বাড়ির পাশেই ছোট্ট মেলা বসেছে। তিন্নি মা বাবার হাত ধরে মেলায় ঘুরতে গেছে। মা তার হাত টা শক্ত করে ধরে রেখেছে । তিন্নি শুধু মা বাবাকে জিগ্যেস করছে “আর কি কি দেখার আছে মা, নতুন কি কি এসেছে মেলায়? আমাকে বল না”!
মা বলল ” বাঁ দিকে নাগরদোলা, তার পাশে দোলনা, আর তার পাশেই দোকান শুরু হয়েছে, এক বছর আগে যেখান থেকে তোমাকে চুরি কিনে দিয়েছিলাম ঠিক তেমন হয়েছে এবারও , পাঁপড় ভাজার দোকান বসেছে আর আইস ক্রিমের দোকানও ,খাবে তুমি?” তিন্নি বলল ” না মা আমি খাবো না ,আমি আর একটু ঘুরবো”। মা হাত ধরে ঘোরায় তিন্নিকে। বাবা তিন্নিকে বলে “ঐ দ্যাখ মা কতো রঙিন বেলুন ,বল বল শিগগির কোন রঙটা নিবি তুই”? বলেই যেন একটু থমকে দাঁড়িয়ে যায়, তিন্নির মা তিন্নির বাবার দিকে নিরবে তাকিয়ে থাকে!
তিন্নি বলে ওঠে ” কি কি রঙ আছে বাবা”? বাবা চোখের কোণের জলটা মুছে নিয়ে বলে “লাল আছে,হলুদ,সবুজ,নিল, কমলা, গোলাপি, সাদা ; এবার বল তুই কোনটা নিবি “?
তিন্নি বলল ” যে কোন একটা রঙ কিনে দাও বাবা, আমি তো চোখে দেখতে পাইনা , আমার কাছে লাল রঙও যা নীল সাদাও তাই, সবই আঁধার “!
বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কমলা রঙের বেলুন কিনে দিয়ে বলল ” না তিন্নি সব রঙ মোটেও আঁধার নয়, সবই রঙিন বেলুন , এই নে ধর, আমি তোর জন্য কমলা বেলুন কিনেছি”।
তিন্নি বেলুন টা হাতে নিয়ে খুশী হয়ে হাসে।
তিন্নির মা বাবা অনেকদিন পর একটু শান্তি পায় মেয়ের মুখে এই হাসি দেখে।
গত বছর দীপাবলির দিন বাজি পটকা পোড়াতে গিয়ে তিন্নির চোখে লাগে, মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছিল সে, তাতেই হারাল দৃষ্টি শক্তি, অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কোন ফল হয়নি। তারপর থেকে বাবা মায়ের মুখে শুনেই মনের রঙে রঙ চেনে তিন্নি।
বেলুন নিয়ে মা বাবার হাত ধরে ধীরে ধীরে বাড়ির পথে এগোতে থাকে তিন্নি।
পেছন থেকে বেলুন ওয়ালার ডাক শুনে দাঁড়ায় তারা, ” খুকী একটু দাড়াও” ।
ফিরে আসে বাবা মায়ের হাত ধরে তিন্নি।
বেলুন ওয়ালা একটা সবুজ বেলুন বাড়িয়ে দিয়ে তিন্নিকে বলে ” এই নাও খুকী তোমাকে আমি সবুজ রঙের বেলুন দিলাম”।
তিন্নির বাবা মানি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিতে যাচ্ছিলো , বেলুন ওয়ালা বলল ” না না টাকা আমি নিতে পারব না, এই খুকীকে দেখে আমার মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল, সেও এই রকমই ছিল, দুদিনের জ্বরে মারা গেল, বাঁচাতে পারলাম না মেয়েটাকে, আমার মনের শান্তির জন্য এটা খুকীকে নিতে দিন” ।
তিন্নির বাবা আর কিছু বলল না , তিন্নি বলল ” ভালো থেকো কাকু” ।
তিন্নির হাত ধরে বাবা মা খানিকটা পথ এগোল।
কিছুটা গিয়ে তিন্নির বাবা পেছন ফিরে একবার দেখল,
বেলন ওয়ালা চোখের জল মুছে বেলুন এ ফুঁ দিচ্ছে…।।