“দীপ! দীপ! নিজের নামে টা শুনে যেন স্বপ্নের দুনিয়া থেকে বেরিয়া এল দীপ” ঘুরে দেখল অভি পেছন থেকে ডাকছে। ক্লাস শেষ হয়ে গিয়ে টিফিন এর ঘণ্টা বেজে গেছিল। ক্লাসএর সবাই বেরিয়া গেছিল।

অভি আর দীপ দুজনেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর প্রথম বছরের ছাত্র। দুজনেই মেকানিক্যাল বিভাগ এ পরে। ইঞ্জিনিয়ারিং এ প্রথম বছর এ সব দফতর এর একি পরা হয় তাই তাদের ক্লাস এ সব বিভাগ থেকে ছাত্র ছাত্রি আছে। কলেজ এসেই প্রথম দিনই জানলার কাছে বসে থাকা মেয়েটার প্রতি মন হারিয়ে ছিল দীপ। আস্তে আস্তে কলেজএর দিন কাটতে লাগল কিন্তু দীপ কিছু তেই তার সাথে কথা বলতে পারল না।

অভি আর সাবির হল দীপ এর হোস্টেল এর রুমমেট। অনেক চেষ্টা করেও সে মেয়টার সাথে কথা বলার উপায় পেল না। টিফিন এ বেরিয়ে নোটিস বার্ডে দেখল কলেজ ফ্রেশেরস। দেখে আর আনন্দ ধরল না দীপ এর। ফ্রেশেরস মানেই সে আসবে তাও আবার শাড়ি পরে। ফ্রেশেরস এ নিয়ম ছিল সকলকে কিছু না কিছু করতে হবে। সে থিক করল একটা গান । গানের গলা তার খুব এ ভাল ছিল। ফ্রেশেরস এর দিন গান এর পর সে দাড়িয়ে সেই মেয়েটাকে খুঁজছিল হটাত তাকে পেছন থেকে একটি মেয়ে ডাকল।

আকাশ এর রঙ এর শাড়ি পরা, হাতে লাল নেইল পলিশ র অজানা একটা রঙ এর লিপস্টিক। ঘুরতেই তাকে বলল “বর ভাল গান করিস তো। তারপর তাদের আলাপ হল। যে মেয়েটাকে সে খুঁজছিল সে নয়, কিন্তু ভগবান আসার আগে তার দূত কেই পাঠায়। মেয়েটা তাদের ক্লাস এই পরে, নাম সাইরা। তা যা হোক সেদিন আর তার স্বপ্নের সেই মেয়টার আর দেখা পেল না।

পর দিন আবার কলেজ। সেদিন টিফিন এ সাইরা কে সে জিজ্ঞেশ করল সেই মেয়েটার নামে যে জানলার পাশে বসে। সাইরা একটু রেগে বলল “আমি জানি না”। ঠিক সেই সময় সেই মেয়েটা তার পাশ দিয়ে গেল, তাকে দেখল আর একটু হেসে চলে গেল। দীপ ভাবল আত্র পেছনে গিয়ে নাম জিজ্ঞেশ করে কিন্তু কি যেন তাকে আটকে দিল। তারপর বন্ধুদের প্রচেষ্টা যাতে সে কথা টুকু বলতে পারে কিন্তু দীপ এর সেই একি কথা তাকে দেখলেই নাকি তার নার্ভ ব্রেকডাউন হয়ে যায়ে। অভি একবার রেগে বলল “তোর দাড়া হবে না। কথা বল অন্তত”। কিন্তু শত চেষ্টার পর ও সে কথা বলতে পারল না।

সেমেস্টার পরীক্ষা শুরু হল। ইলেক্ট্রিক্যাল ল্যাব পরীক্ষা, সেদিন বোধয় দীপ এর সব থেকে ভাল দিন, তার পার্টনার হল সেই মেয়েটা। তার সাথে আলাপ ও হল। নাম দিপ্সা। ইলেক্ট্রনিক বিভাগ এ পরে। দীপ তাকে সেদিন সাহায্যও করল। বন্ধুত হল। কিন্তু এবার সমস্যা হল তাকে এই কথা তা বলবে কি করে। বন্ধুরা অনেক পরামর্শ দিল।

ফেসবুক এর যুগে এসব কঠিন নাকি। অভি বলল আগে তুই ভাল বন্ধু হ তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। নাম্বার র ফেসবুক এ কথা হতে লাগল কিন্তু দীপ ঠিক করল দিপ্সাকে একটা গিফট দেবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। গিফট কেনা হল। তার সাথে একটা কার্ডও। কিন্তু দেবে কি করে। ঠিক করে তো কথাই তো বলতে পারে না। বন্ধুরা এবার হাল ছেড়ে দিল। “তুই দেখেই যা, তোর দাড়া আর কিছু হবে না”। দীপ ঠিক করল আর না ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালেন্তিনেস দের দিন দিপ্সা কে বলে দেবে।

অবশেষে সেই দিন এল। দীপ তার পকেট মানি থেকে বাচান ৫০০ টাকার থেকে একটা গোলাপ এর তোরা কিনল। সেদিন ১০০ টাঁকার গোলাপ ২০০ তে বিক্রি হচ্ছল। কিন্তু প্রেম এ পাগল দীপ এর কিছু ই যায় আসে না । সেদিন সে তার সব থেকে ভাল ড্রেস পরে গেল। সিঁড়ি দিয়ে দিপ্সা উঠছিল, দীপ ডাকল “দিপ্সা”।

দিপ্সা ঘুরে তাকাল , দীপ তাকে গোলাপ দিয়ে বলল “ Happy Valentine’s Day”. দিপ্সা ঘুরে তাকে বলল “Same to you”. দিপ্সা ঘুরে আবার উঠ ছিল আবার দীপ ডাকল , দিপ্সা ঘুরে তার কাছে এল ,তাকে বলল “আমি এখানে পরতে এসেছি, আর তুমি ও তাই। এ ছাড়া আমি একজনকে ভালবাসি, তাই তুমি যা ভাবছ তা কোনদিন এ হবে না”। এই বলে একটা হালকা হাসি হেসে সে চলে গেল।

দীপ এর মন ভেঙে গেল, সে তখন এ দৌড়ে কলেজ এর পেছনের গাছ তার নিচে গিয়ে বসল। নিজের উপর তার ঘেন্না হতে লাগল। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। সে পুরনো কথা ভাবতে লাগল। নিঃশব্দতা যেন তাকে গ্রাস করেছে। হটাত কেউ যেন তার কাঁধে হাত রাখল, দীপ ঘুরে দেখল অভি এসে দাড়িয়েছে তার পেছনে। আস্তে আস্তে উঠে দাড়াল দীপ, বন্ধু কে কাছে পেয়ে যেন তার একটু ভাল লাগল। চোখের জল সে আর ধরে রাখতে পারল না। বন্ধুকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলল সে।কিছুক্ষণ পর অভি বলল অনেক রাত হল এবার হোস্টেল  এ চল!

 

~ কলেজ এর প্রেম ~

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleদশমী
Next articleচেরীপদ
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments