অবশেষে আজ আবার সেই বহু প্রতীক্ষিত ৫ই মে। অর্থাৎ…
একমাথা সাদা ঝাঁকড়া চুল। একমুখ সাদা ঝোপের মতো দাড়ি। কোট-প্যান্ট পরিহিত বুড়োমতো একটা লোক। আজীবন স্রোতের বিপরীতে চলা এক ম্যাড জিনিয়াস। খুবই পরিচিত মুখ। ছবি প্রায় সবাই দেখেছে। কথা শুনেছে। তবে বুঝেছে খুব কমজনই। আজ যাঁর জন্মদিন তিনি একাধারে দার্শনিক। অর্থনীতিবিদ। ঐতিহাসিক। সমাজতত্ত্ববিদ। সাংবাদিক। রাজনৈতিক তত্ত্ববিদ। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ। তিনিই সবকিছুর উৎস। তিনিই সবকিছুর মূলে। তিনিই স্রষ্টা। কার্ল হাইনরিশ মার্ক্স। ১৮১৮ সালে আজকের দিনেই জার্মানির ত্রিয়ের শহরে এক আইনজীবীর ঘরে জন্ম। সারা বিশ্বে প্রচলিত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা রাজনৈতিক ধ্যানধারণা ও এস্ট্যাব্লিশমেন্টের মূলে কুঠারাঘাত করে তার ভিত নাড়িয়ে দেওয়া এক মহামানব। সমস্ত কিছুর ব্লুপ্রিন্ট। যাঁর হাত ধরেই একে একে সব এসেছে। অত্যাচারী জারের শাসনের অবসান ঘটিয়ে পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। হিটলার ও নাৎসি জার্মানির পরাজয় ঘটেছে। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভিয়েতনাম স্বাধীন হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পতন ঘটিয়ে মানুষের জয় হয়েছে। বা সাম্প্রতিক কালে ভারতের একটি রাজ্য করোনা মোকাবিলায় অনন্য নজির স্থাপন করে গোটা বিশ্বের কাছে মডেল বলে বিবেচিত হয়েছে। আরও কত কী যে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আগামীতেও হবে। সবই এই ব্যক্তির হাত ধরে। সবই এই বৃদ্ধ জার্মানের মস্তিষ্কপ্রসূত। মার্ক্স না থাকলে কেউ তৈরি হত না। এঙ্গেলস। লেনিন। স্তালিন। ফিদেল। মাও। কেউ না। ভদ্রলোক ছিলেন ত্রিকালদর্শী। সর্বহারাও আদতে সর্বহারা নয় কারন তার কাছে মার্ক্স আছেন। থাকবেন চিরকাল। জীবনে সব হারিয়ে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়লেও এই একজনকে আঁকড়ে ধরে আবার উঠে দাঁড়ানো যায়। উনি এমন এক চিরস্থায়ী বটবৃক্ষ যার ছায়া এই পচনশীল বুর্জোয়া সমাজের খররৌদ্রেও পথচলতি জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত পথিককে স্বস্তি দেয়। দেখায় মুক্তির পথ। মাথায় উপর মার্ক্স নামক ছাতাটা আছে বলেই লক্ষ লক্ষ খেটে খাওয়া মানুষ আজও অনবরত লড়ে চলেছে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই। নিজেদের ন্যায্য দাবী বুঝে নেওয়ার লড়াই। সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই। মার্ক্সের কেবল জন্ম আছে। মৃত্যু নেই। উনি ও ওঁনার চিন্তাভাবনা আজও বেঁচে আছে আপামর শ্রমিক শ্রেণির হৃদয়ে। দেহে বার্ধক্য এলেও মনে বার্ধক্য আসেনি কোনোদিন। একটা দুর্লভ চিরহরিৎ মন ছিল বটে ভদ্রলোকের। অমৃত নয়। কাজের মধ্য দিয়েই যে অমরত্ব আসে কার্ল মার্ক্স তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। কার্ল হাইনরিশ মার্ক্স। শ্রদ্ধার মানুষ। ভালোবাসার মানুষ। আদর্শের মানুষ। মানুষটা আমায় পথ দেখান। আর আমি সেই পথেই এগিয়ে চলি। আমৃত্যু যেন এই পথেই চলতে পারি এটুকুই চাওয়া। কোনো সস্তার লোভ স্বার্থ বা আপোষ যেন আমাকে পেয়ে বসে পথভ্রষ্ট না করে। লাল সেলাম কিংবদন্তি।
Print Friendly, PDF & Email
Previous articleওরা ভাল নেই
Next articleবীণা
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments