অমর কট না উমের কট–নামে কি বা যায় আসে,
শহরটি জেনো ভারতের নহে–পাকিস্তানের বশে।
যবেকার কথা ভারত তখনো হয়নি ভাগের মাতা,
রাজপুত বালা মুমালের সাথে রাণার অমর গাথা।
অভিমানিনীর করুণ কাহিনী আজিও হৃদয়ে বাজে,
অমরকট আর জয়সলমীর–মরু অরণ্য মাঝে।
মৃগয়ায় রত অমরকটের রাণা মহেন্দ্র বীর,
উপনীত তিনি জয়সলমীরে–তৃষ্ণায় অস্থির।
তৃষিত রাজন ক্ষুধায় কাতর–মরুতাপে তিনি দগ্ধ,
রাজপুতানী মুমাল তাঁহারে সেবায়করিল স্নিগ্ধ।
মুমালে হেরিয়া অপলক রাণা–মুগ্ধ তাঁহার হৃদয়,
এক নিমেষেই দুজনার মাঝে বুঝি হিয়া বিনিময়।
দ্রুতগামী এক ঊষ্ট্র পৃষ্ঠে জয়সলমীর শহরে,
প্রত্যহ রাণা মুমাল প্রাসাদে নিশার অন্ধকারে।
অমরকটে ফিরিতেন যবে রাত্রির শেষ প্রহর,
প্রাসাদে তখন নিদ্রিত সবে,নিদ্রা আবেশে শহর।
কিন্তু রাণার রাত্রি ভ্রমণ–গোপনতা হায় চুর্ণ,
তাঁহার ভগিনী–চিত্তটি ছিল সন্দেহ বিষে পূর্ণ।
সংগ্রহ করি’ সন্দেশ তিনি করিলেন চক্রান্ত,
যেমতে হউক রাণা মহেন্দ্রে করিবেন এবে ক্ষান্ত।
নিরীহ প্রাণীর অংগহানিতে হায় সে ছুটিতে নারে,
তখাপি রাণার অমর প্রেমে কি বাধা কভু দিতে পারে !
আরেক ঊষ্ট্রে সওয়ারী রাণা ছুটেন অন্ধকারে,
কিন্তু কোথায় জয়সলমীর–উপনীত বারমেরে।
অনুভব করি’ আপনার ভ্রম ত্বরায় চলেন রাণা,
এদিকে মুমাল অপেক্ষা করে–কপোলে অশ্রুকণা।
মুমালের ছিল কয়টি ভগিনী–তাহারাও সমব্যাথী,
কনিষ্ঠা সনে অগ্রজা সবে ছিল সর্বদা সাথী।
কেহ ছিল সেথা সখীর সাজেতে–কেহ পুরুষের বেশে,
জয়সলমীরে মুমালের গেহে উপনীত রাণা শেষে।
কিন্তু সেথায় পুরুষে হেরিয়া সন্দেহ বাঁধে দানা,
সে যে আসলে মুমাল ভগিনী–বুঝিতে নারেন রাণা।
অমরকটের পথে মহেন্দ্র–মুমাল আর্তি ব্যার্থ,
ভাবিল বালাটি–মোর জীবনের নাহি আর কোনো অর্থ।
অগ্নিতে দিব নিজেরে আহূতি–পালিব জহর ব্রত,
যেমন ভাবনা কর্মও হায় মুমালের সেইমত।
তখনো রাণার বেশিদূর পথ হয়নি অতিক্রান্ত,
সন্দেশ ধায় মহেন্দ্র সনে–অন্তর নহে শান্ত।
হাহাকার করি’মুমালের গেহে আসিলেন ত্বরা তিনি,
কিন্তু তখন অনলের মাঝে মুমালের তনুখানি।
নিমেষে রাণাও বরণ করেন তপ্ত অগ্নিশিখা,
পরপারে বুঝি দোঁহার মিলন চিরতরে হয় লেখা।
রাজস্থানের আকাশে বাতাসে অপরূপ রূপকথা,
আজিও নয়নে অশ্রু ঝরায়–হৃদয়ে জাগায় ব্যাথা।