আমাদের পাড়ার পুতুল বস্ত্রালয় অনেক দিনের পুরনো দোকান। কতদিনের ঠিক মনে নেই। কবে থেকে দেখছি তাও মনে নেই । কী না পাওয়া যায় এখানে! ছেলে মেয়েদের রকমারি বাহারি পোষাক, শাড়ি, ধুতি, নাইটি, পাজামা, পাঞ্জাবি, অন্তর্বাস, বিছানার চাদর, বালিশের ওয়াড়, মশারি, গামছা, সোয়েটার, গরম চাদর, টুপি মায় রেনকোট, ছাতা। আপদে বিপদে এই দোকানই আমার সহায়।
আপদ বিপদ তো লেগেই থাকে। এই যেমন ছেলের স্কুলে পিটি ক্লাসে কাল সক্কাল বেলাতেই এক জোড়া সাদা মোজা চাই। অথবা কোচিং ক্লাসে ছাতা খান তিনি হারিয়ে এসেছেন, অগত্যা। রাত আটটায় অফিস থেকে ফিরছি, নেমন্তন্ন আছে । কিছু কেনা হয়নি। পুজোর সময় কেউ বাড়িতে এসেছেন, কিছু দিতে ইছে হল। পুতুল বস্ত্রালয় একমাত্র ভরসা।
চারপাশের বহু এলাকা যেমন সোনামুখী, বেগর খাল, মুচিপাড়া, কেঠোপোল অঞ্চলের মানুষের সারা বছরের মোটামুটি সব প্রয়োজন ই মেটায় এই বস্ত্রালয়।। আলো ঝলমলানো শপিং মলের যুগেও রীতিমত সার্ভিস দেয়। সবসময় জমজামাট। এঁদের প্রত্যেকের , কি মালিক কি কর্মচারি ব্যবহার বড়ই আন্তরিক। এক কথায় এই এলাকার মানুষের আপঞ্জনই বলা যায় এই বস্ত্রালয়।
কাল সন্ধ্যে বেলা গেছিলাম দুধ নিতে । পুতুল বস্ত্রালয়ে র গলিতে । চারিদিক শুনশান। দুধের দোকান টা বাদে সবই প্রায় বন্ধ। পুতুল বস্ত্রালয়ের শাটার টানা।। প্রতি বছর এই সময় দোকানে কত ভিড়! সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে দুধ নিয়ে ফিরব, ছোখ গেল সামনে। সবজি বসেছে। ভাবলাম এই কাজটাও সেরে নি। এগিয়ে গেলাম। ল্যাম্পপোস্টের নীচে আধা আলোয় রাস্তায় বেঞ্চি পেতে, অল্প কিছু কাঁচা আনাজপাতি নিয়ে পুতুল বস্ত্রালয়ের দুই কর্মচারী।
“দোকান তো কবে খুলবে জানিনা। নববর্ষের বাজার ও পুরো মার খেল। তাই আপাতত এখানে”।
ঠিকই ।কী হবে জানিনা । তাই আপাতত রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের তলায় সবজি নিয়ে !!!
~ ল্যাম্পপোস্টের নীচে ~