কর্মক্ষেত্র থেকে খোকা সেদিন বাড়ী ফিরে,

মা কে ডেকে স্পষ্ট করে জানায় কড়া সুরে,

তোমার আর ঠাঁই হবে না আমার সংসারে,

বৃদ্ধাশ্রমে যেতেই হবে আসছে রবিবারে।

দিবারাত্র ঝগড়া করো বধূমাতার সাথে,

তোমার জন্য কাক চিলও বসতে নারে ছাতে।

ঝালাপালা হয়ে গেলাম আমরা দুটি বেলা,

সইতে আর পারি নে মা এই বিষম জ্বালা।

বৃদ্ধাশ্রম ছাড়া তাই উপায় নেই অন্য,

তৈরী থেকো রবিবারে স্বপ্ননীড়ের জন্য।

হতবাক মায়ের মুখে জোগায় না কথা,

মনের মাঝেই চেপে রাখেন যতেক দু: ব্যথা।

ছেলে মানুষ করার তরে সহন কতই কষ্ট,

সবই বুঝি পণ্ডশ্রমবুঝতে পারেন স্পষ্ট।

স্বামী যখন শেষশয্যায়কি বা বয়স তাঁর,

তখন থেকেই জীবনযুদ্ধমানেন নি হার।

ছোট্ট খোকা ধীরে ধীরে হল অনেক বড়,

আজকে নামী চিকিৎসকসম্মানেতেও দড়।

মেধার জোরে বৃত্তি লাভসঙ্গে মায়ের লড়াই,

বন্ধুর সেই পথে কেবল চড়াই আর উৎরাই।

সত্যি কি সে মানুষ হলমায়ের মনে ব্যথা,

তবে কি তাঁর এত লড়াইসবই হল বৃথা !

বৌমাটিও চিকিৎসকনয়কো গৃহবধু,

বাড়ী থাকে কতক্ষণ যে ঝগড়া করেন শুধু !

মতান্তরমাঝে মাঝে হতেই সেটা পারে,

এমনতরোই স্বাভাবিক যে কোনো সংসারে !

কিন্তু তার জন্য ঠিকানা তাঁর হবে স্বপ্ননীড় !

যেথায় কেবল চতুর্দিকে দু:খী মুখের ভীড় !

অবশেষে বলেন তিনি-“ঠিক আছে রে খোকা,

কম বয়সে আমি ছিলেম বড্ড বেশী বোকা।

তার মাশুল গুণছি আজিথাকব আমি তৈরী,

হাজার হোক তোরা কেউ নয়কো আমার বৈরী।

অভিযোগ মোর নেই কিছুইতোদের সুখেই সুখ,

তবে মাঝে মাঝে দেখাস আমায় ছোট্ট নাতির মুখ।

রবিবারে সকাল থেকেই মায়ের তাড়াহুড়ো,

কখন আমায় বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাবি রে বুড়ো !”

আদর করে মা খোকারে ডাকেনবুড়োনামে,

সেই বুড়োর হাত ধরেই তাঁর যাত্রা বৃদ্ধাশ্রমে।

অবশেষে খোকার গাড়ি দাঁড়ায় যেথা বাটে,

মা দেখেনবাড়ী একটা সেথায় আছে বটে।

ভাঙাচোরা বাড়ির ভিতর কেমন অন্ধকার,

এই বাড়িতে থাকতে হবেহৃদয় তোলপাড়।

বললে খোকা – “নেমে এসো, বৃদ্ধাশ্রম হেথা,

এখানেই থাকবে তুমিবলছি আমি কথা।

স্বপ্ন নীড় নয় এটা” – মা অবাক ভারী,

তার জন্য কি যায় আসেএসো তাড়াতাড়ি।

বসিয়ে মাকে একটা ঘরে কোথায় গেল খোকা !

অসহায় মায়ের দুচোখ অশ্রুধারায় ঢাকা।

খানিক বাদে ফিরে এসে বললে বুড়ো তাঁকে,

অনেক টাকা চাইছে এরাতোমায় যদি রাখে।

অন্য কোথাও যেতে হবেযাদের দাবী কম,

শহরে কি একটা নাকি এমন বৃদ্ধাশ্রম !”

মাকে নিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে চালায় খোকা গাড়ি,

হঠাৎ যেন সামনে উদয় ঝকঝকে এক বাড়ি।

চারতলায় বিরাট করে লেখা-‘স্বপ্ন নীড়,’

ওরে বুড়োকোথায় রে তোর বুড়ো বুড়ীর ভীড় !

এটাই যদি বৃদ্ধাশ্রম তবে লোকজন সব কোথায় !

এদিকে স্বপ্ন নীড় দেখছি লেখা মাথায়

হাসে বুড়ো – “ তোমার এত প্রশ্ন কেন বাপু !

ওই দেখ ডাকছে মাগো তোমার নাতি পাপু।

দেবযানী বৌমাটিও দাঁড়িয়ে তারই পাশে,

মায়ের মুখের রূপটি দেখে সবাই অট্টহাসে।

হঠাৎ করেই বহু মানুষ পরায় তাঁরে মালা,

করতালির চোটে বুঝি দু কান ঝালাপালা।

এবার তাঁরে জড়িয়ে ধরে মায়ের বুড়োখোকা,

হতভম্ব মা সত্যি বনেই গেলেন বোকা।

তোমার হাতে দিলেম তুলে সুখের ঘরের চাবি,

বৃদ্ধাশ্রম নয়কো এটাতোমার মনের ছবি।

দেবযানী তোমার মেয়েমা তুমি তারও,

তোমায় ছেড়ে কেমনে সে থাকবে বলতে পারো ! “

কটা দিন তোমায় নিয়ে করেছিলেম মজা,

কষ্ট দেবার জন্য মাগো দাও আমাদের সাজা।

কেমন করে এহেন পাপের করবো প্রায়শ্চিত্ত,

তোমায় ছাড়া বুড়োখোকার আছে কি অস্তিত্ব ! “

মায়ের মুখের ভাষা বুঝি হারায় নয়নজলে,

একদিকে তাঁর বধূমাতাঅন্যপাশে ছেলে।

অবশেষে বলেন মা – “ আমার যতেক দোষ,

মনের মাঝে তাইতএখন ভীষণ আফসোস।

এমন ভাবে তোদের কাছে বনেই গেলেম বোকা ,

তোকেও কিনা শেষে আমি ভুল বুঝলেম খোকা !”

স্বপ্ন নীড়ে দিলেন পাঅবাক তনুমনে,

তোমার আশীষ জড়িয়ে মাগো ঘরের প্রতি কোণে,

এটাই তোমার নিজের বাড়িমোদের দিও স্থান,

তোমার স্নেহের ধারায় যাতে করতে পারি স্নান।

ভাবছ কি মা তখন থেকে !“- দেবযানীর কথায়,

ফিরে আসে হুঁশটি মায়েরহাতটি বধূর মাথায়।

ভাবছি এসব সত্যি নাকি স্বপ্ন নিল পিছু,

ভেবে ভেবে কূলকিনারা পাই না আমি কিছু।

রূপকথার গল্প যেন বলছে আমায় ডেকে,

কল্পনার আল্পনা এক দিলেম আমি এঁকে।

তোরা আমায় দিলি ওরে নতুন দিনের স্বাদ,

কেমন করে করবো আমি তোদের আশীর্বাদ !

তোদের সবে বাসব আমি কেমন করে ভালো !

সবার ঘর হয় না কেন এমনতরো আলো !”

সত্যি যদি থাকত সবার এমন ছেলেমেয়ে,

বাবা মায়ের করতো সেবা প্রাণের পরশ দিয়ে,

তাহলে কি বৃদ্ধাশ্রমের হতোই প্রয়োজন !

ভরতো আলোয় সবার ঘরের দালান থেকে আঙন।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleরঙ
Next articleকাকের ধৈর্য্যচ্যুতি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments