গরমের ছুটি পরতেই মনটা যেন আনন্দে ভরে গেল। মামা বাড়ি যাব এবার। প্রতি বছর এই সময় আমি আর মা মামাবাড়ি যাই আর মামাবাড়ি মানেই অনেক ভালো ভালো খাবার, মামার সাথে ঘোরা, দিদিমার আদর আর গল্পদাদু। আমার মামাবাড়ি ত্রিপুরার আগারতালা শহরে। কলকাতা থেকে এরোপ্লেনএ করে ঘণ্টা খানেক, সেখান থেকে আর মিনিট ১৫। তা পউছালাম যখন তখন দুপুর। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়েছি, যখন ঘুম ভাঙল পাশের ঘর থেকে গল্প দাদুর কথা শুনতে পেলাম। পাশের ঘরে গিয়ে দেখি গল্প দাদু এসেছে, মামা ও কাজ থেকে ফিরেছে। অমনি আমি আমার মামাত ভাই ও বোন মিলে গল্প দাদুকে ধরলাম।
“দাদু দাদু দাদু।“
দাদু বল্লেন,”কিসের গল্প শুনবি রে আজ।“
দুজনে বলে উঠলাম ভুতের।
গল্প দাদু সম্পর্কে আমার দাদুর চাকরি জীবনের বন্ধু। দুজনে একসাথে স্কুলে পরাতেন। দাদু মারা গেছেন বছর তিন হল। গল্প দাদুর আসল নাম অসিত ঘোষ। দেখতে রোগা, লম্বা ও ফরশা। মুখে ফ্রেঞ্ছ কাট দাড়ি ও মাথায়ে সাদা চুল। নিজের জীবনের অনেক ঘটনার কথা আমাদের বলতেন আর গায়ে কাটা ধরাতেন। আর উনার ছিল বাংলা ভাষার উপর প্রচণ্ড দখল।
আমরা অর্থাৎ আমি, ভাই, বোন আর মামা দাদুর সামনে গোল করে বসলাম, দাদু চায়ে চুমুক দিয়ে শুরু করলেন
“তখন আমি সবে স্কুল এ চাকরি পেয়েছি। কল্যানপুর নামক একটি গ্রামে। তা স্কুল বাড়ি থেকে অনেক দূর তাই কাছেই একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করলাম। আমার সাথে থাকেন অমল বাবু, উনি ওই স্কুলেরি ইতিহাসের মাস্টারমশাই। অমাইক মানুষ, কার সাথে কোন ঝামেলাএ নেই। আমাদের ভালই দিন কাটছিল। সকালে স্কুল এ যাই, সারাদিন কাজ করে বিকেলে ফিরি। বিকেলে কোন কোন দিন গ্রামের ছেলে মেয়দের পড়াই, তারপর অমল বাবুর সাথে গল্প করি, তারপর খেয়ে ঘুম। আবার পরের দিন সাকালে স্কুল।“
এই বলে গল্প দাদু একটু থামলেন। বুঝলাম আর এক কাপ চা না হলে চলবে না। ভাই জিজ্ঞেস করল
“আচ্ছা গল্প দাদু তখন কি তোমার সাথে দাদুর আলাপ হয়েছে?”
উত্তর এ গল্প দাদু বলল “না। এই টা আমার চাকরি জীবনের শুরুর দিকের ঘটনা। তোর দাদুর সাথে পরিচয় এর কিছুকাল পরে।“
গল্পদাদু আবার চায়ে চুমুক দিয়ে শুরু করলেন
“এর মধ্যে হল কি একদিন আমি গ্রাম এর পথে হাঁটছি এমন সময় কে যেন ডাকল, পিছনে ঘুরে দেখি গাছ তলায় এক সাধু বসে আছেন। কাছে গিয়ে প্রনাম করলাম, উনি আমার নামে ধরে বললেন তোমার সামনে খুব বিপদ। কেউ যদি শোনে তার সামনে বিপদ সে অবাক হবেই, আমি ও হলাম, আর ও অবাক হলাম এই ভেবে যে উনি আমার নামে জানলেন কি করে। সেই সাধু আমার দিকে ছেয় বললেন আমি আমার সাধানা বলে তোর নাম জেনেছি, সে কি ভাবে তা তোর না জানলেও হবে যেটা বলছি মন দিয়ে শোন। আগামি কয়েক দিনের মধ্যে তোর খুব বিপদ, কি বিপদ তা বলতে পারব না, কিন্তু যদি এমন সময় আসে যখন আর তুই কোন উপায়ে পাবি না এই মন্ত্র তা তিন বার মুখে আনবি। এই বলে তিনি মন্ত্র তা আমকে বললেন।
এর পর স্কুলে শিতের ছুটি পরল। সেই সময় আবার আমাদের এক শিক্ষকের বিয়ে ঠিক হল। অমল বাবা বাড়িতে জরুরি কাজ থাকার দরুন বাড়ি চলে গেলেন। আমি ও ঠিক করলাম বিয়ের দিনটা থেকে পরের দিন সাকালে বাস ধরে বাড়ি যাব।
বিয়ের দিন দুপুর করে বেরলাম। বিয়ে বাড়ি বেশ দুরে। জঙ্গল পেরিয়ে যেতে হবে। কাজেই বেসি রাত না করা ভাল। পাহারি এলাকা তার উপর এরম জাকিএ শীত পরেছে। যখন পৌছালাম প্রায় বিকেল। বেশ আদর আপ্পায়ন করল তারা। খাওা দাওার বেবস্তাও খুব ভাল। তা খেয় উঠি যখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একজন বললেন সেদিন রাত তা সেখানেই কাটাতে, ততক্ষণে আমার মন বাড়ি আসার জন্নে ছট ফট করছে, আমি তাদের না করে ঠিক করলাম যে রাতের বাস তা ধরে মেস এ যাব আর সকাল হলে বাড়ি। বন্ধু কে বিদায় জানিয়ে মেইন রাস্তার দিকে রওনা হলাম।
পথে এক জঙ্গল পেরিয়ে যেতে হবে। বর ও তাদের বাড়ির লোক অনেক বার যেতে বারন করল কিন্তু তখন আমার তাজা রক্ত, সে বারন শুনলাম না। একটা মশাল জ্বেলে হাঁটা শুরু করলাম। শিতের রাত ঠাণ্ডা বেশ ভালই অনুভব করছিলাম। জঙ্গলে ধুকেছি এমন সময় দমকা হাওয়া এ মশাল টা নিভে গেল। ভয় পাওয়ার ছেলে আমি নই, বরাবর দানপিটে, তাই চাঁদের আলো অনুসরন করে এগোতে লাগলাম। কিছু দূর গিয়ে বুঝলাম পথ হারিএছি। থিক সেই মুহূর্তে দেখি অন্য দিক থেকে দুটো লাল চোখ আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
বিপদ বুঝে দৌড়ে পালাতে গেলাম, কিছু দূর গিয়ে দেখি সেই চোখ দুটো সমানে আমাকে ধাওয়া করছে। হটাত কিছু পায়ে লেগে মাটিতে পরে গেলাম। তখন বেথা বেদনা সব ভুলে গেছি, যেভাবে হক প্রান বাচাতে হবে। থিক তখন এ সেই সাধুর কথা মনে পরে গেল, ওমনি সাধুর দেওয়া সেই মন্ত্র আওরাতে লাগ্লাম। আর থিক তখনই দেখি দুটো সাদা চোখ আমার মাথার উপরে।সেই চোখ দুটো আমকে বলল তাকে সরণ করে। পায়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে তাকে অনুসরন করতে লাগলাম। কতক্ষণ তাকে অনুসরণ করেছি মনে নেই একবার এক পাথরের আঘাতে নিচে ছিটকে পরলাম। মনে হয়ে আজ্ঞান হয়ে গেছিলাম।যখন চোখ খুলল দেখি মেইন রাস্তার ধারে পরে আছি।
কোন রকমে উঠে দারালাম বাস এর অপেক্ষায়ে। অবশেষে বাস এল। তাতে উঠে যখন বসেছি তখন হুশ এল। বুঝলাম এ যাত্রায় বেছে গেছি। মনে মনে সেই সাধুকে প্রনাম করলাম আর ইশ্বার কে ধন্যবাদ জানালাম। বাড়ি এসে দেখা গেল পা ভেঙে গেছে আর কোমরে চোট লেগেছে। প্রায় এক মাস বিছানায় ছিলাম। ঠিক হয়ে অবশ্য আবার স্কুল জইন করি”
এই বলে গল্পদাদু থামলেন। আমাদের মুখে থেকে তখন আর কথা বেরল না। বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছ । মামা বলল কাকা বাবু আজকের দিন টা আমাদের এখানে থেকে যান, একসাথে খিচুরি খাওয়া যাবে। সাথে সাথে আমরাও আবদার করতে লাগলাম, গল্পদাদু রাজি ও হয়ে গেলেন।