এপ্রিল বলে – আর ত’ পারিনা–গরম লাগছে ভারী,
বৈশাখ বলে আমি যে এলেম–প্রমাণ দিলেম তারই।
নতুন বছর এসেছে রে ঘুরে–বাংলার পন্জিকা,
আমার পিছনে আছে জৈষ্ঠ্য–দুজনা পরম সখা।
পুড়বি এবার দাবদাহে তুই–তোর রূপে নাকি মুগ্ধ !
মে আর জুন–আগুনের তাপে তারাও হবে রে দগ্ধ।
তবে কালবোশেখীতে কখনও কখনও উত্তাল হবে সৃষ্টি,
যদিও মিত্রটি মোর আরও ভয়ানক–নিম্নচাপেতে দৃষ্টি।
একবার যদি সাগরের ঝড় ছুটে চলে আসে তীরে,
তোদের তখন শিয়রে সমন–উড়ে যাবি ফুৎকারে।
এমন সময় আষাঢ় শ্রাবণ–ভাদ্রও আসে পিছে,
“ওহে বৈশাখ–কি হেতু ওদের ভয় দেখাচ্ছ মিছে !
আমরা এলেই তোদের মুক্তি–আসবে তখন জুলাই,
আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর–আর কোন ভয় নাই।
শ্রীকৃষ্ণ যবে এই ধরাধামে–তখন কিসের ভীতি !
তাঁর সাথে আয় করি আরাধনা বিনায়ক গণপতি।
বরিষণ ধারা এই ধরণীরে করবে যখন শীতল,
আসবে তখন আশ্বিন–সাথে কাশফুল দঙ্গল।
আশ্বিন মানে দুর্গোৎসব–মহা আনন্দমেলা ,
নীল আকাশের বুকে ভেসে চলে শুভ্র মেঘের ভেলা।
তোদেরও তখন অক্টোবর–আশা ও সুখের প্রতীক,
আশ্বিন বলে–সাবাস বন্ধু–এক্কেবারেই ঠিক ।
আসে কার্তিক–শ্যামা আবাহনে দীপাবলী রোশনাই,
নবান্ন সুরে মাতে অঘ্রাণ–ঠিক তার পিছনেই।
বলে তারা–আয়,ঊষ্ণতাকে করি এইক্ষণে জয়,
নভেম্বরও হিমের পরশে এক সুরে গান গায়।
শুভ বড়দিনে ডিসেম্বরকে পৌষের বন্ধন,
বলে–সুখে দুখে কতগুলি দিন ছিলেম অনুক্ষণ।
আগামী বছর আবার মোদের হবে নিশ্চয় দেখা,
তবে ত’ জানিনা আরো কতদিন পৃথিবীর আয়ু লেখা।
হানাহানি আর হিংসায় হায় যেভাবে মেতেছে বিশ্ব,
তার সাথে আছে মারণ জীবাণু–হবে কি পৃথ্বী নি:স্ব !
চোখের জলেতে ডিসেম্বরের বিদায়টি অবশেষে,
পৌষ আর মাঘ–নতুন বছর আবাহন করে হেসে।
তাদের আননে তখন যেন অনাবিল এক হাসি,
নীলাম্বরের শীতের হাওয়ায় খুশীও যে রাশিরাশি।
সেই হাওয়াতেই হাতে হাত রাখে ফাগুন ফেব্রুয়ারী,
বলে মোরা দুই পরম মিত্র–কেহ নহে কারো অরি।
বসন্তের কোকিল কূজনে সোনালী রোদের আভা,
নীল দিগন্তে বিহগের সারি–কি অপরূপ শোভা।
চুপ কর্ বাপু – সইতেই নারি তোদের আদিখ্যেতা,
লম্বা চওড়া মার্চ সাহেবটি–ধোপদুরস্ত কেতা।
কি করে হায় ‘নেটিভের’ সাথে তোদের যে ওঠাবসা,
বুঝিসনা ওরে. এই আচরণ তোদের সর্বনাশা !
চৈত্র সাথে কখনোই আমি বাঁধবো না গাঁটছড়া !
তার আগে ওই ক্রুশেই আমায় বিদ্ধ করুক ওরা।
রাগে ফুঁসে ওঠে চৈতি হাওয়া–জবর দখলকারী,
আমি হবো তোর পরম মিত্র–বয়েই গিয়েছে ভারী !
বাকীরা সবাই কহে একসুরে – শান্তি আসুক শান্তি,
কলহ আর যত কলরবে দাও এইক্ষণে ক্ষান্তি।
বৈশাখের তপ্ত শ্বাসেই মিলাক অশ্রুবাষ্প,
অগ্নিস্নানে অমরাবতীতে ফুটুক নবীন পুষ্প।
যেমন করে প্রতি জানুয়ারীতে মিলেমিশে থাকি খুশী,
তেমন করেই নয় বৈশাখে আনন্দে সবে ভাসি।
বছরের যত মলিনতা ক্লেদ যাক চলে যাক দূরে,
কালবোশেখের প্রলয় নৃত্যে সব গ্লানি যাক উড়ে।
আড়াল থেকে কেবল হাসে ঐ জীবাণুটি মহামারী,
বলে সে – ভালই, ঘুচলো তোদের ভাবের ঘরেতে আড়ি।
আমিও সতত থাকবো হেথায়–ধরণীতে রসেবসে,
মোর চরম পরশে দেখবি মানুষ কাঁপবে কেমন ত্রাসে।
যতই বলিস আবর্জনা–সব চলে যাক দূরে,
মানব হৃদে বীণা কি কখনো বাজে রে প্রেমের সুরে !
যতদিন রবে ক্লেদাক্ত মনে লোভ ও ঈর্ষা দ্বেষ,
ততদিনই রবে আমার এমন ভয়াল মারণ বেশ।
নির্বোধ সবে বুঝেও বোঝে না–পাপের কলস পূর্ণ,
চারিদিকে তাই হাহাকার রবে মানব সমাজ দীর্ণ।
বোধনের ক্ষণে বিজয়ার সুর, তবু কি চেতনা জাগে !
শুদ্ধ হৃদয়ে কখনো কি কেহ দেবীর আশীষ মাগে !
তাই নববর্ষের সানায়ের সুরে সে নাই সে নাই,
জীর্ণ ক্লান্ত রাত্রির শেষে অমৃত কোথা পাই !
তবুও বরণ করি হে নবীন শুভ চোদ্দশ আঠাশ,
হে রুদ্র,তব ভৈরব গীতে দূর কর যত ত্রাস।
—————————————————————-
স্বপন চক্রবর্তী।