এক যে ছিলেন গুরুমশাই,

উপনিষদের গল্প,

শিষ্যটি তাঁর আজ্ঞাবহ,

কিন্তু বুদ্ধি অল্প।

যদিও ছিল শীর্ণকায়,

কিন্তু কাজে দড়,

গুরুগৃ্হের সকল কর্মে

খুবই সড়গড়।

শাস্ত্রপাঠে দুর্বল সে

বুঝতে নারে কিছু,

নাছোড়বান্দা গুরু কিন্তু

ছোটেন পিছুপিছু।

সব গুরুরই সদিচ্ছা

শিষ্য হোক জ্ঞানী,

আচার্য্যের তৃপ্তি অসীম

ছাত্র হলে মানী।

অনেক কষ্টে দিলেন তারে

গুরুমশাই শিক্ষা,

জ্ঞানমন্ত্রে ছাত্র এবার

পেলই বুঝি দীক্ষা।

কথায় কথায় কহেন গুরু,

সেই শিষ্য সনে,

নিবাস করেন সর্বেশ্বর

সকল প্রাণীর মনে।

সর্বজীবে, সর্বভূতে

সকল প্রাণের মাঝে,

সার্বভৌম অদ্বিতীয়

পরমেশ্বর বিরাজে।

গুরুদেবের ব্যাখ্যা শুনে

শিষ্য আপ্লুত,

তখন থেকে সর্বজীবেই

কোরত মাথা নত।

একবার কি হল শোনো

মজার কথা অতি,

অজ্ঞানীর সংসারে

এমনতরোই গতি।

একদিন সেই অবোধ যুবা

গিয়েছিল এক বনে,

কাঠের যোগাড় করবে

সে গুরুগেহের সনে।

কাজের শেষে ফিরছে যখন

সহসা কি চিৎকার !

সবাই বুঝি ছুটে পালায়,

ভয়ানক তোলপাড়।

শিষ্য শুধায় এক দ্বিজে,

শোরগোল কি কারণ” !

ব্রাহ্মণটি কহেন,”পালাও,

দাঁড়িয়ে গেলেই মরণ।

আসছে ছুটে মত্ত হাতী,

সামনে যারে পাবে,

এক নিমেষে দেবে পিষে,

ধূলায় মিশে যাবে।

পালিয়ে চলো আমার সাথে

নচেৎ বিপর্যয়,”

হাসে যুবক-“আপনি যান,

আমি নির্ভয়।

সর্বভুতে আছেন প্রভু

সর্বশক্তিমান,

মোর প্রাণেও তার প্রাণেও,

অনন্ত শ্রী মহান।

ঈশ্বর যবে অদ্বিতীয়,

তবে কিসের ভীতি !

আলিঙ্গন করবো যদি

সামনে আসে হাতি।

হাসেন দ্বিজ-“হয় পাগল

নয়তো মূর্খ বটে,

আর হেথা দাঁড়িয়ে থাকা

নিরাপদ নয় মোটে

ছোটেন তিনি প্রাণের দায়ে,

যুবা নির্বিকার,

যতই মত্ত হোক না হাতী

পরমেশ্বর আধার।

অতএব আর শঙ্কা কিসের,

অপেক্ষা পথিপার্শ্বে,

হাতীর সাথে মোলাকাত

করবে হিয়ার হর্ষে।

কিন্তু হুড়মুড়িয়ে আসল যবে

পাহাড়প্রমাণ হাতি,

মূর্খ শিষ্যে মারল কষে

বিষম জোরে লাথি।

ছিটকে পড়ে অনেক দূর,

ভাঙল হাড়গোড়,

চেতন হারায় বীরপুঙ্গব

চক্ষু ঘনঘোর।

খবর পেয়ে গুরু তারে

নিয়ে আসেন গেহে,

চিকিৎসা সেবার যোগে

ফিরল বল দেহে।

মত্ত হাতী জেনেও কেন

দাঁড়িয়েছিলে পথে !”

শুধান গুরু শিষ্যটিরে

হাত বুলায়ে মাথে।

শিষ্য কহে গুরুদেবে,

আপনারই জ্ঞান,

সবার মাঝেই অধিবাসী

সর্বশক্তিমান।

হাতীর মাঝেও আছেন যিনি

আমার মাঝেও তিনি,

ঈশ্বর এক অদ্বিতীয়

আমরা সবাই জানি।

তবে ঈশ্বরের দ্বারা কেন

হবে আমার ক্ষতি !

এহেন অনুভবেই ছিলেম

সেথায় মহামতি।

আচার্য্যদেব বাক্যহারা,

একেবারেই স্তব্ধ,

এমনতরো শিষ্যলাভে

গুরুমশাই জব্দ।

অবশেষে কহেন হেসে,

অবোদ্ধা ছাত্র,

তোমার সনে গুরুর আছে

একটি প্রশ্ন মাত্র।

যাঁর সাথে পথিমধ্যে

দেখা অকস্মাৎ,

সেই দ্বিজের বাক্যে কি হেতু

করো নি কর্ণপাত !”

তাঁর হৃদেও ঈশ্বর

করেন অধিবাস,

তবে কেন সেই ব্রাহ্মণে

করলে উপহাস।

কোন সত্তা বুদ্ধিমান

বোঝনি অপোগণ্ড,

সেই হেতুই তোমার হলো

এমনতরো দণ্ড।

বুদ্ধিমান আর বুদ্ধিহীনের

শিখতে হবে প্রভেদ,

সেটিই তোমার অজানিত

হায় আমার খেদ।

ঈশ্বর সবার মনেই

এটিও যেমন সত্য,

ঠিক তেমনি দোঁহের মাঝেও

আছে যে দূরত্ব।

জানতে হবে কে বিজ্ঞ,

কোন কথাটি সঠিক,

কিন্তু তুমি নিজেই অজ্ঞ,

তোমায় শতেক ধিক।

আজ থেকে নতুন করে

শাস্ত্রধর্মে শিক্ষা,

জ্ঞান অজ্ঞান প্রভেদ পাঠে

হবে তোমার দীক্ষা।

সাধু এবং শয়তানের

মৌলিকত্ব অনন্য,

কিন্তু তারা আচরণে

সদাই ভিন্ন ভিন্ন।

সাধুজনের পরামর্শেই

চলতে হয় পথে,

নয়ত প্রাণটা যেতেই পারে

শয়তানেরই হাতে।

উপনিষদের গল্পকথাই

শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী,

সাজিয়ে দিলেম ছন্দে ছড়ায়,

প্রভুর আশীষ জিনি’’

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleলুচি জিন্দাবাদ।
Next articleThe Perfect Woman
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments