ইচ্ছে করে তোমার মতো লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে

হনহনিয়ে মাঠের দিকে যাই। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি

এলে পরে, আদর করি বৃষ্টি মাখি গায়। বলদ

জোড়ায় লাঙ্গলখানি জুড়ি, গামছাখানি ল্যাঙোট

মারি পরি, প্যাচাক, প্যাচাক কাদায় ফেলি পা।

আমায় দেখে বলবে চাষীভুষী, আই রে সবাই

রঙ্গ দেখে যা। একটু পরেই ক্লান্ত দেহটাকে

পুকুরপাড়ে গাছের ছায়ায় আনি, হাঁসফাঁসিয়ে

বলবো গলার জোরে, “কই গো সুজন, আবার

কতখানি?” মুচকি হেসে এদিক ওদিক চেয়ে

ফিসফিসিয়ে বলবে কানে কানে, “অনেক হল

এবার চলেন বাবু, এ কাজ তাদের যারা এ

কাজ জানে। আপুনি হলেন কলম পেষা বাবু,

লাঙ্গল হাতে মানায় নাকো মোটে!” বেপরোয়া

ইচ্ছেগুলো তবু বুঝি না কেন মাথায় এসে জোটে।

ইচ্ছে করে গাঁইতি হাতে নিয়ে খনির মধ্যে

পশি অন্ধকারে। তোমরা যারা অনেক সময়

ধরে ভাঙছো পাথর অন্ন পাবার তরে। বলবো

আমি, “অনেক হল তোদের, এবার তোরা একটু

জিরিয়ে নে। কাজ তো মোটে একটু আরও বাকি,

বাকি কাজটা আমায় করতে দে।” তোমরা তখন

অবাক চোখে চেয়ে, দেখবে কেমন পাথর কাটি

গাঁইতির গান গেয়ে। দু’ এক কোপ দিতেই শরীর

উঠবে ঝিনঝিনিয়ে, লাজুক চোখে আসবো সরে,

বসবো দূরে গিয়ে। অট্টহাসি করবে সোরেন, বলবে

গলার জোরে, “শখ মিটেছে বাবুর, এবার গাঁইতি

হাতে ধরে। আপুনি হলেন ঠাণ্ডা ঘরের বাবু,

এ সব কাজ কি করা অতই সোজা!” বুঝি না

কেন ইচ্ছেগুলো তবু আমায় নিয়ে করছে হাসি-মজা।

ইচ্ছে করে নৌকাখানি বেয়ে ভাটির টানে অচিন

দেশে যাই। যেমন করে ভাটিয়ালীর সুরে মাঝিরা

সব আনন্দে নাও বায়। জোৎস্না নামে নদীর জলে

ক্যামনে রাতের বেলা। রাত জাগা চোখ দেখবে আহা!

জোয়ার-ভাটার খেলা। ফাঁস দিয়ে মাছ ধরবে মাঝি

ভরবে ডিঙিখানি। এমনি করেই কাটুক না রাত

নৌকারই দাঁড় টানি। হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ায়

নৌকা টলমল। বুকের মধ্যে ধুকপুকুনি অমনি শুরু

হলো। খানিক হেসে বলবে ফজল, “ভয় পেয়েছেন

নাকি? এই তো সবে সন্ধ্যে হলো রাত্রি সারা বাকি।

আপুনি হলেন আত্মভোলা বাবু, তাইতে এমন সাধ

জেগেছে মনে, এ সব কাজে সাহস লাগে বুকে!” বুঝি

না কেন ইচ্ছেগুলো তবু তাড়িয়ে বেড়ায় মাথার মধ্যে ঢুকে।

Print Friendly, PDF & Email
0 0 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments