নবদুর্গা নবদুর্গা সবাই বলেন শুনি,

আভিধানিক অর্থ কিকজনাই বা জানি !

মা দুর্গার নয়টি রূপের আরাধনার সাথে,

আজকে তাঁরে প্রণাম করি মহালয়ার প্রাতে।

যিনি দুর্গা তিনিই সতী তিনিই মহামায়া,

আদ্যাশক্তি জগদ্ধাত্রী শ্যামা শিবজায়া।

তাঁরে নিয়েই আজকে মোর ছন্দ ছড়ার জাল,

নবদুর্গার আরাধনাশুরু আগামীকাল।

প্রথম রূপে শৈলপুত্রীবৃষ বাহনে মাতা,

পূর্বজন্মে ছিলেন সতী দক্ষেরই দুহিতা।

দক্ষিণে তাঁর ত্রিশুল স্থিতকমল বামকরে,

বাঁধা পড়েন কৈলাসে মা শিবের বাহুডোরে।

শিবহীন যজ্ঞে হায় দেহত্যাগী সতী,

পরজন্মে তিনিই পুন: হলেন মা পার্বতী।

শৈলরাজের পুত্রী তিনিতাই শৈলপুত্রী,

প্রারম্ভে তাঁর আরাধনাপুণ্য নবরাত্রি।

হিমালয় কন্যা তিনিমেনকা তনয়া,

দেবাদিদেব মহাদেবের নবজন্মেও জায়া।

নবশক্তির দ্বিতীয় রূপে দেবী ব্রহ্মচারিণী,

তপস্যাতে মগ্ন মাতামহিমময়ী তিনি।

জপের মালা দক্ষিণে তাঁরকমণ্ডলু বামে,

পিণাকপাণির আরাধনায় রত অষ্টযামে।

কঠোর তপশ্চর্যা অন্তে লভেন শিবে পতি,

আদ্যাশক্তি মহামায়া জননী পার্বতী।

মেনকার আর্তি কণ্ঠে মা আর নয়,

কৃশকায়া দুহিতারে দেখতে নারেন হায়।

তাই থেকে মায়ের আরেক নামটি হল উমা,

মোরা সকল পাপী তাপীমাগি দেবীর ক্ষমা।

ব্রহ্মচারিণী মায়ের কৃপায় হোক সিদ্ধিলাভ,

তপ, ত্যাগ, বৈরাগ্য আর সংযমের প্রভাব।

তৃতীয় রূপে মহামায়া চন্দ্রঘণ্টা কল্যাণী,

মস্তকে তাঁর অর্ধচন্দ্রতাই চন্দ্রঘণ্টা তিনি।

কনকবর্ণা অবয়বে সমুজ্জ্বলা মাতা,

ধনুর্বাণ,তরবারি,ত্রিশূল সমন্বিতা।

মহামায়া দশভুজাঅতীব তেজস্বিনী,

কণ্ঠে দেবীর ঘণ্টার ন্যায় প্রচন্ড এক ধ্বনি।

দুরাচারী অসুর সকল ত্রাসেই থরহরি,

বিনাশ করেন তারকাসুরেস্বর্গরাজ্য অরি।

মহামায়ার কুষ্মাণ্ডা রূপচতুর্থীতে চিনি,

কারুণ্যেতে ভরপুর মাঅষ্টভুজা তিনি।

চক্র,পদ্ম,ধনুর্বাণ,কমণ্ডলুর নীড়ে,

অমৃতের পূর্ণ কলস দেবীর বামকরে।

অনিন্দ্য তাঁর ত্রিনয়নআনন হাস্যময়

ব্রহ্মজ্ঞানের আধার মাতাঅসীম বরাভয়।

কল্পতরু মা আমার অষ্টসিদ্ধি দানে,

পুষ্ট করেন ভক্তে সদা দিব্য ব্রহ্মজ্ঞানে।

কুষ্মাণ্ড প্রিয় তাই কুষ্মাণ্ডায় স্তুতি,

মহামায়া আদ্যাশক্তি জননী পার্বতী।

কুৎসিৎ সন্তাপ এই বিশ্বচরাচরে,

সেই কু উষ্মায় পূর্ণ জগত মাতৃকা উদরে।

সেই হেতুও কুষ্মাণ্ডা কিম্বা কৃষ্ণমাণ্ড,

সৃষ্টি করেন ঈষৎ হাস্যে চরাচর ব্রহ্মাণ্ড।

মহাপ্রলয়ের অন্তে যবে সৃষ্টি রসাতলে,

বসেছিলেন মহামায়া ভীমাপর্বত তলে।

মহাদেবে হেরিসেথায় আনন্দিত দেবী,

হাস্য তাপে সৃষ্টি পুন: চন্দ্রাদি আর রবি।

সৃষ্টি আজি সঙ্কটে মাগোবিশ্ববাসী ম্লান,

অধম তব সন্তানেরে কর মা পরিত্রাণ।

এবার তিনি স্কন্দমাতা কার্তিক জননী,

আরাধিতা পঞ্চমীতে পঙ্কজবাসিনী।

চতুর্ভুজের একটি করে স্বয়ং শিশু স্কন্দ,

বরাভয় হস্ত দেবীররোধ করেন মন্দ।

দক্ষিণে তাঁর একটি হস্তে পদ্ম প্রস্ফুটিত,

ত্রিনয়নীর আননটিতে হাস্য শুচিস্মিত।

কৃত্তিকা ধাত্রীমাতা তাঁদেরই স্নেহান্চলে,

হলেন শিশু স্কন্দ বড় শরবনের কোলে।

কৃত্তিকা থেকেই তিনি দেব কার্তিকেয়,

ছয় বছর বয়স মাত্রশিশু অপরাজেয়।

মায়ের সনে অস্ত্রশিক্ষাদুষ্ট অসুর হত,

মর্ত্যবাসী স্কন্দমাতার আরাধনায় রত।

নবরাত্রির ষষ্ঠদিনে উমা কাত্যায়নী,

কাত্যায়নেব কন্যাএক পুরাণ কাহিনী।

বৈদিক যুগের ঋষি মহান কাত্যায়ণ,

পার্বতীকে তপে করেন অভীষ্টের সাধন।

কন্যারূপে লাভ করেন তাঁরেই মহাঋষি,

দেহপ্রভা কন্যার কোটি চন্দ্রিমা তাদৃশি।

ত্রিনয়না দশভুজাকন্যা কাত্যায়নী,

কালক্রমে জননী দেবী মহিষমর্দিনী।

সপ্তমীতে কৃষ্ণবর্ণা আলুলায়িত কেশ,

বিদ্যুতের মালা গলে ভয়ংকরীর বেশ।

চতুর্ভুজার তিনটি করেই অস্ত্রের ঝনঝনি,

অপর করেই বরাভয় প্রদান করেন তিনি।

এই রূপই কালিকা রূপবাহন গর্দভ,

সপ্তমীর রাতে মায়ের কালীমন্ত্রে স্তব।

পার্বতী গৌর বর্ণা মেনকা দুহিতা,

শৈলরাজ হিমালয় তিনি মহাদেবীর পিতা।

কঠোর তপের রৌদ্রতাপে কৃষ্ণবর্ণ কায়া,

যে তপের অন্তে মাতা হলেন শিবজায়া।

গঙ্গাজলে স্নানের শেষে দেবী মহাগৌরী,

নবরাত্রির অষ্টমীতে তাঁরেই পূজা করি।

দেবীর বাহন বৃষ তাঁর শুভ্র পোষাক অঙ্গে,

নৃত্য করেন চতুর্ভুজা শিশুকন্যার রঙ্গে।

প্রমোদপ্রিয় শিবশম্ভু তিনি অন্তর্যামী,

পার্বতী আপন রূপেদেবাদিদেব স্বামী।

তাঁর করে ব্রহ্মকমল অমল মধুবাস,

মহাগৌরীর আরাধনায় সকল পাপের নাশ।

নবমীতে শেষ তিথি পুণ্য নবরাত্রি,

চতুর্ভুজা আশীর্বাদী শিবাণী সিদ্ধিদাত্রী।

দান করেন সর্বজনে দেবী যতেক সিদ্ধি,

মাতৃ পূজায় সংসারে বর্ধমান ঋদ্ধি।

সিদ্ধিদাত্রী রূপে তিনি শিবেরও আরাধিতা,

সর্ব সিদ্ধি লাভ অন্তে মহেশ জগৎপিতা।

নবদুর্গার নয়টি রূপের দিলেম পরিচয়,

পিতৃপক্ষ অবসানে দেবীপক্ষ  উদয়।

মহান আলয় কথার থেকেই মহালয়ার সৃষ্টি,

মোদের সবার পরম আশয় দুর্গামায়ের দৃষ্টি।

যোগসাধনার গূঢ়তত্বে নবদুর্গার স্তুতি,

মূলাধারে শুরু যার সন্ধিচক্রে ইতি।

ভক্তিভরে এসো করি মাতৃ আরাধনা,

ভালো রেখো মাগো মোদেরঅন্তে প্রার্থনা।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleতাই-Ray নাই-Ray নাই-Ray
Next articlePhilosophy of Me
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments