বোশেখ বলে – বড্ড গরম – কেমন করে থাকি!
তাই মাঝে মাঝেই সাঁঝের বেলায় মেঘের নৌকো ডাকি।
একটু যাতে শরীরটাকে ভিজিয়ে নিতে পারি,
এক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া–আরাম লাগে ভারি।
তবে নতুন বছর–সে ত’ আসে আমারই আহ্বানে,
কবিরা তাই মেতে ওঠেন বৈশাখী জয়গানে।
শুনে হেসে জ্যৈষ্ঠ বলে–বোশেখ, পারিস তুই–
গরম কারে বলে তোর ধারণাটাই নেই।
যেমন গরম তেমনি তাপ–প্রাণটি হাঁসফাঁস,
নতুন বছর এলেই ভাবি আমার সর্বনাশ।
আষাঢ় বলে–যাই বল ভাই, এই কথাটি স্পষ্ট,
আমার জন্য তোমার কিন্তু কমে অনেক কষ্ট।
ধুইয়ে দেয় তোমায় আমার শীতল বারিধারা,
আমার সংগে তোমার তাই আছেই গাঁটছড়া।
শ্রাবণ হাসে– বলে আষাঢ়–বলিস নি তুই মন্দ,
তবে তোকে আমি পূর্ণ করি নেই কোনোই সন্দ।
নদীনালায় জল টলমল–আমারই হাতযশ,
যাই বলিস–তোরা কিন্তু সবাই আমার বশ।
ভাদ্র বলে – শাওন একটু বেড়েই গেলো মাত্রা,
আমার হাত ধরেই কিন্তু শরৎকালের যাত্রা।
সাদা সাদা মেঘের পুঁজি আর কাশফুলের মেলা,
আমি না থাকলে কি আর জমত দুয়ের খেলা!
আশ্বিন ত’ অবাক ভারী – ছি ছি ভাদ্র তুই!
এসব কথা কেমন করে বলতে পারিস ভাই।
তোর জন্যই ঊষ্ণতা আবার আসে ফিরে।
শরতের কি জানিস তুই – থাক্ না চুপ করে।
আমি এলে তবেই আসেন ঁমা বাপের বাড়ী,
আমার সংগে চলবে না রে কোনোই জারিজুরী।
আশ্বিন যা বলেছে – একেবারেই ঠিক ।
নেই কোনোই দ্বিধাদ্বন্দ্ব – আসরে কার্তিক।
তবে ওসব ঝগড়া থাক – চল্ না ফিরে গাঁয়ে,
যেথা নবান্নের সুর বেজেছে ডাইনে এবং বাঁয়ে।
অঘ্রানও সেই সুরেতে মিলিয়ে দিল সুর,
আনন্দেই থাকি সবাই – ঝগড়া থাকুক দূর।
পৌষ খুশী – বেশ বেশ – আর বিবাদ নয়,
শীতল হাওয়ায় আয় রে করি ঊষ্ণতাকে জয়।
মাঘ কিন্তু এক টুকরো জায়গা নাহি ছাড়ে,
বলে পৌষ – আমার সাথে যাস না টক্করে।
আমি আছি বলেই না আছে শীতের ছন্দ,
তোদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আমি – আছে কি কোনো ধন্ধ !
ফাগুন বলে–বেশ বলেছ–এবার তবে শোনো,
শেষে এলেও আমার মনটি সদাই রঙিন জেনো।
রংবাহারে ভরিয়ে দেই – আমি চির নবীন,
আমার পাশে বন্ধু তোমরা একেবারেই দীন।
এমন কথা কেমন করে বলতে পারল ফাগুন !
তার উপরে বাকীরা সব রেগেই বুঝি আগুন।
অবশেষে চৈত্র – শান্তি আসুক শান্তি,
কলহ আর কলরবে দাও এবার ক্ষান্তি।
ফুলে ফুলেই হোক্ না শেষে বর্ষ অবসান,
নববর্ষ–বৈশাখই ফের করুক আহ্বান।
———————————————————-
স্বপন চক্রবর্তী।