“সতী হব আমি–জীবনের আজি নাহি আর কোনোমূল্য”,
কাঁদেন অঝোরে অহিল্যা বাঈ শ্রাবণের ধারা তুল্য।
মারাঠা মালোয়া রাজ্যের প্রিয় রাণী অহিল্যা বাঈ,
সন্দেশ আসে স্বামীটি তাঁহার ধরাধামে আর নাই।
খাণ্ডেরাও–মালোয়া রাজ্যে হোলকার নরপতি,
সমরাঙ্গনে অগ্নিগোলকে জীবনে সহসা যতি।
সেই সমাচারে বধূ অহিল্যা যাচিকা শ্বশ্রু চরণে,
হে পিত–মোরে দিন অনুমতি স্বামীসনে সহমরণে।
পুত্রের শোকে কাতর পিতাটি–মলহার রাও হোলকার,
কেমনে আজিকে বধূমাতাটিরে দিবেন এই অধিকার !
“খাণ্ডোবাদেব–দাও গো আমার হিয়ার মাঝারে শক্তি,
বধূমাতাটিরে রুধিবার তরে মাগি এবে প্রভু যুক্তি।”
সহসা তাঁহার অন্তরপটে নবীন আলোক উদয়,
খাণ্ডোবাদেব তবে কি সত্য মলহার প্রতি সদয় !
সাশ্রুনয়নে পিতা হোলকার কহিলেন–বধুমাতে,
কেমনে তোমারে দিব অনুমতি সহমরণের পথে !
তুমি ত’ জননী–অসহায় দুই শিশু আজি তব ক্রোড়ে ,
তোমার বিহনে রাজ্য ব্যাপ্ত হইবে অন্ধকারে।
পিতা কি কখনো কন্যাকে বলে–হও মাগো তুমি সতী !
জানিবে তুমিই রাজ্যের বিভু–ভবিষ্য অধিপতি।
সহমরণের চিন্তা ত্যজিয়া দুখিনী ভর্তাহারা,
অনাথ কন্যা পুত্রে দিলেন অঝোর স্নেহের ধারা।
মলহার রাও শাসক আসনে–এক যুগ বীত প্রায়,
এমত ক্ষণেই মালোয়া আকাশে ঘনঘটা পুন হায়।
শ্বশ্রু পিতারে হারান রাজ্ঞী,পীড়িত পুত্রে পিছে,
অমোঘ ছিল সে ভবিষ্যবাণী–কেমনে হইবে মিছে !
মৃত্যু আসিয়া শ্বশ্রুওসুতে দিল যবে হাতছানি,
রাজ্যের রাশ লইলেন করে অহিল্যা মহারাণী।
অলকানন্দা বধূবেশী বালা তখন বিয়াল্লিশ,
রাজ্যবাসীরা মহারাণীমারে করে সবে কুর্নিশ।
অহিল্যা বাঈ–সাহসিনী নারী–রূপেগুণে তিনি অতুলা,
তেজস্বিনীর শাসনে মালোয়া সুজলা শস্য শ্যামলা।
ফুলেফলে ভরে মালোয়া রাজ্য সুশাসনে প্রতিদিন,
অরিদমনেও অগ্রণী তিনি–চিত্ত শঙ্কাহীন।
প্রজাবৎসলা অহিল্যা বাঈ সংস্কৃতির পোষিকা,
গুণীর কদরে তিনি অগ্রণী–হৃদয়ে ছিল না ঝরোকা।
তাঁহার অতুল কর্মের গাথা আসমুদ্র হিমাচলে,
ভারতের ঐ আকাশে আজিও রূপকথা সম জ্বলে।
পশ্চিম তথা পূর্ব ভারত–উত্তর ও দক্ষিণ,
কত শতাব্দী অতীত তথাপি কীর্তি হয় না প্রাচীন।
কৃষি ও শিল্প, শিক্ষা,স্বাস্থ্য সবেতেই সুনজর,
ইন্দোর গ্রাম তাঁহারই আমলে ইন্দ্রপ্রস্থ নগর।
দুর্গ,সড়ক,কূপ নির্মাণে উদারহস্ত রাণী,
কর্মই ছিল সতত তাঁহার মুখনিসৃত বাণী।
সুশাসিকা রাণী অহিল্যা বাঈ–কঠোর কোমলা
নারী,
সত্য কি তিনি মানবী ছিলেন–নাকি পরমেশ্বরী !
ত্রিশটি বছর তাঁহার শাসনে শান্তিই ছিল স্থিতি,
প্রশ্রয় কভু লভেনি সেথায় অন্যায়,দুর্নীতি।স্থিতধী,প্রাজ্ঞা,বুদ্ধিমতী,উদার,বিচক্ষণা,
মহিমান্বিতা রাজ্যলক্ষ্মী–তিনি যে বীরাঙ্গনা।
তাঁহার তুল্য তিনিই কেবল–তাঁহার উপরে নাই,
ইতিহাসে লেখা স্বর্ণাক্ষরে–রাণী অহিল্যা বাঈ।
স্বপন চক্রবর্তী ।