প্রতি প্রভাতেই “সোনার তরী”তে বেড়াত “মানসী” চিত্রা”,
শান্ত তটিনী সাথে সঙ্গিনী “ক্ষণিকা””শ্যামলী””মিত্রা”।
দূরের “বলাকা” ভেসে যেত যেন সোনার আলোক রথে,
“নদী” বক্ষেতে আনন্দে মাতে “প্রভাত সংগীতে”।
“শিশু ভোলানাথ” হৃদয়ের প্রাণ তারে লয়ে প্রতি সাঁঝে,
নৌকাভ্রমণে বেরুত “সেঁজুতি” “চৈতালী হাওয়া” মাঝে।
সাথে সহোদরা “মানসী” “পূরবী” কম যায় তারা কিসে !
“সন্ধ্যা সঙ্গীত” “খেয়া” মাঝে ঐ “প্রবাহিণী” বুঝি হাসে ।
ঘরে বাইরে “দুই বোন”কে স্ফুলিঙ্গ” বলা চলে,
নীর হতে তোলে “পত্রপুট””তিনসঙ্গীনী মিলে।
“কল্পনা” আর “কণিকার” ছিল “গীতিচর্চাই” প্রিয়,
“শ্যামলীকে” বলে প্রিয় বান্ধবী “তপতী”কে সাথে নিও।
অঘ্রহায়ণ “আকাশ–প্রদীপ” আজ হবে “ফাল্গুনী”,
আনন্দ ভরা “গীতিমাল্যে” ওরা চার “প্রহাসিনী”।
ঘরে বসে করে “গল্পস্বল্প” ”নলিনী” এবং “লিপিকা”,
“গানের বহি”তে সহসঙ্গতে “মালিনী”র সাথে “দীপিকা”।
কখনো প্রভাতে কখনো বা সাঁঝে মাঝে মাঝে “বৈকালী”,
চারসখী রত চর্চায় যত “চিত্রবিচিত্র” “গীতালী”।
এমন কতই “কথা” যে “স্মরণে””কথা ও কাহিনী”লেখন,
“ছবি ও গানে” আঁকা আছে মনে করিনু সকলই চয়ন।
তব “জন্মদিনে” “মহুয়া”র বনে অপরূপ বণবাণী,
নৃত্য করেছে “চিত্রাঙ্গদা” “বীথিকা” ও “শ্যামা” রাণী।
“বনফুল” ফোটে মনের গহনে “কড়ি ও কোমল” ছন্দে,
যেন “নবজাতক”এর জন্মক্ষণে মাতে ওরা সব আনন্দে।
এই শ্রাবণের বরিষণ মাঝে “কবিকাহিনী”র অন্ত,
“শেষ লেখা” আর “শেষের কবিতা” তুমি কত প্রাণবন্ত।
জীবনের আলো বুঝি নিভে গেল তমসায় ঢাকা রাত্রি,
তুমিই মোদের ঈশ্বর তাই আমরা “তীর্থযাত্রী”।
আজ বাইশে শ্রাবণে “রোগশয্যা”র অন্তিমক্ষণে কবি,
চলে গেছ তুমি অমৃতলোকে বিলীন “ছড়ার ছবি”।
“চিরকুমার সভা”টি শূন্য – স্তব্ধ “মায়ার খেলা”,
“নৌকাডুবি”তে ভেসে গেছে হায় তোমার সাধের ভেলা।
কোথায় আছ হে রাজর্ষি”তুমি কবি “গুরু” “নটরাজ”,
“কালমৃগয়ায়” চলে গেলে কেন -“যোগাযোগ” নাহি আজ।
বিশ্বকে তব উপঢৌকন অমল “গীতান্জলী”,
সাজায়ে দিয়েছ বসুন্ধরাকে “নৈবেদ্য”র ডালি।
সৃষ্টি করেছ আরেক অমর কাব্য “সন্চয়িতা,”
“অরূপরতন” হে ঈশ্বর, তুমিই ত’ আদি পিতা।
তব “আরোগ্য” কামনাই ছিল সবার হৃদয় জুড়ে,
কিন্তু তোমার “কালের যাত্রা” “মায়ার খেলায়” হেরে।”
“শেষরক্ষা” হল না গো কবি “পরিশেষ” করি রঙ্গ,
“চতুরঙ্গ” সাজটি হে প্রভু ভরা শ্রাবণেই সাঙ্গ।
আজি এ প্রভাতে “ভগ্নহৃদয়” – কে যেন বাজায় “সানাই”,
“বিসর্জনে”র সুরে যেন বলে “তুমি নাই, তুমি নাই”।
তোমারে হারায়ে “রুদ্রচণ্ড” “প্রকৃতির প্রতিশোধ”,
অঝোর ধারার বরিষণে বুঝি সবকিছু “শোধবোধ”।
অচলায়তন” মোর জীবনের সবটুক “খাপছাড়া”,
“জীবন স্মৃতির” “চার অধ্যায়” কেবল ভুলেই ভরা।
“গোড়ায় গলদ” – সবই ছিল বুঝি অমোঘ “কর্মফল”,
“নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ” – কেটে গেছে প্রতি পল।
অবোধ আমি গো তব পদে আজ করিনু “প্রায়শ্চিত্ত”,
“শাপমোচন” কর হে ঠাকুর, কলুষমুক্ত চিত্ত।
মোর ছন্দের “প্রান্তিকে” আসি সাঙ্গ করিনু আজি,
এই “বিচিত্র গল্প” সাজায়ে যতেক “ছিন্নপত্র” রাজি।
বাইশে শ্রাবণে হে “রাজা” তব চরণে দীনের প্রণতি,
তোমার “মুকুট” গ্রহণ করো গো – সিংহাসনেই স্থিতি।