গুম্ফা,লামা,অর্কিডে মোড়া ছবির মতো সাজানো পাহাড়ি রাজ্য সিকিমের একেবারে পশ্চিম প্রা্ন্তের ছোট্ট শহর পেলিং।রঙ্গিতের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, কাঞ্চনজঞ্জার গায়ে ঠিকরে পড়া রোদ্দুর এবং অসম্ভব নিস্তবদায় ভরা ভালোবাসার চাদর জড়ানো এই শহর স্বাগত জানায় শুধু ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে নয় অভ্যর্থনা করে হানিমূন কাপলদেরও।
পাহার-জঙ্গলে ঘেরা এই অকৃএিম সাজানো শহর আপনাকে সে-ই ছোট্ট বেলায় শোনা রুপকথার রাজ্যে নিয়ে যাবেই।
সময়টা ফেব্রুয়ারী,সোমবার।রবিবারের রাত্রে ঠান্ডার চাবুক সহ্য করতে করতে কোনমতে পেলিং-এ প্রবেশ।শারীরিক ক্লান্তিটা পেলিং-এর অসম্ভব নিস্তব্ধতায় কোথাও যেন ধাক্কা খাচ্ছিল।
আমরা ছিলাম লোয়ার পেলিং-এ। পরের দিন সকালবেলা,কাঞ্চনজঞ্জার গায়ে চলকে পড়া রোদ্দুরের ছোঁয়ায় ঘুম থেকে ওঠা,রাকেশের অনুপস্হিতিতে ততক্ষণে হোটেলের ছেলেটা চা নিয়ে এসেছে,আর তখন জানালার বাইরে কাঞ্চনজজ্ঞ্জার অপরুপ স্পর্শে ভোরের পেলিংটা যেন ভালোবাসার স্যান্ডউইচ্ । পাখির ডাকে কোথাও যেন নীরবতার চাদরটা ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছে,বুঝতেই পারিনি কখন বেলাটা গড়িয়েছে।হঠাৎ রাকেশের ডাকে আবেশটা ভাঙ্গল।
গরম মোমোতে কামড় দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম পায়ে পায়ে পেলিং শহরটাকে প্রত্যক্ষ করতে।পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা এখানকার প্রকৃতি,মানুষগুলোকে দেখতে দেখতে পথের ক্লান্তি দূর হলো নিমেষে,ততক্ষনে আমরা পৌচেছি আপার পেলিং-এ।
পেলিং শহরের তিনটে ভাগ আপার,মিডল আর লোয়ার। আপার পেলিং থেকে প্রায় পুরো শহরটাকে ভালোমতো দেখতে পাওয়া যায়।পাইন,ফা্র, বাঁশের সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িগুলি পেলিং-কে অন্যভাবে চেনায়। আপার পেলিং-এর হেলিপ্যাড থেকে প্রায় ৩কিমি দুরে পথ গেছে প্রাচীন গুম্ফার সন্ধানে।
স্হানীয় মানুষের কাছ থেকে জানা গেল ১৬৬৭ সালে তৈরি হওয়া এই গুম্ফাটির নাম “সাঙ্গাচোলিং”গুম্ফা। এখনও প্রাচীনত্বের পরশ প্রাচীনের মতোই উজ্জ্বল।বেড়াতে বেড়াতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল বুঝতেই পারিনি। কোনরকমে হোটেলে এসে একটু জিরিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়া রাত্রের পেলিং-কে দেখতে।
তখন সবে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমেছে,আকাশের তারাগুলো রুপসী পেলিং-এর নীল ক্যানভাসে যেন রুপকথার সাঁঝবাতি।ইলেকট্রিকসিটির দপদপিয়ে জ্বলে ওঠা আলোয়ে প্রত্যেক বাড়িঘরে সিকিমি সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট,সঙ্গে রঙ্গিন আলোয় তারা যেন আরও বর্ণময়। কাঞ্চনজজ্ঞার শীতল স্পর্শে পাহাড়ি পথের মাঝে হেঁটে যাওয়ার অনাবিল আনন্দ মনে দাগ কাটে।রাত্রের রেস্তোঁরায় গিয়ে “থুপকা” খেয়ে ডিনার শেষ করা। রাত্রের পেলিং-কে শুভরাত্রি জানিয়ে ঘুমোতে যাওয়া। কাঞ্চনজঞ্জার কোলে চাঁদের আলোয়ে পেলিং তখন প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য।