অন্য জীবন : প্রথম পর্ব – Click Here
……অন্য জীবন : প্রথম পর্ব ঠেলা গাড়িতে চা বেচত কানাইদা, মানে ,কানাইলাল আর তার ভাগ্নি জাহ্নবী। কানাইদা একটা পা অ্যাক্সিডেন্টে হারায়, ক্র্যাচ নিয়ে হাটতো। কানাইদা ছিল সরকারি দাদা। ছোট থেকে বড় সকলেই তাকে দাদা বলে ডাকে। ব্যবহার ছিল খুবই অমায়িক। তার কষ্ট হতো দোকানটা একা সামলাতে। তাই তার ভাগ্নি জাহ্নবী বসতো তার সাথে। চায়ের সাথে থাকতো লুচি আর হালুয়া। হালুয়া বাড়ি থেকে তৈরি করে আনা হত। ওদের পরিস্কার বাসন-পত্র দেখে কোনো অরুচি হত না। কানাইদার বউ মরে যাওয়ার পর থেকে মদের নেশা ধরে। তার শরীর ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।
বেশিক্ষণ ক্র্যাচে দাড়িয়ে থাকতে পারত না সে। আজকাল প্রতিদিন রাতে তার জ্বর আসছিল। সাথে ছিল কাশি। তাই সে একটা প্লাসটিকের টুলে বসে থাকতো আর ক্যাশটা নিত। দোকানটা জাহ্নবী সামলাতো। যেদিন প্রথম দুজনের পরিচয় হয়, সে দিনটার কথা দুজনেরই মনে আছে। সেদিন ক্যান্টিনে ছিল খুব ভিড়। দুর্নিবারের বন্ধু অসীম বলল,
-“চল কানাইদার দোকানে চা খাব।”
ও জিজ্ঞাসা করে
-“সেটা আবার কোথায়?”
অসীম ওকে ইউনিভারসিটির বাইরে একটু দুরেই সেই ঠেলা দকানে নিয়ে আসে। এসেই বলে
-“দুজায়গায় চারটে করে লুচি আর হালুয়া দাও।”
দুর্নিবার দেখে ওদের দেখেই সেই মেয়েটি মানে জাহ্নবী হাত ধুয়ে দুটো প্লেটে লুচি আর হালুয়া দেয়। খেতে খেতেই অসীম বলে,
-“জাহ্নবী খুব ভালো করে চা বানা দেখি। ও হ্যাঁ তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। এই আমার বন্ধু দুর্নিবার সেন আর এই হল কানাইদার ভাগ্নি জাহ্নবী রায়।”
জাহ্নবী গায়ে শাড়িটা ভালো ভাবে ঢেকে ওই হাতেই নমস্কার করে। ও অবাক হয়ে যায় মেয়েটার ভদ্রতা দেখে। ওদের মতো ঘরে এইসব ভদ্রতা কেউ জানে না। মেয়েটাকে প্রথম দেখেই ওর ভালো লেগে যায়।
-“জাহ্নবী বড় পবিত্র তোমার নাম।”
মেয়েটা একটু স্মিত হাসে। মাজা রঙ, একটা এলো খোঁপা, বড় বড় দীঘল তার দুটি চোখ আর স্নিগ্ধ তার চাহনি। কিন্তু ও তো গরীব ঘরের মেয়ে। সাধারন একটা ফুল-ফুল হলদে ছাপা শাড়ী তার পরনে। ছোট্ট করে একটা কালো টিপ কপালে। বিন্দু মাত্র প্রসাধন নেই তার শরীর বা মুখে।ঢলঢলে মুখে স্নিগ্ধ সেই চাহনি দেখে দুর্নিবারের শিশিরসিক্ত শিউলি ফুলের কথাই মনে এলো। শিউলি ফুল দুর্নিবারের খুব পছন্দের। সেই প্রথম দেখা। তারপর থেকে সেটাই হয়ে গেল তার ক্যান্টিন। অসীম না এলেও সে আসবেই। জাহ্নবী যেন তাকে টানত। একদিনও সে ইউনিভেরসিটি কামাই করত না। আজকাল কানাইদা দোকানে বিশেষ আসেও না। ওই বসতো দোকানে। ওই দোকানের নিয়মিত খদ্দের ছিল কিছু ছেলে। লুচি-হালুয়াও তাই বেশিক্ষণ থাকতো না। জাহ্নবী তবুও ওর জন্য একটু বাঁচিয়ে রাখতো। একদিন দুর্নিবার বলে যে,
-“জাহ্নবী নামটা খুব বড় আমি তোমাকে জুনি বলেই ডাকব।”
মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ও বলে যেমন আপনার ভালো লাগে। দুর্নিবার বলে
-“আপনি নয় তুমি।”
ও তো কিছুতেই তুমি বলবে না। এইভাবেই ওদের সম্পর্ক তৈরি হয়। ছুটি হলে ওরা গড়ের মাঠের দিকেও ঘুরতে যেত। সেদিন দোকানটাও বন্ধ করে বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে যখন ওর সাথে ঘুরতে বেরতো তখন কারো মনেও হতো না ও কোথাকার মেয়ে।
ক্রমশঃ……