নগরে পশিলেন এক
ভগবত জ্ঞানী,
সৌম্য আননে ধীর
নয়ন দুখানি।
পুরবাসী কহিলেন–
“হে তাপস জ্ঞানী,
আপনার সনে কিছু
তত্ব কথা শুনি।”
“তুচ্ছাতিতুচ্ছ আমি
নাহি শাস্ত্রজ্ঞান,
ঈশ্বরই পরম ঋত
বাকী সব ম্লান।
তাঁহারে পূজন করি,
নহি আমি জ্ঞানী,
কিছুই ত’ নাহি জানা
এইটুকু জানি।”
সাধুর উক্তি শুনি’
পুরবাসী জনে
লুটায় চরণে সবে
আপ্লুত মনে।
কহে-“হে পরম জ্ঞানী
করগো উজাড়,
অজ্ঞান ভাণ্ডার হতে
রত্ন মণিহার।”
হাসিয়া কহেন সুধী–
“তবে শুন সবে,
শোক তাপ সাময়িক
এ অনিত্য ভবে।
আঁধার আসিলে আগে
আলোক পিছনে,
সুখ দু:খ ঘুর্ণ্যমান
চক্র আবর্তনে।
শোক বিনা সুখ সদা
মণিহারা ফণী,
ইহার অধিক জ্ঞানে
নহি আমি ধনী।
বিজ্ঞের বাক্যে বুঝি
তুষ্ট নহে কেহ,
অতৃপ্ত চিত্তে ফেরে
নিজ নিজ গেহ।”
হাসিয়া ভাবেন মুনি
নির্বোধ বিশ্ব,
স্বার্থের মায়াডোরে
হেরি সবে নি:স্ব।
মোর তরে সংসার
নহে পূত বটে,
ত্যজিলেন সেই স্থান
বার্তা দ্রুত ছুটে।
নাগরিকগণ বলে –
“ছাড়িলাম হাঁফ,
এমন অজ্ঞানী সাথে
বসবাস পাপ।”
হায়রে মনুষ্যজাতি
জড়বুদ্ধি অতি,
পুণ্যসঙ্গ পরিহারে
আপনারই ক্ষতি।
আমিত্বের অহংকারে
সদা উদ্ধত,
মন্দের নিকট হায়
সাধু শির নত।
সারদা মাতার পদে
করিনু বিনয়,
তাঁহার আশীষে যেন
থাকি অক্ষয়।
———স্বপন চক্রবর্তী———