ঝকঝকে রোদ। আর পাঁচটা দিনের মতই শুরু হয়েছিল সকালটা। অফিসের ভীষণ তাড়া কিংবা ব্যাঙ্কে যাওয়ার। কত কাজ, কত ব্যস্ততা যেন কত ছোট বড় আবদার মেটানোর তাগিদে। আবার কেও হয়তো নতুন স্বপ্নের খোঁজে। সব কিছু বুঝে ওঠার আগেই কত স্বপ্ন, কত আশা কখন যেন ইস্পাত আর কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে গেল। শুধু কি এটুকুই? আরও কত গল্প হারিয়ে গেছে, মিশে গেছে লোহা সিমেন্ট বালির দানায় দানায়। সেই নিশ্বাস গুলো কোন উত্তর না পেয়েই স্তব্ধ হয়ে গেছে। তাদের প্রত্যেকটা দামি মুহূর্ত, প্রত্যেকটা মুহূর্তের জীবন-যুদ্ধ, প্রত্যেকটা রক্ত বিন্দুর প্রশ্নের কাছে আজ কোনও উত্তর নেই।
হঠাৎ করেই যেন মাইক্রোফোনের আওয়াজে অফুরন্ত আশাবানী গুলো চাপা পড়ে গেল ভয়ানক আর্তনাদ, হাহাকারে। রঙ বদলানোর খেলায় মেতে ওঠা মানুষেরই আরেক রূপ যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল রক্তের লালে, বালির সাদায়, সিমেন্টের ধূসর রঙে। আজ এই রঙ-বেরঙের সাথে মিশে চোখের জলের জলছবির কাছে যেন আর কিছুই ঝাপসা নেই।
কি জন্য আছি? কোথায় আছি? সত্যিই কি আমার শহর নিরাপদ? নাকি সব কিছুর আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে এমনই কোনও মারণ বস্তু।
সত্যিই কি আমি নিরাপদ? আমার কাছের দূরের মানুষেরা? সত্যিই কি কোনও পার্থিব ক্ষতিপূরণ আমার অপার্থিব সব কিছু ফিরিয়ে দিতে পারে? তিন মাসের বাচ্চাটার কাছে তার বাবার অসম্পূর্ণতা ফিরিয়ে দিতে পারে? আজ এই প্রশ্ন গুলো হয়তো অর্থহীন। এত প্রশ্নের কাছে আজ হয়তো কোনও উত্তর নেই।
কেন আমি নিরাপদ নই? কেন শত শত আশাবানী এই ভাবে ঠকিয়ে দেয়। কেন আমরা এত অসহায়? কেন আমরা রঙের খেলায় তৎপর? যে রঙে কোনও সতেজতা নেই। সুব্যবস্থা-অব্যবস্থার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আজ কীসের এত তৎপরতা? কেন এই প্রশ্নের উত্তর কাল খোঁজা হয়নি? কেন সব এই ভাবে ইতি টানল অ্যাম্বুলেন্স, সেবাসদন, হাহাকারে?
শত শত প্রশ্নের ভিড়ে উত্তর হাতড়াতে হাতড়াতেই হয়তো মিলিয়ে যাবে আর্তনাদ, মলিন হবে রক্তাক্ত পথ, মুছে যাবে সব ‘মারণ সেতু’_র গল্প ধীরে ধীরে মোমবাতির শিখায় জ্বলতে জ্বলতে। পেরিয়ে যাব হয়তো আবার সেই পথ দিয়ে। সব কিছুই যে মিলিয়ে যায় সময়ের গতিতে। শুধু ফুরোবেনা হয়তো সেই স্বপ্ন দেখা চোখ গুলোর জল, অসম্পূর্ণতার আকুতি আর হয়তো মেনে নিয়েই এগোতে হবে – আমি নিরাপদ নই।