যেদিন মাগো জন্ম নিলাম আমি তোমার কোলে,
ছোট্ট মোদের সেই পরিবার উঠল হেসে খেলে।
ছিলাম তোমার নয়নমণি, বাবার বুকের ধন,
স্নিগ্ধ মোর সেই হাসিতে জুড়াতাম প্রাণমন।
দুধে আলতা গায়ের রঙে ছিলাম যেন পরী,
আদর করে সবাই দিলে নাম ফুলেশ্বরী।
স্কুলে যখন ভর্তি হলাম,বয়স মোটে ছয়,
শিক্ষাজীবন হল শুরু, একবুক আশাময়।
ধীরে ধীরে হলাম বড়,স্কুলের খেয়া পার,
পড়শীরা সব বলল এসে,বাড়িসনি আর বাড়।
সোমত্ত মেয়ে ঘরে রেখে ডাকিসনি আর ত্রাস।
সময় থাকতে মেয়েরে বাঁধো বিয়ের নাগপাশ।
মনে আছে আজো আমার বাবার চোখে আগুন,
তেজে রাঙা মুখশ্রী আর ক্ষোভে রাগারুণ।
আমার মেয়ে বুঝবো আমি, তোমার কিসের দায়,
বললে তাদের মুখের উপর সপাটে তোমার রায়।
আবার শুরু পথচলার,তোমাদের আশীর্বাদে,
নতুন নতুন স্বপ্ন নিয়ে,নতুন ভোরের সাথে।
সময় খালি এগিয়ে চলে,চায়না পিছু ফিরে।
আমার জীবনও কাটতে থাকে সুখ-দুঃখের ভিড়ে।
মনে আছে আজো সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত।
পথে কোথাও নেইকো কেউ, নিঝুম আঁধার রাত।
টিউশনের শেষে একা ফিরছিলাম ঘরে,
এমন সময় এল আওয়াজ হিংস্র পশুর স্বরে।
কোথা থেকে চারজন এসে উদয় হল হঠাত,
উচ্চস্বরে বলল তারা আজি করব বাজিমাত।
গলার স্বরে চিনলাম তাদের গনেশ রাজা বিজয়,
এলাকার ত্রাস সবাই তারা,শয়তান অতিশয়।
উল্লাসে তারা উঠল মেতে, রক্ষা দিল না মোরে,
ক্ষতবিক্ষত করল আমায় সবাই মিলে ধরে।
ব্যর্থ হল কাকুতিমিনতি,নিভল সকল আশা,
বুঝল না মাগো তারা কেউ এই নীরব চোখের ভাষা।
যেদিন আমার দেহ এল,সাদা কাপড়ে মোড়া,
নিভল মোদের পরিবারের সকল আনন্দধারা,
বাবা হল পাথর মাগো,চোখে নেইকো জল।
তোমার চোখেও দৃষ্টি শূন্য,চেতন হারিয়ে সকল।
পড়শীরা সব দাঁড়িয়ে সেদিনও দেখল তামাশা,
সব দোষ মেয়েটারই ছিল,দুশ্চরিত্রা বেশ্যা।
সমাজের চোখে হায় সদাই শুধু মেয়েদেরই দোষ হয়,
দুষ্কর্ম করেও সদাই রাক্ষসদেরই হয় জয়।
মাগো তুমি ভাল থেকো, ভাল রেখো বাবাকে,
তোমাদেরই ভিড়ে এখনও সে আছে,খুকু বলতে যাকে।
থাকব আমি ততদিনই যতদিন না পাই বিধান,
এমনি করে কত যাবে আর অসহায়াদের প্রাণ?
ভগবানের কাছে বর মাগি আমি আজো অহরহ,
অবসান হোক তোমাদের এই যন্ত্রণা দুঃসহ।
যেদিন ঐ রাক্ষসের দল উচিত শিক্ষা পাবে,
সেদিন আমার শান্তি মাগো, মুক্তি পাব তবে।