ইচ্ছে হতে ছোট আবার,
পুরোদস্তুর আছেই আমার,
থাকবে না আর কোনই ভাবনা চিন্তা–
লুকিয়ে রব গাছের ফাঁকে,
ধরতে কেউ এলে তাকে,
করাব শুধু দৌড় তাক ধিন্ তা ॥
নাচবো, গাইবো সারাদিনে,
বলবো মায়ের কানেকানে,
পড়াশুনা করবো নাকো আর–
লেখাপড়া করলে ফের,
বয়স বেড়ে যাবেই ঢের,
বড় হবার কি যে দরকার !!
কিন্তু বয়স অবাধ্য সে,
চুপি চুপি বলেই হেসে,
যতই তুমি চাও না হতে ছোট–
হতেই তোমায় হবে বুড়ো,
বাক্সে কেবল জমা করো,
ছোটবেলার হাসিকান্নার ফটো॥
তাই ত’ এমন বুড়ো হয়ে,
প্রতিদিনই যাচ্ছি ক্ষয়ে,
তিলে তিলে বাড়ছে বয়স হায়–
পলে পলে জমাই স্মৃতি,
একদিন যার হবে ইতি,
থাকবো না আর আমার দুনিয়ায়॥
কাল কি হবে ভেবেই মরি,
ভবিষ্যতের সঙ্গে করি,
বর্তমানের সূক্ষ্ম বোঝাপড়া–
সাধ মিটায়ে বিকিকিনি,
সবটুকু তার বিফল মানি,
জমাখরচ শূন্য দিয়ে ঘেরা॥
ভবিষ্যতের আশঙ্কাতে,
চলতে নারি আলোর পথে,
তাকিয়ে থাকি অনাগতর পানে–
মন ছুটে যায় দূর অতীতে,
আবার বুঝি ছোট্ট হতে,
কিন্তু সে পথ মিলবে কোন্ খানে !!
একবার ত’ বড় হলে,
শিশুর জীবন দূরে ঠেলে,
পিছন ফিরে আর তাকানো মানা–
সামনে কেবল ভবিষ্যতই,
অতীত তখন কেবল স্মৃতি,
জীবনটাকে প্রতি পলেই চেনা॥
সওয়ারী আজ বুদ্ধি–রথে,
উৎরাই কি চড়াই পথে,
যেথায় সেথায় যায়না মোটে থামা–
কোলাহল সব আশেপাশে,
কানের মাঝে ভেসে আসে,
হিসেব করেই পথের মাঝে নামা॥
তাই ত’ চাই পিছন পানে,
শিশু হবার প্রবল টানে,
তুফান উঠুক জীবননদীর পালে–
ভবিষ্যত সে দেখুক পিছে,
অতীতটি মোর নয়কো মিছে,
দেখুক তারে বর্তমানের কালে॥
ছাদে, ঘরে, গাছের ধারে,
জানা অজানার সেই সুদূরে,
চেনা অচেনার বাসা পাশাপশি–
ঢুকবো আবার খেলাঘরে,
সুখের চাবি সঙ্গে করে,
কিনবো অমল খুশী রাশি রাশি॥
বড় হবার ঝক্কি বড়,
রোদের তাপ নিত্য খরো,
বিশ্ব জুড়ে কেবল আকিঞ্চন–
কোনটা ভেজাল,কোনটা খাঁটি,
সেই বিচারে হুটোপাটি,
ভাল মন্দের বিচার শক্ত ভীষণ ॥
নামবে যবে আঁধার ছেয়ে,
হয়তো মনে আসবে ধেয়ে,
কোনো কিছুই হল না বুঝি করা–
ফাঁকা কথায় কাটল জীবন,
যাবার বেলায় বলবে ভুবন,
জীবন তোমার কেবল ভুলে ভরা॥
তাই তো তাকাই পিছন ফিরে,
শৈশবের আঁতুড়ঘরে,
ছোট্টবেলার ছোট্ট ঘরে ফেরা–
দিনগুলি হোক বাঁধনহারা,
যেমন তেমন ছন্নছাড়া,
হোক না সেথাই জীবনখানি সারা॥
পথ হারিয়ে অন্য পথে,
উঠেছিলেম ভগ্ন রথে,
দেব এবার অচিন পথে পাড়ি–
ভবিষ্যতের অয়ন হতে ,
অনিকেতের অতীত স্রোতে,
ছুটবে আমার রঙিন স্বপন–তরী॥
প্রথম যেদিন ধরার পরে,
মেলেছিলেম জীবনটারে,
যে ধরণীর মাটির গন্ধ সোঁদা–
ভাবিনি ত’ ভবিষ্যতে,
হাঁটতে হবে এমন পথে,
যেথায় কেবল পদে পদেই বাধা॥
যেদিন প্রথম দেখেছিনু,
চতুর্দিকে আলোর বেণু,
হাওয়ার মাতন গাছের কানাকানি–
ভেবেছিনু এলেম কোথা
ফুলে ফলে সৃষ্টি গাঁথা,
দূর আকাশের রঙটা আশমানি॥
জেনেছিলেম সেদিন আমি,
এই সৃষ্টির সবই দামী,
মালিক যিনি তিনি অন্তর্যামী–
শেষ আশ্রয় তাঁরই পায়ে,
যেতেই হবে বুড়ো হয়ে,
শিশু থাকার সাধটা বোকামী॥
যা–কিছু সব ঘটছে মেলা,
সবই তাঁর হাতের খেলা,
ফুলে ফলে স্থলে জলে হাওয়ায়–
নীল আকাশে রঙিন তুলি,
আঁকে কতই মেঘের ডুলি,
রোদ বৃষ্টির অবাক আলো ছাওয়ায়॥
কান্নাহাসির বসুন্ধরা,
সবই ত’ তাঁর হাতে গড়া,
দিবারাতি খেলছি তাঁরই সাথে,
কিন্তু বিদায় নিতেই হবে,
কে চিরদিন থাকবে ভবে,
ফিরতে হবে অমোঘ কালের স্রোতে॥
দিন ফুরায়ে সন্ধ্যা এলো,
চতুর্দিকে রাতের কালো,
এবার বুঝি বিদায় নেবার পালা–
মাঝেমাঝেই ভাবি যদি,
আমার এই জীবন নদী,
উজান পথে বইতো এই বেলা॥
তবে হতেম ছোট্ট আবার,
কিন্তু সেটি নাইকো হবার,
অমোঘ ডাকে দিতেই হবে সাড়া–
হয়তো অন্য কোনোদিন,
বাজিয়ে বাঁশি হৃদয়–বীণ,
নতুন করে হবেই ঘরে ফেরা॥
আসব তখন শিশুর বেশে,
ফের নিখিলে খেলব হেসে,
নবীন জীবন নবীন পাতায় লেখা–
দেখবো আবার জগৎটাকে,
নতুন ভাবে তাঁর দুচোখে,
করবো খেলা আমরা একা একা।