দিন কাল কয়েক দিন থেকে খারাপ ই যাচ্ছে ,তাই সুবোধ দার চা এর দোকানে বসে থাকি কিছু টা সময়।কিছু টা একাকিত্ব কেটে যায় ।আজ ও বসে আছি অনেক খন ধরে, চা তিন কাপ চা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে ।হন্তদন্ত হয়ে একজন ঢুকল ,এসেই আমার পাশের বিপ্লব দা কে সম্বোধন করে বলল ‘জলদি আড়াই কাপ চা অডার দাও ,একটা গল্প আছে ,বেশ রসিয়ে বলা যাবে ।’হন্তদন্ত হয়ে আসা এই একজন কে চিনি আমি ।নাম বটু ।কাজ কাম কিছু করে না ।বাড়ী আমার পাড়া তেই ।২২-২৩ বয়স হবে ,আমার থেকে ছোট এক দেড় বছরের ।সাংঘাতিক ছেলে ,এখন ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে পারেনি ।কারণ? খুব খুব মেধাবী ব্যক্তির জীবনে ব্যর্থতা আসেই , এটাই বটুর ধরনা । আমার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল বটুর সংস্পর্শে আসার , দু-তিন বছর আগে প্রাইভেট টিউশন এর জন্য আমাকে ঠিক করে দিয়েছিল ওর বাবা । আমাকে তুই করেই বলত , খুব সহজে সম্মান পাও যায় না বটু এর কাছ থেকে । স্কূলের স্যার দেড় সাথে কথা বলতে গেলে ও নাকি মাঝে মধ্যেই তুই -তাকারি বেরিয়ে যেত ,আমি তো চুনোপুটি ।প্রথম দিন গিয়েই বুঝেছিলাম বটুর মাথা খালি না , গোবরে ভর্তি ।২ মাসের মতো পড়িয়ে ছিলাম , শেষ দিকটাই নিজেকে মূর্খ মনে হত বটুর সামনে ।একটা ঘটনা বললে হইত ব্যপার টা পরিষ্কার হবে – বটু সময়মতো কোনদিনও পড়তে আসত না , আসত ১৫-২০.মিনিট দেরিতে , এতে নাকি আভিজাত্য বজায় থাকে । আর পড়তে আসলে জামা টা উল্টো করে পড়ত , কারণ এতে নাকি আত্তার সাথে ব্রেইন এর সংযোগ ভাল হয় ।একদিন হটাত ৫,৬ টা অংকের বই নিয়ে হাজীর , এসেই বলল আর্যভট্ট এটা কোন কাজ করেছে ? আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘কেন ,কি হল ‘।বটু – শূন্য আবিষ্কার করে একটা কেলেঙ্কারি করেছে তো ।যতই বড় সংখ্যার সাথে গুণ কর না কেন ওই ঢেমনা শূন্যই পাবি , ১ তাও ভাল লাভ না দিলেও ক্ষতি করে না,আবার কোন সংখ্যার নিচে শূন্য থাকলে তো আর ও সর্বনাশ ।এইরম খাতারনাক জিনিস অংকশাস্ত্রে নিয়ে আসার কি ছিল ? আমার এই সব উল্টোপাল্টা কথা শুনে অভ্যাস আছে , আমি শুধু ভাবলাম বটু ৫,৬টা অংকের বই পেল কোথায় ? আর আর্যভট্ট এর নাম জানলো কোথায় ? আর ‘শাস্ত্র ‘ এর মতো শব্দের ব্যবহার শিখল কোথায় ? ওর যা পড়াশুনায় বিদ্যাবুদ্ধি ।
এতক্ষনে বটুর জুতো জোড়া খেয়াল করলাম । ডান পায়ের জুতো বাঁ পায়ে আর বাঁ পায়ের জুতো ডান পায়ে । তারমানে একটূ আগেই যে রাস্তা দিয়ে এসছে সেই রাস্তায় বিপদ ছিল , বিপদ মানে পাবলিক ক্যালানি, এই ক্যালানি থেকে বাঁচার জন্যই এই কুসংস্কার , বটুর কাছে কুসংস্কার কিন্ত না , এক ফকির গেঁয়োবাবার (পা স্পেশালিস্ট ) মহান বাণী । এখন জুতো গুলো ঠিক করে পরে নিল , বিপদ মুক্ত এখন ।আমি সেই গল্পের অপেক্ষায় আছি যেটা রসিয়ে বলা হবে , চা এখন ও আসেনি , মানে গল্প শুরু হতে দেরি আছে । বটু পেপার পেতে মাটিতে বসল , বেঞ্চে জায়গা আছে । বাঁ হাতের তালু টা মাটিতে রাখলো , এটার কারণ জানি না । চা এসছে, সোয়া এক কাপ , বাকি সোয়া এক কাপ ঠান্ডা করতে দেওয়া হয়েছে । বটু শুরু করল –
‘আজ রাতে একটা সাংঘাতিক স্বপ্ন দেখেছি । আমি হাইড্রোজেন হয়ে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছি , দুটো হাইড্রোজেন কণা ,ডবল পাওয়ার ।একটা অক্সিজেন কণা কাছে আসতেই তার কোমর ধরে জলে পরিণত হয়ে ভাসতে থাকলাম , ক্রমে আমার আকার বড় হল , কেমন যেন মোটু হয়ে গেলাম । ওজন বেশি হয়ে যাওয়ার ফলে আর ভেসে থাকতে পারলাম না , গোঁ গোঁ করে পড়তে থাকলাম আকাশ থেকে , তাও ভাবলাম ভাল জায়গায় পরব কিন্তু পড়লাম গিয়ে ঠ্যাং ভাঙ্গা পটলাদের পুকুরে , এমনিতে পুকুরটাতে মাছ থাকে না তারপর আবার শুধু ছেলেরা স্নান করে । দিন বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের প্রচন্ড ছ্যাকা খেতে থাকলাম আর সহ্য না করতে পেরে ফটাস করে বাষ্পে পরিণত হয়ে গেলাম আর ঘুম টা ও ফটাস করে ভেঙ্গে গেলো ।বিপ্লব দা খুব মন দিয়ে শুনছিল , বলল ‘তা এখনে সাংঘাতিকের কি আছে ?’ এবার বটু একটূ রাগ দেখাল , যে বাঁ হাতটা মাটিতে রাখাছিল সেটা হালকা জোরে মাটিতে আঘাত করল আর বলল ‘সাংঘাতিক না ? দাড়াও’ এখনে একটূ ইন্টারভ্যাল হল , চা শেষ হয়েগেছে চায়ের গ্লাসে জল দিয়ে চায়ের শেষ অংশটুকু ও শেষ করল , এবার ঠান্ডা চা এর পালা , ঠান্ডা সোয়া এক কাপ চা হাতে নিয়ে শুরু করল ‘সাংঘাতিক না ? ওত উপর থেকে যখন পটলাদের পুকুরে পড়ছিলাম তখন আমার অবস্থা টা কল্পনা করো , নাগরদোলা থেকে নিচে নামলে কেমন লাগে ? হুম ? আর আমি তো আর ও উপর থেকে পড়ছিলাম নেহাৎই সাহসী আমি , তুমি হলে তো ‘একটা বিশ্রী হাসি দিল বটু , বিপ্লব দা হজম করল অপমান টা । বটু বলে চলেছে ‘আরও এও ভাবনা কোথায় যদি সোডিয়াম থাকত তাহলে ? আগুন যেত না ।’ বটুর ঠান্ডা চা ও শেষ । আর ও দেরি করবে না ।দেখলাম জুতো আবার উল্টো করে পরল মানে সামনের রাস্তাতেও বিপদ । বিপ্লব দার কাছে ৩ টাকা চেয়ে বিদায় নিল , ৩ টাকা নিল বাদাম কিনবে বলে কিন্ত আমি জানি টাকাটা কোথায় বরাদ্দ হবে সামনের মোড়ে যে ভিখারী টা বসে তার কাছে ২দিন আগে ৩ টাকা ধার নিয়েছিল আজ পেমেন্ট এর দিন । আমি আর একটূ বসে ছিলাম । একটা কথা বার বার মনে হতে লাগলো জল আর সোডিয়াম সংস্পর্শে আসলে যে আগুন লাগে সেটা বটু জানলো কোথায় ।
বটুর সোডিয়াম
Subscribe
Login
0 Comments
Oldest