রাজা একটা জেনারেল বডি মিটিং ডাকলেন, কে হাজির নেই সেখানে! বাঘমামা, শিয়াল পন্ডিত, বনমুরগি, কাজল না লাগানো চোখে হরিন, সব সয়ে নেওয়া সাথী মেরা হাতি, কালো কাক, ফেয়ার আন্ড লাভলি মাখা কাক, ম্যাও ম্যাও বনবিড়াল, আরও কত, রাজার কথা যে শুনতেই হবে তা সে উলঙ্গই হোক কি প্যান্ট শার্ট পরা , না হলে হয় চিবিয়ে খাবে নয় এক গর্তে করে রাখবে! মিটিং শুরু হল, রাজা ও দুপায়ে সবাই কে নমস্কার করে শুরু করলেন যেটা ,সেটা, সেটা একটা লম্বা চওড়া গল্প, এর মধ্যেই অনেকের খিদে পেয়ে গেল আবার, অনেকের মল-মুত্র বিসর্যনের সময় এলেও নড়তে পারছে না, পাছে রাজা অখুশি হন! তাই সব চেপেচুপে , ঢেকেঢুকেই থাক! ‘ দেখুন আমার বয়স হয়েছে, অনেক দিন ধরে এই সাম্রাজ্য চালাচ্ছি, কিন্তু এখন আর ছোটাছুটি খুব একটা করতে পারিনা, পায়ে জোর কমেছে, আর এখনকার বাচ্চা কাচ্চারা সব কি খাচ্ছে কে জানে, পায়ে এত জোরে দৌড়চ্ছে, আমায় কাঁচকলা, দেখিয়ে সামনে থেকে পালাচ্ছে, আমার খাওয়া নেই, তাই কাজে মন নেই, জানিনা এভাবে আর কতদিন বাঁচব, সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে বেশ অনেকদিন হল, কিন্তু ঠিক কেন , বুঝতে পারছিনা…’
পন্ডিত মহাশয় বলে উঠলেন, মহারাজ তোমারে সেলাম, বলেই এক পা উঁচু করে আঙ্গুল গুলো কপালে ঠেকিয়ে, একটা কারণ বলার চেষ্টা করলেন- এমন ‘ মহারাজ, ইদানীং দেখছি আমাদের বনে শালিখ এর বড্ড আনাগোনা, সারাক্ষণ চেচাচ্ছে, কলরব করছে, আমি তো মানুষদের জঙ্গলে মাঝে সাঝে যাই, সেখানে শুনেছি বিজোড় শালিক দেখলে নাকি দিন খারাপ যায়,… ত আপনি বোধহয় তেমন কিছু দেখেছেন, তাই এমন হচ্ছে!!’
-ওসব জোড় বিজোড় অঙ্ক আমি বুঝিনা, কিন্তু এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে তো ব্যবস্থা নিতে হয়! রাজা বললেন।
পিছনে ফিসফিস চলছে, ভালোই হয়েছে, এটা যদি হয় , তাহলে ত উনি আর আমাদের, আমাদের ছেলে মেয়ে বউ বাচ্চা দের খেতে পারবেনা… হুমমমমম…
-কিন্তু , কিভাবে ব্যবস্থা নেবেন!, এদের ধরা ও মুশকিল, গোণাও মুশকিল! সব যেন বড্ড উশৃঙ্খল!!
- এত কথা কিসের, পিছনে, যা বলার আমাকেই বলা হোক…
হরিণেরা ফিসফিস থামিয়ে হটাত কথা ঘোরানোর চেষ্টা করল একটা- ‘মহারাজ আপনার শাসনে আমরা দিব্যি আছি, কিন্তু, খাবার দাবার কেও ভাগ করে খাচ্ছেনা আর, তাই কারো খাওয়া হচ্ছে কারও হচ্ছেনা! আবার দেখুন একটাও টয়লেট তৈরি হয়নি এত বছরে, না আপনাকে দোষ দিচ্ছিনা, কিন্তু লাজ্জা সরম বলে ত একটা ব্যাপার আছে…’
কথা শুনতে শুনতে হটাত একটা প্রতিবাদী পিঁপড়ে রাজার পায়ে কামড় দিল, রনংদেহি মেজাজে… তারা একটা খাবার পেয়েছিল, দল বেঁধে সেটাই খেতে যাচ্ছিল, কিন্তু সেদিকে চোখ না দিয়ে, সেই দল কে ছত্রভঙ্গ করে, পায়ে মাড়িয়ে মিটিং টা সেখানেই বসানো হয়েছে! যেন তারই প্রতিবাদ।
-আহহহহহ…
(যখন পিঁপড়ে গুলোকে মাড়ানো হল, তাদের আর্তনাদ কেউ শুনল না, রাজার আহহহ… টা সবাই শুনল!)
-কিন্তু এই দুঃসময়ের কি করা যায়!
-মানুষের কাঁটাতার ও যাদের আটকাতে পারেনা, তাদের আটকানো কি মুখের কথা! পন্ডিত বলল।
- যাও নোটিশ লাগিয়ে দাও গাছে গাছে কোনো শালিক বিজোড়ে বসতে পারবেনা, আর বসলেও রাজার সামনে যেন না আসে!!
পিছন থেকে আওয়াজ এল- কিন্তু আমাদের সামনে এলে…?
জানো না রাজার ক্ষতি মানে দেশের ক্ষতি, তুমি কে? দেশোদ্রোহী? তখন থেকে অনেক বকে যাচ্ছ, আমি এই করিনি, ওই করিনি, আমার কি হবে, কেন হবে, কি চাই তোমার! এ বন তোদের মত বদমেজাজী নিন্দুক দের জন্য না, ধর ওকে, আজ ওই আমার শিকার! অনেক দিন খাওয়া হয়না…
(রাজার পিকনিক সারা হল। এদের সাথে কেউ থাকেনা কোনোদিন, এরা একাই লড়াই করে, একাই মরে, বনে হোক বাঃ সভ্য সমাজে! )
দূরে গাছে দুটো শালিক বসেছিল, মিটি মিটি হাসছিল।