আগমনীর কান্না।

এক ঢাকী বৌ এর আর্তি

ঢাকীর বৌ অঝোর ঝরে,

              কাঁদছে মায়ের চরণতলে

স্বামীটি তার ক্ষেতের মজুর,

               পূজো এলেই যায় সে চলে।

সে যে ঢাকীপূজোর সময়

              যায় কোন এক দূর শহরে,

ছোট্ট ছেলেও কাঁসর হাতে

              সঙ্গত তার বাপকে করে।

পূজোর সময় সবাই যখন

               প্রিয়জনের কাছেই ফেরে,

পেটের টানে তারাই তখন

                    ঘরকে ছেড়ে যায় সুদূরে।

একা একা ঘরের মাঝে

             রাতের বেলা অন্ধকারে,

তাই করে হাহাকার,

               ঢাকীর জায়া শূন্য ঘরে।

কোথায় থাকেকি যে খায়,

             ভেবে ভেবেই আকুল হিয়া,

পূজোর সময় তার ঘরেতে

              জ্বলেনা হায় খুশীর দীয়া।

গরীব তারা নিত্য অভাব,

                      নুন আনতে পান্তা ফুরায়,

  একবেলা ভাত, একটা কাপড়

                      জোগাড় করাই বিষম যে দায়।

                      

পূজো এলে খুশির ছোঁয়ায়

                   যখন ভরে সবার প্রাণ,

নতুন পোশাক রে যখন

                   শিশুর দলের কলতান

ঠিক তখনই ঢাকীর ছেলে

                 চীরবসন অঙ্গে রে

শুয়ে থাকে ধুলার মাঝে

                দুঃখী বাপের ঠিক শিয়রে।

বিজয়ার দিন দুয়েক পরে

             যখন ফেরে ছেলে বাপে,

তাদের দেখে ঢাকীর জায়া

                আনন্দেও কান্না চাপে।

ঐশ্বর্যের মহোৎসবে

               কেউ কি তাদের খবর রাখে !

ঢাকি বৌএর মনের কথা

                 তাই আজকে কবি লেখে

মা গো তুমি কিছু বল

          দুঃখী ঢাকী জায়ার সনে,

তোমার কথা শোনার আশায়।

                  উন্মুখ সে মনে মনে।

মা দুর্গার কথা।

ওরে মেয়ে দু: কেন,

           কান্না কেন এত মনে !

তোরাই আমার ভক্ত পরম,

          এই কথাটা কে না জানে !

একবেলা ভাত,একটা কাপড়,

                যে সংসারে টানাটানি

জানবি সেথায় মোর অধিবাস

            লুকিয়ে আছে সুখের খনি।

তোর স্বামীটির ঢাকের রবে

               যায় জুড়িয়ে আমার প্রাণ,

ছোট্ট ছেলের কাঁসর বাদ্য

                কি যে মধুর দুয়ের তান

মোর সামনেই থাকে ওরা,

           চিন্তা কেন করিস বেটী !

মোর প্রসাদে ভরায় পেট

            জানবি সুখেই থাকে দুটি।

মণ্ডপে আমিও থাকি,

                 ভয়টা কিসের তবে বোকা,

যেমন আমার ছেলেমেয়ে

             ওরাও তেমনি আমার খোকা।

                 

পূজো এলে খুশীর ছোঁয়া

            যখন লাগে সবার প্রাণে,

ভাবিস বুঝি তাকায় না কেউ

             একেবারেই তোদের পানে !

ভুল ভাবছিস বোকা মেয়ে,

           চিন্তা করিস অহেতুকই,

কেউ না দেখুক জানবি আমি

       অলক্ষ্যেতেই তাকিয়ে থাকি।

তোর হৃদয়ের সকল কথা

         আমার মনেও ঘোরেফেরে,

তোরা আমার সন্তান সব,

           ভাবনা তবে কিসের ওরে !

ক্ষেত মজুর স্বামী যখন

         ছেলের সাথে ঘরে ফেরে,

ওদের মুখের হাসি দেখে

          কান্না কেন ঝরে পড়ে !

চাওয়া পাওয়ার হিসেব খাতায়

        পাসনি বুঝি মিলটি খুঁজে,

তাইতভাবিস কষ্ট যত

        সহ্য করিস মুখটি বুজে।

                

কিন্তু জানিস তোরাই লি

           এই ধরণীর শ্রেষ্ঠ সুখী,

তোদের মহৎ প্রাণের মাঝেই

           আমার গোটা হৃদয় রাখি।

শারদীয়ার মহোৎসবে

         তোরাই আমার আগমনী,

তোদের হাসি অশ্রু পাশে

         দুর্গা আমি চিরঋণী।

চিন্তা কিছু করিস নে মা

          চলবে ঠিকই তোর সংসার,

হোক না স্বামী মজুর ঢাকী

           সৎ জীবনই পুঁজি যে তার।

ভাত কাপড়ের অভাব তোদের

              হবে না আর দিলেম কথা,

তোদের জন্যে উমার মনে

              জমেই থাকে অনেক ব্যাথা।

তাই আছি তোদের পাশে

           ভাবিসনি রে তুই আছিস একা,

মনের মাঝে খুঁজলে মোরে

             ঠিকই পাবি আমার দেখা।

———————————————

               স্বপন চক্রবর্তী।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleঅলৌকিক না লৌকিক
Next articleযাবার বেলায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments