অনুবাদক – কৌশিক দাশ
কিছুকাল আগে একটি ছোট শহরে একটি মেয়ে একাই বাস করত। অনেকগুলি বেড়াল নিয়ে সে ভালই ছিল। সে তাদের দেখাশুনা করতো এবং খুব ভালবাসত। যদি রাস্তায় কোন বেড়ালছানা দেখতে পেত, সে তাকে তার সাথে বাড়িতে নিয়ে আসত, তাকে আশ্রয় ও খাবার দিত। সব বেড়ালদের সে খুব যত্ন করতো।
একদিন রাত্রিবেলা একটি অদভুত শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেল। যখন সে ঘুম থেকে উঠে কি হয়েছে দেখার জন্য জানলার সামনে এসে দাঁড়াল, সে দেখল যে একটি কালো বেড়াল খুব জোরে ম্যাও ম্যাও করে ডাকছে। সে কিছু না ভেবেই বাড়ির দরজাটি খুলে দিল এবং তাকে খেতে দিল। কালো বেড়ালটি তার বাড়ি থেকে আর গেল না। সে অন্য বেড়ালগুলির সাথে ওই মেয়েটির বাড়িতেই থেকে গেল।
কালো বেড়ালটি মেয়েটির খুব আদরের বেড়াল হয়ে উঠল। মেয়েটি যেখানেই যেত, সেও তার পিছু পিছু যেতো। এক মুহূর্তও তাকে ছেড়ে থাকতে পারত না।
খুব আশ্চর্যজনকভাবে অন্য বেড়ালগুলি ধীরে ধীরে তার বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে লাগল। বেড়ালগুলি একে একে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে দেখে মেয়েটির মনে খুব দুঃখ হল। তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার কারণটি সে কিছুতেই বুঝতে পারছিল না। তার সব বেড়ালগুলির মধ্যে একটি বিশেষ মিনি বেড়াল ছিল। খুব ছোট্টবেলা থেকেই মেয়েটি তার দেখাশুনো করেছে। তাই তার দিকে মেয়েটির বিশেষ নজর ছিল যাতে অন্য বেড়ালগুলির মত সেও না বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
কিছুদিনের মধ্যেই তার বাড়িতে আর দুটো মাত্র বেড়াল পরে রইল – সেই বিশেষ মিনি ও ওই কালো বেড়ালটি। কালো বেড়ালটি ছিল খুব হিংসুটে। মিনি বেড়ালটি যখনই মেয়েটির কাছে যেতো, কালো বেড়ালটি রেগে যেতো। একদিন যখন সে মিনি বেড়ালটিকে খেতে দিচ্ছিল, কালো বেড়ালটি তখন তার কাছে গেল। মেয়েটি লক্ষ করল যে কালো বেড়ালটির লোমগুলো খাঁড়া হয়ে গেছে এবং বিশ্রী ভাবে গর্জন করতে শুরু করেছে। মেয়েটি খুব ভয় পেয়ে গেল এবং মিনি বেড়ালটিকে কোলে তুলে নিতে চাইল। কিন্তু কালো বেড়ালটি ততক্ষণে মিনি বেড়ালটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মারামারি শুরু করে দিয়েছে। সে যেকোনো উপায় বেড়াল দুটিকে আলাদা করতে চাইল। যখন সে একটি ঝাঁটা হাতে নিয়ে মিনি বেড়ালটির কাছে পৌছুলো, ততক্ষণে মিনি বেড়ালটি মারা গেছে। কালো বেড়ালটি তাকে মেরে তার পাশে বসে নিজের থাবাগুলি চাটছে।
মেয়েটি তাকে ভয় দেখাল, তারপর তাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিল। কালো বেড়ালটি তখন জানলায় বসে কাঁদছিল, মেয়েটি কিছুতেই আর বাড়ির দরজা খুলল না। একদিন বিকেলবেলা মেয়েটি বাড়িতে ফিরে এসে তার বাড়ির মধ্যে কালো বেড়ালটিকে দেখতে পেল। মেয়েটি যখন আবার তাকে বাইরে ছুঁড়ে দেবার চেষ্টা করল, কালো বেড়ালটি তখন তার ঘাড়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং লম্বা লেজটি মেয়েটির গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলল।
কেউ জানতেই পারত না যে মেয়েটি মারা গেছে যদি না কালো বেড়ালটি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর তার বেড়ালগুলি আবার বাড়িতে ফিরে আসত। বেড়ালগুলি বাড়িতে ফিরে আসার পর এত জোরে জোরে ডাকতে শুরু করল যে প্রতিবেশীরা কি হয়েছে দেখার জন্য তার বাড়িতে গেল এবং গিয়ে দেখল যে বেচারি মেয়েটির নিথর মৃতদেহটি সেখানে পড়ে আছে।