সারা মাসের ক্লান্তি আর একঘেয়েমির মধ্যে নিজেকে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দী না করে রেখে পিঠে রুকসাক তুলে বেড়িয়ে পরে কি যে মজা তা কি ভাষায় প্রকাশ করা যায়? তাই ইঁট, কাঠ, কংক্রীটের শহুরে সভ্যতার নাগপাশ কে এড়িয়ে প্রকৃতির শোভা, রূপ, রস, গন্ধ প্রাণ ভরে আস্বাদন করতে যেতে পারেন এমন এক জায়গায় যেখানে আপনি একসাথে পেতে পারেন প্রকৃতি আর স্বয়ং ভগবান এর দর্শন।

শান্ত, নিরিবিলি, রুক্ষ, দূর্গম অথচ মনোরম, অপরূপ নয়নাভিরাম পাহাড়ের গা ধরে বাঁক খেয়ে পাকদন্ডি বেয়ে সুদূরের পানে চলে গেছে মিশকালো পিচ ঢালা রাস্তাটা। পাখ-পাখালির মধুর কলতান ভরিয়ে দেবে মন প্রাণ। নানা নাম না জানা জংলী ফুলের অজানা সুবাসে সহজেই মনের মাধুরী পূর্ণতা লাভ করে। মাঝে মাঝেই পাশের পাহাড় থেকে নেমে আসে বুনো শুয়োর, হায়না অথবা সজারু’র মত কিছু জানোয়ার।

আজ কথা বলছি যে জায়গাটা নিয়ে তা হল পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় ভূমির অন্যতম এক প্রাচীন জনপদ বিহারীনাথ যা অবস্থিত বাঁকুড়া জেলায়, যার সৌন্দর্য্য দক্ষিণের আরাকু ভ্যালি সম। মূলত বিহারীনাথ পাহাড় কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে এই ছোট্ট জনপদ। এই বিহারীনাথ পাহাড় পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ এবং বাঁকুড়া জেলার সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ , যার উচ্চতা ৪৫১মিটার অর্থাৎ ১৪৭৯.৬৫৫৮ ফুট। সহজেই পায়ে হেটে এই পাহাড়ে ওঠা যায়, যদিও পাহাড়ে ওঠার নিদিষ্ট কোনো পথ নেই, তাই সাহায্য নিতে হয় স্থানীয় আদিবাসী গাইডদের।

বিহারীনাথের পরিবেশে জোনাকি পোকার আলোর কারিগরীর কাছে হার মানে আধুনিক এল ই ডি’র আলো। চাঁদনী রাতে মশাল এর আলোয় বিহারীনাথ শিব মন্দির সংলগ্ন এলাকায় মহুয়ার গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে মাদল এর ধ্রি ধ্রিম ধ্রাম তালে আদিবাসী পুরুষ ও রমনীদের নৃত্যের সাথে হয়ে একাত্ম হয়ে পরিপূর্ণতা পাবেই আপনার বিহারীনাথ ভ্রমণ।

লাল মাটি, গরুর গাড়ী — আমরা শহুরে মানুষেরা তো আজ ভুলতেই বসেছি, নিজেদের ধিক্কার দিতেই হবে আধুনিক আর সভ্য ভেবে। আধুনিকতা আমাদের দিয়েছে অনেক কিছুই কিন্তু তার বদলে আমাদের থেকে কেড়ে নিয়েছে অপরূপ সুন্দর এই প্রকৃতিকে। সপ্তাহান্তে একটা কি দুটো রাত আরাম করে এখানে কাটিয়ে দেওয়াই যায়। এর সাথে এখান থেকে দেখে নেওয়া যায় বাঁকুড়া জেলার আর এক অনন্য দ্রষ্টব্য শুশুনিয়া পুরুলিয়া জেলার বড়ন্তি , গড়পঞ্চকোট ইত্যাদি স্থান গুলি ।

 

কীভাবে যাবেন : বিহারিনাথ যাবার সোজা উপায় হলো হাওড়া থেকে সকালে ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস চেপে রানীগঞ্জ নেমে ওখান থেকে বাসে (৩৪ কিলোমিটার) দামোদর নদ পেরিয়ে মেজিয়া, জেমুয়া, সালতোরা পেরিয়ে বিহারীনাথে পৌঁছোন । এ ছাড়া সড়ক পথে (২৩০.৩ কিলোমিটার)কলকাতা থেকে সোজা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দুর্গাপুর বা রানীগঞ্জ হয়েও যাওয়া যায় বিহারীনাথে, সময় লাগে প্রায় সাড়ে চার্ ঘন্টার মত।

 

কোথায় থাকবেন : বিহারীনাথে থাকার জন্য রয়েছে সাধারণ ও উন্নত মানের হোটেল যা সহজেই কলকাতা থেকে অগ্রিম বুক করা যায়.

 

Artist: Dipanbita Das

~ লাল মাটি সবুজ টিলা ~

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleনব্বই এর বিজ্ঞাপন
Next articlePagli – সত্যি বলছি তোর মতন কেউ নেই by Iman Sen
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments