর সাদা চামড়ার সাহেব আর ওয়াল্টেয়ার এর মতো এংলো ইন্ডিয়ান থাকতো । ওয়াল্টেয়ারের সঙ্গে রাঁচির সাদা চামড়ার সাহেবদের দারুন দহরম মহরম ছিল । বড়দিনের দিন ওয়াল্টেয়ারের বাড়িতে ক্রিসমাস পার্টি হতো । সেই পার্টিতে অনেক ইউরোপিয়ান আসতো।আমিও যেতাম । আড্ডা হতো, গানবাজনা হতো । গল্পের আসর বসত ।
ওয়াল্টেয়ার শিকার ছাড়ার পরের ঘটনা ।সেই রকমই এক বড়দিনের আসরে ওয়াল্টেয়ারের বাংলোয় শিকারের গল্প হচ্ছিলো একদিন । সবাই সেদিন ধরলো ওয়াল্টেয়ারকে । সবার অনেক অনুরোধ উপরোধে এক আশ্চর্য শিকারের গল্প শুনিয়েছিল ওয়াল্টেয়ার সেদিন ।
সে বলেছিলো, আপনারা আমার অতিথি । আপনাদের অনুরোধ রাখা আমার কর্ত্যব্যের মধ্যেই পড়ে । আমি অনুরোধ রাখবো । শিকারের গল্প বলবো ।তবে আমার একটা আবেদন আছে আপনাদের কাছে । আপনাদেরও কথা দিতে হবে এর পর আর আপনাদের কেউ কোনোদিন আমার কাছে শিকারের নামোচ্চারণও করবেন না । সবাই রাজি হয়ে গেলো । একটা চুরুট ধরিয়ে একগাল ধোঁয়া ছেড়ে বলতে শুরু বলতে করলো ওয়াল্টেয়ার ।তার ভাষ্যে গল্পটা ছিল এরকম ।
“স্বভাবে বরাবরই আমি ভীষণ স্বাধীনচেতা বেপরোয়া আর একগুঁয়ে । বয়স তখন আমার মাত্র ১৯। মহারানী ভিক্টোরিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে ব্রিটিশ আর্মিতে যোগ দিয়ে চীনে যুদ্ধ করতে গেলাম । বাবা মায়ের বারণ শুনলাম না । চীনের উত্তরে শানডং প্রদেশে তখন ভীষণ গোলমাল ।বক্সার বিদ্রোহীরা অরাজকতা চালাচ্ছে ।আগেই বাবার কাছে বন্দুক চালাতে শিখেছিলাম । সেই বিদ্যেটা এবার কাজে লাগল । আমার হাতে খুব ভালো নিশানা ছিল ।সেই কারণে গ্যারিসনে আমার বেশ খাতির ছিল ।আর প্রাণের মায়া আমার কোনো কালেই ছিল না । যুদ্ধে বেছে বেছে ক’শো বিদ্রোহী চীনার মুন্ডু যে গুলি করে উড়িয়েছিলাম নিজেই জানতাম না । যাহোক যুদ্ধ করে তো দেশে ফিরলাম বছর দেড়েক পরেই । ফিরলাম যখন তখন আমার আত্মবিশ্বাস আর নিষ্ঠুরতা কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছে । চীন থেকে ফিরলাম এক বিশ্বস্ত চিরসাথীকে সঙ্গে নিয়ে । আমার কাঁধের মানলিকার এম ৯৫ রাইফেলটা । ওটা যেন একটা দানব ।সব সময় রক্ত চায় । সুখে দুঃখে ওই আমার সঙ্গী । বাবার ব্যবসায় মন বসলো না । পড়াশোনাও আর হলো না ।যুদ্ধে বন্দুকের ঘোড়া টিপে টিপে ওই কম বয়সে মনের রোগ ধরে গিয়েছিলো । ভালো মন্দ, উচিত অনুচিত বোধ লোপ পেয়েছিলো । আমার চোখদুটো কেবলই নিশানা খুঁজতো । আর কিছু না পারি বাড়িতে বসেই মানলিকারটা আকাশে তাকে করে সেটার মাছিটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম । তাকিয়ে দেখতে দেখতে চোখ টাটিয়ে যেত, মাথা ঘুরতো । তবু ঘোড়া বাগিয়ে তাক করে যেতাম অদৃশ্য শত্রুর দিকে । এভাবেই চলছিল । তখন আমরা উজ্জয়িনীতে থাকি । সেখানে বাবার এক মক্কেলের ছেলেপিলেরা তাদের ফিরিঙ্গি বন্ধুদের সঙ্গে বেরার এলাকার একটা জঙ্গলে গেলো শিকার করতে । সঙ্গে আমাকেও নিলো । ওই জঙ্গলে ঐদিন আমি একাই চারটা কৃষ্ণসার হরিণ আর একটা হায়েনা মেরেছিলাম । সেই থেকে শুরু হলো । একের পর এক শিকার । নেশা ধরে গেলো । যুদ্ধের পর ঘোড়া টিপতে আঙ্গুল নিশপিশ করতো, এবার যেন আঙ্গুল শান্ত হলো ।
এরপর ৩৫ বছর কিভাবে যে কেটে গেলো , জঙ্গলে জঙ্গলে , বুঝতেই পারিনি । পরে আরও দুটো মাউজার কিনলাম । কিন্তু মানলিকারটা ছিল সেরা । যে জঙ্গলেই যাই আর যাকেই হান্ট করি মানলিকার সঙ্গে থাকলে মনের জোরই আমার আলাদা হতো । কোন জঙ্গলে যাই নি ! কুমায়ুন, নেপালের বারদিয়া, চিতোয়ান, রণথম্বোর, কানহা, সিমলিপাল, পলামু, মুন্নার, কাজিরাঙ্গা কোথাও ছাড়িনি । কত জানোয়ার মেরেছি ইয়ত্তা নেই । একবার তো মনিপুরের কেইবুল লামজাও এর জঙ্গলে অতি দুর্লভ সাঙ্গাই হরিণ পর্যন্ত মেরেছি । নীলগিরিতে পেল্লাই কিং কোবরা, মানে নেটিভরা যাকে শঙ্খচূড় বলে, তাও । তবে আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল হাতি শিকার । বিশেষ করে টাস্কার বুল হাতির খবর যদি কোথাও পেতাম তো লাফিয়ে উঠতাম । হাতিদের মতো বুদ্ধিমান আর অনুভূতিশীল জানোয়ার আর নেই । ওদের ফাঁদে ফেলা চাট্টিখানি কথা নয় । ওদের চেস করে ধরাটাই একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ । একবার তো দলমা রেঞ্জে একটা বেয়াড়া মালজুরিয়ান (স্ত্রী সঙ্গী ছাড়া গুন্ডা হাতি ) আমাকে টানা ৯ দিন জঙ্গলে জঙ্গলে ছুটিয়েছিলো । তবে হাতি শিকারে আমার পছন্দের জায়গা ছিল আসামের জঙ্গল । ধানসিঁড়ি নদীর তীর বরাবর বরপেটা আর গোলাবাড়ির গভীর জঙ্গলে অনেকবার হাতি শিকার করেছি । তখনও কাজিরাঙায় শিকারে এখনকার মতো নিষেধ ছিল না ।সঙ্কোশ নদীর উজান বরাবর এখনো বহু দুর্ভেদ্য জঙ্গল আছে । এখনো ব্রহ্মপুত্র নদের এমন শাখানদী আছেই যার আশপাশের জঙ্গলে মানুষের পা পড়েনি । সেখানের ঘন বনে বড় বড় টাস্কার দলবল নিয়ে দাপিয়ে ফেরে । লেপার্ড ক্যাট বিশাল ফার্ন ঝোলা গাছের ডালে আচমকা ঝিলিক দিয়ে যায় । রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বুনো মোষ, আর গন্ডারে এমন গিজ গিজ করছে কাজিরাঙার ঘাসের জমি যে এক মিনিটের জন্য কুনকি হাতির পিঠ থেকে মাহুত সেখানে আপনাকে নামিয়ে দিলে হাড়মজ্জা ভয়ে হীম হয়ে যাবে ।
শিকার করে বেশ আনন্দে দিন কাটছিলো । মাসখানেক আগের কথা ।হঠাৎ একদিন ব্রিটিশ অধীন কোচ রাজার একটা চিঠি এলো বাড়িতে ।জরুরি তলব । যেতেই হবে । যথাসময়ে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে চালসা পৌঁছলাম । সেখানে রাজা বাহাদুরের লোক আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো । তার মারফত জানলাম, এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে তাঁর জন্মদিনে একটা প্রমান মাপের হাতির দাঁত উপহার দিতে চান মহারাজ । ডুয়ার্সের জঙ্গলে টাস্কার মেরে সেই উপহার সংগ্রহ করতে হবে আমাকে । অবশ্যি উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ।হাতে বেশি সময়ও নেই । লোক লস্কর আর শিকারের সব ব্যবস্থা আগে থেকে করেই রাখা ছিল । আমিও কাজে লেগে গেলাম । হাতি শিকার আমি লোকজন নিয়ে করি না । তাই মাত্র দুজনকে রেখে বাকিদের ফেরত পাঠিয়ে দিলাম । একজন আমার গাইড অন্যজন পোর্টার । এলাকাটা আমার কাছে ছিল নতুন তাই এই ব্যবস্থা । একটা ঘোড়ায় মালপত্র, রসদ আর টেন্ট চাপিয়ে সেদিন দুপুরেই রওনা হয়ে গেলাম রামসাইয়ের উদ্দেশে । সন্ধেয় পৌঁছে গেলাম । বছর ছয়েক আগে মূর্তি নদীর ধারে গরুমারা ফরেস্ট এসেছিলাম অন্য কাজে । আমার চেনা ওই অবধিই । এখনো দেখলাম একই রয়ে গেছে এলাকাটা । চারদিকে ঘন জঙ্গল । লোকজনের বসবাস খুব কম । এসব এলাকায় কালাজ্বরের দাপট খুব বেশি । টিকা যদিও বা বেরিয়েছে তবে এই সব দুর্গম এলাকায় সবখানে তা পৌঁছয়নি এখনো । রামসাই ছাড়িয়ে উত্তরের দিকে গরুমারা আর টেন্ডুর জঙ্গল । সেখানে জঙ্গলের ধারে এক জায়গায় একটা রাভা বস্তিতে প্রথম দিনের আস্তানা গাড়লাম আমরা । রাতে বনবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম হাতির পাল মিলবে চাপড়ামারি ছাড়িয়ে কুমাইয়ের জঙ্গলের দিকে । রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে টেন্টে বসে এলাকার ম্যাপ দেখছি আর পরিকল্পনা আঁটছি । সেই সময় রাভা বস্তির মোড়ল এলো । সে বললো কুমাই-দলগাওঁ এর জঙ্গল এলাকা মোটেও সুবিধের নয় । জংলী জানোয়ার ছাড়াও অন্যরকম ভয় আছে । হাতির দলের পিছু নিতে গিয়ে আমরা যেন মূর্তির তীর ছেড়ে পূর্ব দিকে বেশি দূর না যাই । বিশেষ করে পূর্বে জলঢাকা নদী যেন কোনোভাবে না পেরোই ।যদি যেতেই হয়, মোড়ল সঙ্গে লোক দিয়ে দেবে তার পরামর্শ নিয়ে যেন যাই । কারন জিজ্ঞাসা করতে মোড়ল এমন সব বিদঘুটে গাঁজাখুরি গল্প বললো যা শুনলে আপনাদের চোখ কপালে উঠবে । ম্যাপ দেখে বুঝলাম পূর্ব দিকটা ভুটান ।ওদিকটা সাজকেতের জঙ্গল আর পাহাড়ের পর পাহাড় ।একেবারে দুর্ভেদ্য দুর্গম। আমি আগেও ওই এলাকার নাম শুনেছি । মোড়লের কথায় খুব একটা পাত্তা দিয়ে পরের দিনের প্ল্যান ভেঁজে নিলাম । পরদিন মোড়লের লোককে সঙ্গে নিয়ে আমরা তিনজন বেরিয়ে পড়লাম হাতির সন্ধানে । এরপর পরপর রাত চার দিন এ জঙ্গল ও জঙ্গল ঘুরে বেড়ালাম। হাতির দলের ঘুরে বেড়াবার তাজা চিহ্নও মিলল কিছু কিছু । কিন্তু একটা হাতির দেখা পেলাম না । পঞ্চম দিন দুপুরের কথা । খয়েরবাড়ি এলাকায় জলঢাকার তীরে একটা ফাঁকা জায়গায় ক্যাম্প করেছি । খবর এলো হিলার জঙ্গলে গতকাল রাতে ঘুরে বেরিয়েছে হাতির পাল । সেই পালে গোটা তিনেক বড় দাঁতালও আছে । সঙ্গে সঙ্গে তাঁবু তুলে ছুটলাম আমরা । নদীর উজান বরাবর উত্তরের দিকে চললাম চারদিকে সতর্ক চোখ রেখে । সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো হিলা পৌঁছতে । তিন দিন দু’রাত সেখানে চুপিসারে ঘাঁটি গেড়ে রইলাম । কোথায় হাতি !! অথচ খবর কিন্তু ভুল ছিল না । এখানে এসে নদীর ধারে হাতির পাল চরে বেড়াবার চিহ্ন স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি আমরা । তবে কি আগেভাগে হাতিগুলো আমাদের আসার খবর টের পেয়ে যাচ্ছে? অসম্ভব নয় । ভীষণ তীক্ষ্ণ ঘ্রাণশক্তি ওদের । বুদ্ধিও ততটাই ক্ষুরধার । আমাদের আরো সাবধান হতে হবে । ঠিক করলাম এবার একাই ধাওয়া করবো হাতির দলের পিছনে । বেশি লোকজন হলে ধরা পড়ার বেশি সম্ভাবনা । পত্রপাঠ সবাইকে রাভা বস্তিতে ফিরিয়ে দিলাম । শুধু মোড়লের লোক সঙ্গ ছাড়তে চাইলো না । ওকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিমরাজি করলাম । যাবার সময় সে আমাকে পই পই করে বলে গেলো, আমি যেন কোনোভাবেই একলা সাজকেতের জঙ্গলে না ঢুকি । বর্ষা বিদায় নিয়েছে, শীত আসছে ।আবহাওয়া পরিষ্কার, তবে নদীতে এখনো বেশ জল রয়েছে । আরো দু’দিন ওখানেই নদীর তীরের দিকে চোখ রেখে গাছের ডাল পাতায় ছাওয়া ক্যাম্পে ঘাপটি মেরে পড়ে রইলাম । দলে দলে গাউর, সম্বর, এমনকি রাতে চিতাবাঘও আসে যায়, শুধু হাতিরই দেখা নেই । এবার আমার ধৈর্য জবাব দিতে শুরু করল । এতো বছর শিকার করছি এভাবে নাকাল কখনো হইনি । জঙ্গলে রাত জাগার অভ্যেস আমার দীর্ঘদিনের । কিন্তু এখানে পরপর পাঁচ রাত আমি এক ফোঁটা ঘুমাইনি । ক্লান্তিতে বুঁজে আসছিলো আমার দু’চোখ । হাতির পালের দেখা না পেয়ে ক’দিন ধরে আমার জেদ ক্রমেই বাড়ছিল । ষষ্ঠদিনের সকালেও যখন হাতির পালের টিকি দেখা গেলো না তখন আমার মাথায় খুন চেপে গেলো । মনে হলো এবার এর একটা এসপার ওসপার হওয়ার দরকার । হিলা থেকে টেন্ট তুলে ফেললাম আমি । নদীকে ডানদিকে রেখে একাই পায়ে হাঁটা দিলাম উত্তরের দিকে । সন্ধ্যের দিকে একটা জায়গায় নদীর ধারে জঙ্গলটা একটু পাতলা হলো । বনের ভিতরে একটা মরা গাছের গুঁড়িতে বসে জিরোচ্ছিলাম, ঐভাবেই ঘুমিয়ে পড়লাম । যখন ঘুম ভাঙলো দেখি রাত হয়ে গিয়েছে ।
সে রাতে টেন্ট আর টাঙ্গাব না ঠিক করলাম । কাছেই একটা বড় গাছের তলায় আগুন জ্বালিয়ে ম্যাপ নিয়ে বসলাম । যতদূর এসেছি, ম্যাপ বলছে হিসেবে আমার এখন পারেনের জঙ্গলের কাছাকাছি থাকার কথা । কিছুক্ষন ঘুমিয়ে শরীরটা বেশ তাজা লাগছিলো । সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার ছিল, তাই দিয়ে ডিনার সেরে নিলাম । যেখানটা বসে ছিলাম সেটাই জঙ্গলের শেষ প্রান্ত । তারপরেই অনেকটা ফাঁকা জায়গা । সেখানে কুলকুল করে বইছে জলঢাকা নদী । নদীর দু’পাশে অনেকটা এলাকা জুড়ে নুড়ি, পাথর আর বালির চর । অনেকটা দূরে দিগন্তে নীল অরণ্য আর পাহাড়ের সারি। পাহাড়গুলোর মাথায় ভাসছে পুঞ্জ পুঞ্জ সাদা মেঘ । শুক্লপক্ষের চাঁদ ভাসছে আকাশে ।জ্যোৎস্নায় ম’ ম’ গোটা তল্লাট। চাঁদের আলোয় চিক চিক করছে জলঢাকার জল । রোমান্টিকতা আমার কোনো কালেই আসে না । তবু ওই দৃশ্যের দিকে হাঁ করে চেয়েছিলাম আমি । আমার আস্তানা থেকে আংশিক দেখা যাচ্ছে নদীর নির্জন উপত্যকাটাকে । বাকিটা আড়াল হচ্ছে গাছপালা, আর ঝোপ ঝাড়ে । ক্রমে রাত গভীর হলো ।
চাঁদ আরো বড় হয়ে উঠে এলো খোলা এলাকাটার মাথার উপর । নদী, দূরের বনভূমি উপত্যকা সবকিছু অদ্ভুত নিশ্চুপ ।শুধু জেগে উঠলো সেই জঙ্গল যার এক প্রান্তে আমি বসে আছি । দূরে জ্যোৎস্না ধোয়া ওই উপত্যকার দিকে চেয়ে বসে আছি আর জঙ্গলের রাতের সংগীত শুনছি । মনের সব অশান্তি, দুশ্চিন্তা যেন দূর হয়ে গেছে । আমি তন্ময় হয়ে আছি । আমার সামনে আগুনটা কখন নিবে গিয়েছে খেয়ালই করিনি ।কত রাত হবে জানি না , হঠাৎ নদীর দিক থেকে একটা হালকা শব্দ ভেসে এসে আমার সম্বিৎ ফেরালো । কিছুক্ষন সব চুপচাপ ।চমকে উঠলাম আমি । ঠিক শুনছি তো । ভীষণ চেনা শব্দ । ভারী আর খুব মৃদু ।অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলাম নদীর ওপারে দূরের বনভূমি থেকে বেরিয়ে আসছে একদল হাতি । ওরা নদীর দিকে জল খেতে আসছে । এক মুহূর্তে শিকারী সত্তা জেগে উঠলো । কাঁধে হাত দিতেই ঠান্ডা ছোঁয়া পেলাম মানলিকারটার । আরো কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলো । তাড়াতাড়ি নিবু নিবু আগুনটা পুরো নিবিয়ে দিয়ে মাটিচাপা দিয়ে দিলাম । হাতিগুলো যেন কোনো মতে ধোঁয়ার গন্ধ না পায়। মনে মনে বললাম, “অবশেষে !!—-এস বাছারা এস —আরো এগিয়ে এস দেখি ।” হাতিগুলো আরো কিছুটা এগিয়ে এসে নদীর ধারে এসে জড়ো হয়ে দাঁড়ালো । আমি পরিষ্কার দেখলাম ওদের একেবারে সামনের সারিতে মাথা দোলাচ্ছে তিনটে পরিণত বয়সের বিশাল টাস্কার ।চাঁদের আলোয় ঝলসে উঠছে ওদের সাদা দাঁতগুলো । এবার আমিও উঠে পড়লাম । কাঁধের রাইফেলটা বাগিয়ে কখনো বুকে হেঁটে কখনো হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে শুরু করলাম সামনের একেবারে ফাঁকা জায়গাটার দিকে । ওখানে কতগুলো কোমর সমান ঘাসের ঝাড়ের আড়াল আছে দেখতে পাচ্ছি । ওখানে কোনোভাবে পৌঁছতে হবে । ওখান থেকেই সাফ দেখা যাবে ওদের । কাছে এগিয়েও যাওয়া যাবে অনেকটা । এখান থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না স্পষ্ট । বুকে হাঁটতে হাঁটতে শুনতে পেলাম হাতিগুলো হঠাৎ চুপ করে গিয়েছে । আমি নিঃশাস চেপে মাটির সঙ্গে সেঁটে রইলাম কিছুক্ষন । কি রে বাবা বুঝে গেলো নাকি ! আরো কিছুক্ষন কেটে গেলে আমি আস্তে আস্তে মাথা উঁচু করে দেখতে চেষ্টা করলাম । এবার যা দেখলাম, তাতে আমার সব নড়া চড়া বন্ধ হয়ে গেলো । অবাক হয়ে দেখলাম দূরের পাহাড়গুলোর উপর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা রঙের কি সব যেন ভেসে আসছে আকাশে । আরো ভালো করে দেখলাম, না ভেসে তো নয় উড়ে আসছে ওগুলো । উপুড় হয়ে শুয়ে ভালো বোঝা যাচ্ছিলো না । তাছাড়া সামনে কয়েকটা ঝোপ এখনো দৃষ্টিকে আড়াল করে দিচ্ছিলো । খুব সাবধানে নিচু হয়ে হাঁটু গেড়ে বসলাম । দেখি ঝাঁকে ঝাঁকে বড় বড় সাদা রঙের পাখি । বালি হাঁস নয় তো ! অনেক সময় চাঁদনী রাতে বালি হাঁসেরা তাদের প্রিয় জলাশয়ে উড়ে আসে বলে জানি আমি । কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই আমার ভুল ভাঙলো । উড়ন্ত জিনিসগুলি দ্রুত কাছে এসে পড়লো ।আশ্চর্য হয়ে আমি দেখলাম, যে কোনো পাখির চেয়ে সেগুলো অনেক বড় মাপের ।
আর যাই হোক কোনোমতেই পাখি নয় ওগুলো । প্রাণীগুলো এবার হাতির দলের মাথার উপর এসে আকাশে গোল হয়ে উড়ছে । সেই ফাঁকে দেখলাম কখন আমি ঘাসের ঝোপটার খুব কাছে এসে পড়েছি । ওখানে পৌঁছতে পারলে আরো ভালো ভাবে আরো কাছ থেকে ব্যাপারটা বোঝা যাবে । তাই হামাগুড়ি দিয়ে নিঃশব্দে ঝোপটার পিছনে গিয়ে লুকোলাম । ঝোপের আড়াল থেকে এবার যা দেখলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে গেলো । একী !! আমি ঠিক দেখছি তো ? প্রাণীগুলো এবার একে একে নেমে আসছে হাতিগুলোর চারপাশে । অবিকল সব মানুষের মতো চেহারা । এতক্ষনে আমি সব স্পষ্ট দেখতে পেলাম । একে একে যারা নেমে আসছে তারা সবাই কম বয়সী মেয়ে । ওদের চোখ মুখগুলো স্পষ্ট দেখতে না পেলেও চেহারাগুলো দেখে বুঝতে পারছিলাম প্রত্যেকেই অপূর্ব সুন্দরী । মাথায় ওদের কালচে সোনালী চুল, লম্বা টানা গলা ।গায়ে সাদা ধপধপে ঝলমলে পোশাক । সেই পোশাকে রং বেরঙের উজ্জ্বল নকশা । প্রত্যেকের পিঠে দুধ সাদা রঙের একজোড়া করে ডানা তিরতির করে কাঁপছে । একবার মনে হলো, আমি স্বপ্ন দেখছি না তো ?তারপরেই নজরে পড়লো পাথরের মূর্তির মতো নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাতির পাল, এতটুকুও নড়ছেনা । নাঃ, হাতিগুলো তো আর স্বপ্ন নয়, ঘোর বাস্তব। দেখতে দেখতে মেয়েগুলি হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে হাতির পালকে ঘিরে ধরলো । কান্ডটা যেখানে হচ্ছে সেই নদীর তীরের এতো কাছে এসে পড়েছিলাম যে মেয়েগুলোর গলার স্বর পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছিলাম আমি । এতো মিষ্টি আর সুরেলা কণ্ঠ যে কারো হতে পারে ভাবা যায় না ।এর পরে যা হলো তাতে আমার আশ্চর্যের আর সীমা রইলো না । দেখি একে অপরের হাত ধরে ওরা গোল হয়ে ঘুরতে শুরু করলো । ওরা খুব মৃদুস্বরে নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টা করছিল। এরপর হঠাৎ ওরা অদ্ভুত একটা মিষ্টি সুরে গান গাইতে আর হাতিগুলোকে ঘিরে ঘুরে ঘুরে নাচতে শুরু করলো । ওদের সেই অপার্থিব মিষ্টি সুরের মূর্ছনা জ্যোৎস্নার আলোয় গোটা উপত্যকা, অরণ্য প্রান্তরকে যেন ভাসিয়ে নিয়ে গেলো । আমি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না । মাথায় কি রোখ চাপলো রাইফেলটা নাচ গানে ব্যস্ত ওই অদ্ভুত সুন্দর প্রাণীগুলোর মাথার উপর দিয়ে হাতির পালের দিকে তাক করলাম । একেবারে সামনে পাশাপাশি দঁড়িয়ে ছিল তিনটে দাঁতাল। ওদেরই নিশানা করে ঘোড়া টিপে দিলাম । পরপর তিনবার । কানের কাছে তিনবার “ক্লিক” “ক্লিক” করে শব্দ হলো । কি আশ্চর্য একবারও ফায়ার হলো না । আমার মানলিকার ফেইল করলো !! এতো বছরের সাথী মানলিকার ফেইল করলো!! আমার রক্তে যেন আগুন ধরে গেলো । ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলাম আমি ।রাইফেলের বেয়নেট উঁচিয়ে উন্মাদের মতো চিৎকার করতে করতে ছুটে গেলাম হাতির পালের দিকে । আমার চিৎকারে হকচকিয়ে গেলো মেয়েগুলো । সঙ্গে সঙ্গে ঝটপট ডানা ঝাপ্টে সাঁই সাঁই শব্দে ওরা উড়ে গেলো আকাশে । কত দূর হবে!! বড় জোর ২০ গজ ছুটেছিলাম । এরই মধ্যে ওরা ছোট হতে হতে চাঁদের সীমানায় জ্যোৎস্নার ঝাপসা আলোয় কোথায় যেন হারিয়ে গেলো । হাতিগুলো তখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো একভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে । নদীর কাছে পৌঁছতেই আমি অনুভব করলাম একটা অপূর্ব মিষ্টি গন্ধ থমকে রয়েছে জায়গাটায় । সেই গন্ধে আমার মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করে উঠলো, ক্রমে আমি আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম । তারপর আর আমার কিছু মনে নেই । জ্ঞ্যান ফিরতে দেখি রাভা বস্তিতে শুয়ে আছি । মোড়ল চিন্তিত মুখে আমার উপর ঝুঁকে রয়েছে । আমি সবকিছু মনে করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুতেই কিছু মনে পড়লো না । আমি আবার জ্ঞ্যান হারালাম ।মনে আছে এরও তিনদিন পর আমি সুস্থ হয়েছিলাম । তখন আমার সব মনে পড়লো । মোড়ল আমাকে চালসা পৌঁছে দিল । রাজা বাহাদুরের লোককে মুখ দেখানোর অবস্থা আমার ছিল না । যা হোক, শারীরিক অসুস্থতার কারন দেখিয়ে আমি বাড়ি ফেরার অনুমতি চাইলাম ওঁদের কাছে । ওঁরা সসম্মানে আমার বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিলেন । এই ঘটনার পর বাড়ি ফিরে আমি ফের অসুস্থ হয়ে পড়লাম । প্রায় রাতেই স্বপ্নে ওই মেয়েদের দেখি আর ওদের গান শুনি । ঘুম ভেঙে যায় । ভয় নয়, কেমন একটা ধিক্কার আসে নিজের উপর । তীব্র অনুশোচনায় মনটা জ্বলেপুড়ে যায় । বারবার ভাবি আজ পর্যন্ত অকারণে শুধু নিজের খেয়াল চিরতার্থ করতে কত প্রাণীকে চিরঘুমে শুইয়ে দিয়েছি আমি । কেন করেছি এমন কাজ । উত্তর পাই না । আজ বুঝেছি, আমি শুধু জঙ্গলের পশুদেরই মেরে বেড়িয়েছি এতদিন| নিজের মনের পশুটাকে মারতে পারিনি ।তাই ঠিক করেছি শিকার আর এ জীবনে নয় ।”গল্পটা সেদিন ঠিক এখানেই শেষ করেছিল ওয়াল্টেয়ার । পরে শুনেছিলাম, এক সাহেব বন্ধুর কাছে নিজের প্রিয় মানলিকার বেচে দিয়ে সূরাতে ফিরে গিয়েছে সে । এই বলে আমার গল্পদাদাও ওয়াল্টেয়ার এর শিকারের গল্পটা সেদিন এখানেই শেষ করেছিলেন । এরপর আমিও আর কোনোদিন তাঁর কাছে শিকারের গল্প শোনার বায়না করি নি ।