(১)
প্রতিমা ছোটবেলা থেকেই অনাথ আশ্রমে মানুষ। অনাথ আশ্রমটা কোলকাতা শহর থেকে অনেক অনেক দুরের এক গ্রামে। গ্রামের নাম বাতাসটোলা। এরকম অদ্ভুত নাম নিয়ে অনেক মতপার্থক্য আছে। কেউ কেউ বলে নদীর পাশে গ্রামের ফাঁকা জায়গায় খুব বাতাস খেলে তাই বাতাসখোলা, তাই থেকে মুখে মুখে বাতাসটোলা হয়ে গেছে। কেউ বলে গ্রামের ফাঁকা জায়গায় গ্রামে টোল ছিল কোন এক সময়, সেই থেকে বাতাসটোলা। আবার অন্যমত হল ইংরেজ আমলে টল সাহেবের সাথে গ্রামেরই বাতাসির প্রেমকাহিনী এখনো হওয়ায় ভেসে বেড়ায়। সেই থেকেই নাম বাতাসটোলা।
স্টেশন থেকে ভ্যানো করে প্রায় এক ঘন্টার রাস্তা বাতাসটোলা। বর্ষাকালে গ্রাম অবধি ভ্যানো চলেনা। তখন হেটে হেটেই কাঁদা মাড়িয়ে যেতে হয়। গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে এই সবে বছর দুয়েক হল। এই গ্রামের বেশিরভাগ লোকই চাষ আবাদে যুক্ত। কিছু লোক মাছ ধরে আর বাকিরা চাষের সাথে সাথে পুজোয় শহরে যায় ঢাক বাজাতে।

গ্রামের জমিদারবাবুর মায়ের নামে ১০০ বছর আগে এই অনাথ আশ্রমটি তৈরি হয়েছিল। জমিদারী বহুদিন হল অবসান হয়েছে। জমিদারবাবুর উত্তরোধিকারীরাও অনেকদিন হল গ্রামে থাকেন না। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছেন। জমিদারবাবুর বাড়িটারও ভগ্নদশা অবস্থা। জঙ্গলে ভরে গেছে। সাপ খোপের খুব উপদ্রব। দরজা, জানালা, করিকাঠ বহুদিন আগেই চুরি হয়ে গেছে। এখন সন্ধ্যাবেলায় মদ আর জুয়ার আড্ডা বসে।

অনাথ আশ্রমটা গ্রামের হাটের গা ঘেঁষে। যখন তৈরি হয়েছিল তখন পুরো অঞ্চলটা ফাঁকাই ছিল। দোকান পাট গজাতে গজাতে এখন ঘিঞ্জি হয়ে গেছে। শুধু অনাথ মেয়েদের জন্যই এই আশ্রম। জমিদারী অবসানের পর, আশ্রমটা বেশ কয়েক বছর বন্ধ হয়ে পড়েছিল। গত ৩০ বছর ধরে গ্রাম-কমিটি এই অনাথ আশ্রম চালাচ্ছে। বর্তমান আবাসিক ১৫ জন। সামান্য পড়াশোনার সাথে কিছু হাতের কাজও আশ্রমে শেখানো হয়। আশ্রমটি মুলতঃ সরকারি সাহায্যেই চলে। সরকারের থেকে যে অনুদান পাওয়া যায় তার খুব কম অংশই আশ্রমের আবাসিকদের জন্য খরচ করা হয়। বাকিটা গ্রাম কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়, অবশ্য তার ভাগ প্রশাসনের উপরের সদস্যরাও মাস গেলে পেয়ে থাকেন।

(২)
প্রতিমা শুনেছে ওর ৬ মাস বয়সে ওকে আবর্জনার মধ্যে কুড়িয়ে পেয়েছিল গ্রাম কমিটির এক সদস্য। সেই থেকেই ও এই অনাথ আশ্রমে রয়ে গেছে। এখন প্রতিমার বয়স ২১। ক্লাস এইট অবধি গ্রামের স্কুলেই পড়াশুনা করেছে, সাথে শিখেছে সেলাইয়ের কাজ। তবে প্রতিমার গানের গলা অসাধারন। প্রতিমার গান যেই শোনে সেই বলে কোনরকম প্রশিক্ষণ ছাড়া এত সুন্দর গায়কী সচারচর দেখা যায় না।

প্রতিমাকে সেই অর্থে সুন্দরী বলা চলে না। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যমবর্ন। সামনের একটা দাঁত একটু উঁচু। একমাথা ঘন চুল প্রায় কোমর ছাপিয়ে গেছে। গড়পড়তা বাঙালী মেয়েদের থেকে প্রতিমা অনেকটাই লম্বা। প্রায় ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। সুন্দরী না হলেও লম্বা হওয়ার কারণেই শাড়ি পড়লে অসামান্য লাগে প্রতিমাকে। সবার মাঝে প্রতিমার দিকে নজর চলে যাবেই। আর প্রতিমার হাসিটা খুব সুন্দর। সবাইকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার এক অদ্ভুত সহজাত ক্ষমতা রয়েছে প্রতিমার মধ্যে।

(৩)
রজত ওর মাকে ঘৃণা করে। তীব্র তীব্র ঘৃণা। রজত থাকে বেলঘরিয়ায়। রজতের বাবা বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করতেন। রজতের ৫ বছর বয়সে ওর বাবা মারা যন। সেই থেকে ওরা কাকার কাছেই রয়েছে।
রজতের কাকা প্রোমোটার। মাঝারি মানের।
দশ বছর বয়স থেকে রজতের ঘর আলাদা হয়ে গেছে। ছোট বেলায় আধো ঘুম আধো জাগরণে রজত বুঝত ও ঘুমিয়ে পড়লে কাকা মায়ের পাশে এসে শোয়। মায়ের গায়ে হাত বুলিয়ে আস্তে আস্তে মায়ের নাইটি খুলে ফেলে। রজত ভয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কাঠ হয়ে শুয়ে থাকত। রজতের ঘর আলাদা হওয়ার পর থেকে কাকা আর কোন রাখঢাক রাখেনি। একটু বড় হওয়ার পর রজত লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে কাকা ক্লান্ত থাকলেও মা জোর করে কাকার সাথে রতিক্রিয়ায় মেতে উঠত।
মাধ্যমিকে বেশ ভাল নাম্বার নিয়ে রজত পাশ করে। সেই থেকে হস্টেলই ওর ঘর, ওর জীবন। ডাক্তারিতেও চান্স পেয়ে যায়। কাকার টাকাতেই পড়াশোনার খরচা চলে। মায়ের প্রতি ঘৃণা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাধ্য হয়ে নিজেকে মানুষের মত মানুষ করে তুলতে রজত কাকার টাকাভিক্ষা নিচ্ছে। রজত ঠিক করেছে আর কোনদিন বাড়ি ফিরবে না। ডাক্তার হয়ে গেলে কাকার সব টাকা মুখের ওপর ছুড়ে মারবে।
এন আর এসে ডাক্তারি পড়তে পড়তে রজতের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠেছে বাতাসটোলা গ্রামের অলোক। অলোক হস্টেলে ওর রুমমেট। অলোকের বাবা সাধনবাবু বাতাসটোলা আর আশেপাশের অনেক গ্রাম নিয়ে গঠিত বিধানসভার এম এল এ। গত দশ বছর ধরে। সাধনবাবুর নামে এই অঞ্চলে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়। সবাই ওনাকে সমঝে চলে। ওনার মুখের ওপর কথা বলা তো দূরের কথা কেউ মুখ তুলে তাকানোর সাহসও করে না। আজকের বাতাসটোলা গ্রামের জমিদার সাধনবাবু।

(৪)
গ্রামের আর আশেপাশের সবাই জানে সাধনবাবু মেয়ে দেখলে পাগল হয়ে যান। সবাই জেনেও না বোঝার ভান করে আর নিজের বউ মেয়েকে আড়াল করে। কে আর গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবনে আন্দোলন আনতে চায়! তার মাঝেও সাধনবাবু অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছেন। কেউ ভয়ে মুখ খোলেনি। গত দুবছর ধরে ওনার নজর পড়েছে অনাথ আশ্রমে। প্রতি সন্ধ্যায় উনি সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চলে যান অনাথ আশ্রমে। মদের আসর শেষ হলে প্রতি রাতে আশ্রমের একজন আবাসিককে নিয়ে তোলেন নিজের বাগান বাড়িতে। সবাইকে ভোগ করলেও ওনার সবথেকে ভাল লাগে প্রতিমাকে। প্রতিমার শরীর সাধনবাবুকে যুবক করে তোলে। তাই প্রতিমার পালা বারবার আসে। ঘন্টার পর ঘন্টা উনি প্রতিমাকে নিংড়ে নেন।

(৫)
প্রতিমা এই জীবন মেনে নিয়েছে নিজের অজ্ঞাতেই। জীবন থেকে ওর কোন প্রত্যাশা নেই। বাঁচতে গেলে মানতে হবে এই সহজ সত্য কম বয়সেই প্রতিমা বুঝে নিয়েছে। প্রথম প্রথম বাধা দিলেও এখন চুপ করে থাকে। এই ভেজাল শরীরের খেলা প্রতিমা বুঝে গেছে। প্রতিমা জানে প্রতিবাদ করে কোন লাভ নেই। তার চিৎকার বন্ধ ঘরের বাইরে কোনদিন পৌছাবে না। যার কাছে গিয়ে নালিশ করবে, থানার সেই বড়বাবুও সাধনবাবুর সঙ্গী। প্রতিমার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর আশ্রমের অন্য মেয়েদের ভোগ করে।
মাঝে প্রতিমার দুবার এবরশন হয়েছে। সাধনবাবুই লোক দিয়ে শহরে পাঠিয়ে সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তারপর সোনার গয়না দিয়ে মান ভাঙাতে এসেছেন। প্রতিমা জানে সাধনবাবু শুধু ভোগই করবে কোনদিন আপন হবে না। তবু মাঝে মাঝে অজান্তেই সাধনবাবুকে ভালবেসে ফেলে প্রতিমা।

(৬)
রজত আজ নামকরা গাইনি ডাক্তার। কোলকাতা শহরে রজতের ডাক্তার হিসাবে খুব নাম। বয়স প্রায় ৩০ এর কোঠায়। গায়ের রঙ টকটকে ফর্সা। মাথার চুল এরমধ্যেই পাতলা হয়ে এসেছে অনেকটা। হাল্কা ভুঁড়িও হয়েছে। খুব বেশি লম্বাও না, এই মেরেকেটে ৫ফুট ৫ইঞ্চি।

বাড়ির সাথে রজত সব সম্পর্ক চুকিয়ে এসেছে। মা কান্নাকাটি করে আটকানোর চেষ্টা করেছিল, রজত ফিরেও তাকায়নি। কাকা কোন কথা বলেনি।
সল্টলেকে ফ্ল্যাট কিনে রজত একাই থাকে এখন। হস্টেল সূত্রে অলোকের বাতাসটোলার বাড়িতে রজতের অবাধ যাতায়াত। প্রত্যেক বছর পুজোর সময় যখন হস্টেল বন্ধ থাকত রজত অলোকের সাথে চলে যেত ওদের গ্রামের বাড়িতে। অলোকের মা রজতকে নিজের ছেলের মতোই স্নেহ করেন। সাধনবাবুও রজতকে ছেলের মতোই ভালবাসেন। অলোক বিলেতে এফ আর সি এস পড়তে গিয়ে ওখানেই বিয়ে করে থেকে গেছে। সাধনবাবুর এতে খুব রাগ নিজের ছেলের উপর, ছেলের সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছেন।
সাধনবাবুর অনুরোধ রজত ফেলতে পারেনি। শহরের আরাম ছেড়ে বাতাসটোলা গ্রামীন হাসপাতালে রজত সুপার হিসাবে জয়েন করেছে মাস দুয়েক হল।

(৭)
আজ ২৫শে বৈশাখ। ফেব্রুয়ারি মাসে রজত বাতাসটোলা গ্রামে এসেছিল। কিছুদিন অলোকদের বাড়িতে থাকার পর হাসপাতালের ভাঙা কোয়ার্টারেই রজত শিফ্ট করে গেছে। অলোকের মা, কাকিমা আর বাবা, সাধনবাবু রজতের এই সিদ্ধান্তে রাগ করেছেন, বাড়িতেই থেকে যেতে বলেছেন। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার চেস্টাও করেছেন অলোকের উদাহরণ দিয়ে। রজত তাও মানেনি। বন্ধনে জড়াতে রজতের ভয় হয়। সাধনবাবু যতটা সম্ভব কোয়ার্টারটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়েছেন, বাথরুমে মার্বেল লাগিয়ে, কমোড বসিয়ে, ঘরগুলো রঙ করিয়ে। শোওয়ার ঘরে এসিও লাগিয়ে দিয়েছেন। রজত না করতে পারেনি।
রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষ্যে অনাথ আশ্রমে আজ অনুষ্ঠান। রজত প্রধান অতিথি। এই কদিনে গ্রামের মানুষ রজতকে আপন করে নিয়েছে। অনাথ আশ্রমের মেয়েরাও গাইনি সমস্যার জন্য রজতের কাছে এসেছে চিকিৎসা করাতে। চিকিৎসার সুবাদে রজত এখন গ্রামের লোকের আপন।
রজত সাধনবাবুর সাথেই ওনার গাড়িতে অনাথ আশ্রমে এসেছে। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আধঘন্টা পরে প্রতিমার গান। প্রতিমাকে লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে আজ দেবীর মত লাগছে। খোঁপায় আলগা করে জড়ানো জুঁই ফুলের মালা, যেন দেবী প্রতিমা। প্রতিমা তার অসামান্য গায়কীতে ধরে ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে”।
রজতের পাগলপ্রায় অবস্থা। প্রথম দর্শনেই গভীর প্রেম। রজত বুঝতে পারছে এই মেয়েকে ছাড়া ও বাঁচবে না। দু পায়ের মাঝের অঙ্গ রজতের বাগে নেই। রজতের মনে হচ্ছে এক্ষুনি দৌড়ে গিয়ে প্রতিমাকে জড়িয়ে ধরে। আদরে ভালোবাসায় প্রতিমাকে ভরিয়ে দেয়। এরকম কিন্তু আগে হয়নি। হস্টেলে থাকাকালীন বন্ধুদের সাথে পাশের নিষিদ্ধ পল্লীতে গেছিল একবার। চোখের সামনে বন্ধ ঘরে এক উলঙ্গ মেয়েকে দেখেও নিজেকে জাগাতে পারেনি। মাথায় শুধু ঘুরছিল মা আর কাকার রতিক্রিয়া।
ফেরার পথে রজত কিন্তু কিন্তু করে সাধনবাবুকে নিজের মনের কথা জানায়। সাধনবাবু শুনে গম্ভীর হয়ে যান। বলেন ওই মেয়ের কোন জন্মের ঠিক নেই, কোন বংশের কেউ জানেনা। তুমি আমার ছেলের মত। অলোকের মত ভুল পদক্ষেপ তোমায় করতে দিতে পারিনা। ওকে ভুলে যাওয়াই শ্রেয়। রজত কোন উত্তর দেয় না।

(৮)
রজত আর প্রতিমার আলাপ বেড়েই চলেছে। গ্রামের সবাই ওদের সম্পর্কের কথা জেনে গেছে। রজত নিজের অতীতের সব কথা প্রতিমাকে জানায়। প্রতিমার ডানা মেলতে ভয় হয়। কুণ্ঠা, সংকোচে নিজেকে ছোট করে ফেলে। প্রতিমা ভাবে সাধনবাবুর সম্বন্ধে বললে রজত ওকে অবিশ্বাস করবে, ঘৃণা করবে। ওর একটা কথাও বিশ্বাস করবে না। কিন্তু রজতের অসীম ভালবাসায় নিজেকে ওর কাছে সপে দেয়।
আজ রজত প্রতিমাকে নিজের কোয়ার্টারে নিয়ে এসেছে। প্রতিমাকে আজ মন খুলে দেখবে রজত। ওকে আদরে আদরে ভরিয়ে দেবে। রজতের ভালবাসার কাছে প্রতিমা স্বইচ্ছায় নিজেকে সমর্পন করে। রজতের সাথে শরীরের খেলা প্রতিমা উপভোগ করে। সাধনবাবুর মত জান্তব একপেশে নয়। এ এক অন্য ভালবাসা। আনন্দে সোহাগে প্রতিমার চোখ বুজে আসে। নিজেকে মনে হয় প্রজাপতির মত হাল্কা, যেন ও ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে। রজত তার মধু ঢেলে দেয় প্রতিমার শরীরে।
রজত এখন বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। প্রতিমা উঠে বাথরুমে যাওয়ার পথে চমকে ওঠে। দূরে দাড়িয়ে সাধনবাবুর গাড়ি।
রজতের জীদের কাছে হার মেনে সাধনবাবু ওদের বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হন। সাধনবাবু সস্ত্রীক প্রতিমাকে আশীর্বাদ করেন। সাধনবাবুর গম্ভীর মুখ দেখে প্রতিমার ভয় হয়।

(৯)
আজ রজত আর প্রতিমার বিয়ে। সকাল থেকেই অনাথ আশ্রম ব্যস্ত। সবাই বলছে এত ভাগ্য কার হয়! রাত ১২ টার পর লগ্ন। অনাথ আশ্রমের মেয়েরা সবাই মিলে প্রতিমাকে সাজাচ্ছে। প্রতিমা যেন হওয়ায় উড়ছে। লাল বেনারসী দেখে ওর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। সন্ধ্যা নাগাদ সাধনবাবুর লালবাতি ওয়ালা গাড়ি আশ্রমের গেটের কাছে এসে দাড়ায়। ড্রাইভার প্রতিমাকে নিয়ে আসে বাগান বাড়িতে। সাধনবাবুকে দেখে প্রতিমা ভয় পেয়ে যায়। যেন এক হিংস্র দস্যু অপেক্ষায় আছে। ড্রাইভারের সামনেই সাধনবাবু প্রতিমাকে উলঙ্গ করে দেয়। জান্তব থাবা বসায় প্রতিমার শরীরে। প্রতিমার যৌনাঙ্গ চিরে ফালা ফালা হয়ে যায়। এরপর সাধনবাবুর ইশারায় ড্রাইভারও প্রতিমাকে পিষে দেয়।
রজতের অসীম ভালবাসার প্রতীক্ষায় প্রতিমা সব সহ্য করে। অনাথ আশ্রমে ফেরানোর সময় ড্রাইভার বলে বাবু বলেছেন প্রতিমা শুধু ওনার। উনি যখন খুশি ভোগ করবেন আর মুখ খুললে রজতের লাশ কেউ খুঁজে পাবে না। প্রতিমা ভয়ে থর থর করে কেঁপে ওঠে।

(১০)
আজ কাল রাত্রি। সকালেই রজতের কোয়ার্টারে এসেছে প্রতিমা। অলোকের মা অর্থাৎ সাধনবাবুর স্ত্রী সব গুছিয়ে রেখেছেন। প্রতিমাকে বরণ করে ঘরে তুলেছেন। রাতে সাধনবাবু কোয়ার্টারে এসে রজতকে জরুরী কাজে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন আর বলেন কোন চিন্তা করতে হবে না, উনি নিজে আছেন প্রতিমার পাহারায়। প্রতিমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে আগত সর্বনাশের প্রতীক্ষায়। সারা রাত ধরে সাধনবাবু প্রতিমাকে ধর্ষণ করেন। যাওয়ার আগে বলে যান খুব পাখা গজিয়েছে!, বিয়ে করার সাহস হয় কোথা থেকে! তুই শুধু আমার আর কাউকে তোকে ভোগ করতে দেব না। প্রতিমার চোখের জলও শুকিয়ে গেছে।

(১১)
বৌভাতে বেশি লোক নিমন্ত্রিত নয়। হাতে গোনা গোটা কুড়ি জন। তাতেও সকাল থেকেই রজত ব্যস্ত। কমলা রঙের তাঁতের শাড়ি হাতে তুলে দিয়ে রজত প্রতিমাকে বলে আজ থেকে তোমার ভাত কাপড়ের সব দায়িত্ব আমার। প্রতিমা চুপ করে থাকে। রজত বলে আমি ফিরে এলে যেন দেখতে পাই এই কমলা শাড়ি আর কালো রঙের ব্লাউজ পরে তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছ। ফিরে এসে একসাথে খাব। রজত অলোকের মাকে প্রতিমার কাছে বসিয়ে মোটর বাইক নিয়ে বেরোয় ক্যাটারারকে তাগাদা দিতে। ফেরার পথে রেললাইন পেরোতে গিয়ে থ্রু ট্রেনের ধাক্কায় রজতের বাইক ছিটকে যায় অনেক দূরে। আশেপাশের সবাই ছুটে আসে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সব শেষ।

(১২)
প্রতিমা কমলা শাড়ি আর কালো ব্লাউজ পরে রজতের প্রতীক্ষায়। কোয়ার্টারে খবর আসে সন্ধ্যা পেরিয়ে। প্রতিমা পাথরের মত বসে থাকে।
কোয়ার্টার এখন ফাঁকা। প্রতিমা কোনক্রমে শরীর তুলে ধরে আর চোখের জল মুছে হেটে চলে রজতের খোঁজে। যেন ওকে পৌছাতেই হবে রজতের কাছে। শাড়ির আঁচল খুলে যায়, প্রতিমা হাটতেই থাকে, হাটতেই থাকে। আশেপাশের কিছুই ওকে আর স্পর্শ করে না।
গ্রামের ছেলেরা লরি করে ফিরছিল শহর থেকে দুর্গা ঠাকুরের বায়না দিয়ে। সাধনবাবু এবার অনেক ভোটে জিতেছেন। ওনার ইচ্ছেতেই এই প্রথমবার শহরে তৈরি দুর্গা প্রতিমা আসবে গ্রামে।
ছুটন্ত সেই লরীর ধাক্কায় প্রতিমা ছিটকে পড়ে। সিঁদুরের থেকেও গাঢ় লাল রক্ত ওকে শেষবারের মত ভিজিয়ে দিয়ে কাছে টেনে নেয়। পাশের চায়ের দোকানের বাচ্চা ছেলেটা ঢাকে বোল তোলে ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষন, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’

সন্দীপ কুমার পাল
৩১ অগস্ট ২০২১

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleআরুণি উদ্দালক সংবাদ
Next articleইতিহাসে দুর্লভ
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments