ওরে রঙ মেখে সব খেলিস হোলি,
আর আবীরে মেতে দোল,
কালবোশেখের এ মাতন মাঝে
কিসের স্ফুর্তি বল !
ওরে তোরা কেন এত চঞ্চল !
আজ জীবাণুর মারণ গ্রাসে,
কাঁপছে সারা বিশ্ব ত্রাসে,
সেথায় তোদের অট্টরোলে
কেবল হট্টগোল !
ওরে তোরা স্বার্থপরের দল।
ওরে তোরা পূজার ছলে আড়ম্বরের
বাজাস কেন মাদল !
ওরে তোদের পাষাণ হৃদয়
ডাকছে অমঙ্গল।
হায় রে তোদের শুষ্ক কপোলতল ।
তোরা কি এই ধ্বংস হেরি পাস নে মোটে ভয় !
জগৎজুড়ে আজকে যখন ঘনায় কেবল প্রলয়,
যখন এই বসুন্ধরার মারণ যজ্ঞে
তামস গগনতল,
তখন তোদের নেই কোন হেলদোল !
কত বধূর সিঁথির সিঁদুর
হয়েই গেল চির মেদুর,
শূন্য হলো চিরতরে
কত মায়ের কোল,
তবুও তোরা খেলবি হোলি, খেলবি ওরে দোল !
ওরে কিসের খুশী এই প্রভাতে !
মৃত্যু যেথায় নৃত্যে মাতে,
সেথায় কেন জয়ধ্বনি !
কেন রে কলরোল !
অসুন্দরের সঙ্গে তোদের কিসের সখ্য বল !
শঙ্খবেণু যায় না শোনা,
জীবনহারাই বাজায় বীণা,
বজ্রবাহন প্রলয় মাঝে
ভয়ংকরের মুষল,
তবু তোরা করবি রে আজ আরাধনার ছল !
উৎসব আর পূজার মাঝে,
আকাশ পাতাল ফারাক রাজে,
আর তোদের কাছে পূজা কেবল
আনন্দেরই ঢল,
এমন করে বাড়বে কি আর তনুমনের বল !
ওরে মানুষ হবার মন্ত্রটা শেখ,
মান আর হুঁশ হিয়ায় লেখ,
পরস্পরের জন্য তোরা
বাঁধরে প্রাণের দল,
তবেই যাবে টুটে যত ধ্বংস অমঙ্গল।
তবেই নিশার আঁধার শেষে
আসবে ঊষা অরুণ বেশে,
হারা শশী নীলাম্বরে উঠবে আবার হেসে,
ওরে তোরা তখন খেলিস দোল,
ভরবে যখন নবীন আলোয় তোদের গৃহতল।
কিন্তু আজি সে ক্ষণ কোথা !
চারিদিকেই বিয়োগ ব্যাথা,
জগৎ জুড়ে কেবল হেরি
ধ্বংস অনর্গল,
মৃত্যু হেথায় খেলছে বুঝি হোলিই অবিরল।
কৃষ্ণচূড়ায় অভ্ররেখা,
দূর দিগন্তে যায় না দেখা,
রক্তপলাশ খেলে না আজ হোলি।
তোরা আনন্দে তাই মাতবি কোথা বল্ !
ওরে তোরা খেলিস নে আজ দোল।
ওরে তোরা মাতিস নে কেউ রঙের উৎসবে !
এবার না হয় আপন গেহে থাকিস নীরবে,
ওরে তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে,
এই পৃথিবীর স্বজন যাঁরা গেলেন আজি চলে,
ওরে, তাঁদের বিয়োগ ব্যাথা যাস নি রে কেউ ভুলে।
ওরে তোরা খেলিস নে আজ দোল,
কেউ খেলিস নে কাল হোলি,
এখন কেবল নিখিল ব্যাপি চলছে নরবলি,
সেই মারণ যজ্ঞে তোরা আর দিস নে রে ইন্ধন,
ওরে তোদের একতারই মন্ত্রে হবে বিলীন প্রভন্জন,
আজ সাদা কালোর বিষাদ ক্ষণে গভীর আবেদন,
তোরা হোলির রঙে এমন ক্ষণে ডুবাস নি রে মন।