জীবন টা সবার সমান ধারাতে চলে না। কখন ভালো থাকা আবার কখন মন্দ থাকা।এই নিয়েই জীবনের পথ চলতে হয় আমাদের সবাইকেই। শুধু ভালো থাকলেই চলে না ভালো রাখতেও হয়। ঠিক তেমন ই অরুনাভ র জীবন টাও ছিল চড়াই উথরাই এ ভরা।

২০১৩ সাল অরুনাভ তখন কলেজে ৩য় বর্ষের ছাত্র। তার জীবন টা বন্ধু বান্ধব আর পড়াশুনা তেই আবদ্ধ ছিল। সেই সময়েই দেখা হয়ে গেল অনামিকার সাথে। অনামিকা তখন ১ম বর্ষের ছাত্রী। অরুনাভ আর অনামিকা দুজনেই একই কোচিং এ পড়াশুনা করত। অরুনাভ র ভালো লেগে গেল অনামিকা কে। এটা কিন্তু শুধুই ভালো লাগা ছিল ভালোবাসা না। তাঁরা কথা বলা শুরু করলো। সারাদিন কথা বলা সারা রাত কথা বলার এক মাত্র সাক্ষী শুধু তাঁদের মোবাইল ফোন এর ইনবক্স টাই। মাস তিনেক কেটে গেল শুধুই তাঁদের ভালো লাগা তেই। ভালোলাগা টা যে কখন ভালোবাসা তে পরিনত হল তার সাক্ষী এক মাত্র ২০১৪ সালের বইমেলা। জেমস প্রিন্সেপ যদি বেচে থাকতেন তাহলে হয়তো অনেক আগেই তাঁরা জেনে যেতো যে তাঁরা একে অপর কে ভালোবাসে। কারন প্রিন্সেপ ঘাট ছিল তাঁদের অন্যতম আস্তানা। দিন টা ছিল ৪ ঠা মার্চ অরুনাভ আর অনামিকা তাঁদের ভালোবাসার কথা একে অপর কে বলে ফেলল।

ভালো মন্দে তাঁদের জীবন কাটতে লাগল। তারই মধ্যে অরুনাভ কলেজ পাশ করে একটি বেসরকারি টেলিফোন কোম্পানি তে চাকরি পেলো। তাঁদের ভালো বাসার মাঝে এই প্রথম বার কেউ একজন এল। এই কেউ টা ছিল অরুনাভ র জীবন এর প্রথম চাকরি। অরুনাভ র চাকরির ব্যাস্ততা ও অনামিকার তার মামার বাড়ি যাওয়া এই প্রথম তাঁদের ভালোবাসায় সামান্য একটু  দুরত্ত সৃষ্টি হল। হয়তো তাঁরা প্রমান পেল তাঁদের ভালোবাসা টা কতটা গভীর হয়েছে। অরুনাভ বুঝল সে হয়তো অনামিকা কে ছাড়া বাচতে পারবে না।

আস্তে আস্তে তাঁদের ভালোবাসা আরো গভীর হল। অনামিকা ও বুঝে গেল সেও অরুনাভ কে ছাড়া বাচতে পারবে না। ধীরে ধীরে তাঁদের ভালবাসার সাথে তারাও বড় হতে শুরু করলো। অরুনাভ চাকরি বদল করেছে অনেক দিন ই হয়ে গেছে। অনামিকা ও কলেজ পাশ করে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি তে ঢুকেছে। তাঁদের কর্তব্য বেড়েছে নিজেদের প্রতি এবং তাঁদের পূর্ণতা পাওয়া সম্পর্ক টার প্রতি। আজ তাঁদের সম্পর্ক টা প্রায় ৫ বছর হতে চলল। ভালোবাসা টা এখন আগের মতো আছে বললে বলা টা ভুল হবে। না না কমেনি বরং আগের থেকে অনেক বেরে গেছে। আজ ও তাঁরা একে অপরকে পাগলের মতো ভালোবাসে। শুধু জীবনের ব্যাস্ততার জন্য সময়ের অভাবে আজ তাঁরা মাঝে মাঝে একটু বেশি ঝগড়া করে ফেলে। কিন্তু ভালোবাসা টা তাঁদের আজ ও একটু হলেও ভালো রেখেছে।

আজ তাঁরা দুজনেই খুব ব্যাস্ত কারন তাঁরা যে ঠিক করেছে তাঁরা বিয়ে করবে তাই তাঁরা এখন তাঁদের ভবিষ্যৎ এর চিন্তা করে নিজেদের কে রাগ, ঝগড়া আর ভালবাসার মধ্যে আবদ্ধ্য রেখেছে। আজ তাঁরা সময় টা কম পায় নিজেদের জন্য তাই দেখা না হলেও প্রযুক্তি তাঁদের দেখা করিয়ে দেয়। মানে তাঁরা আজ Whatsapp এর  video calling এই বেশিরভাগ দেখাটা সেড়ে নেয়। তাতেই তাঁরা ভালো না থাকলেও ভালো থাকার চেষ্টা টুকু করে। আজ জেমস প্রিন্সেপ ও তাঁদের খোঁজে। তিনিও হয়তো বুঝে গেছেন যে তাঁরা এখন সময়ের জালে আটকে নিজেদের ভালো রাখতে ভুলে গেছে।

এখন তাঁদের ভালো থাকার চেষ্টা আর ভালো রাখার চেষ্টা। এইটাই হয়তো প্রকৃতির নিয়ম। এইটাই হয়তো একটা পরিপূর্ণ ভালোবাসা।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleমালিনী
Next articleএ কি গেরো
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments