ভূত নয়,অদ -ভূত !!!!
শরৎকাল,নীল আকাশে সাদা সাদা টুকরো মেঘের ঘনঘটা;আবার কখনো পুরো আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।চারিদিকে কাঁশবন ও শিউলি ফুলের গন্ধে প্রকৃতি আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে শারদোৎসব আগত।
এমনি শরতের এক বিকেলে আমরা পাঁচবন্ধু বিদ্যালয়ের পাঠ সেরে প্রতিদিনের মতো টিউশন পড়ে বাড়ি যাব বলে ঠিক করলাম।গ্ৰামে কোনো টিউশন না থাকায় একটু দূরে শহরে যেতে হয়।গ্ৰাম থেকে টিউশন যাবার পথটি অনেকটাই নির্জন বলে ধরা যেতে পারে,কারণ রাস্তার চারিপাশে মাঠ আর মধ্যিখানে সর্বমোট চার থেকে পাঁচটি বাড়ি;আবার কিছুটা বাঁশবনও রয়েছে।বাঁশবনের মধ্যে সাধারণত পরিত্যক্ত জিনিসপত্র ফেলা হয় এবং জায়গাটা একটু অন্ধকার গোছের হওয়ায় দিনের বেলাও যেতে যেন ভয় হয়।তাই আমরা সাধারণত রাত্রিবেলা টর্চ নিয়ে ও একসঙ্গেই চলাফেরা করি।
আমরা সকলেই মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্ত্তী হয়েছি।সুতরাং সকলের মধ্যেই যেমন দুষ্টুমি,ভয়,সাহস রয়েছে তেমনি আবার নিজেদের মধ্যে ভাব-মারামারিও রয়েছে।দুষ্টুমি বলতে কেউ কেউ শিক্ষকের ব্যবহৃৎ ভগ্নপ্রায় চকটি নিয়ে বেঞ্চে কিংবা দেওয়ালে নাম লেখা কিংবা কারো চুলের ওপর চকের গুড়ো ছড়িয়ে দেওয়া আবার কাউকে ডাকনাম ধরে ব্যঙ্গ করা ইত্যাদি ইত্যাদি।এইতো সেদিন দুজন বন্ধু নিজেদের মধ্যে লড়াই করে শিক্ষকের কাছে শাস্তি পেতে ব্যর্থ হল না।
তো সেদিন টিউশন পড়তে গিয়ে আমার দুজন বন্ধু শরীর খারাপ বলে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এল।কিন্তু সেদিন পড়ার শেষে বৃষ্টি হওয়ায় বাড়ি ফিরতে একটু বেশিই রাত হয়ে গেল আমাদের তিনজনের।ফেরার সময় রাস্তায় আলো থাকলেও বাঁশবনের ভেতর দিয়ে রাস্তাটা বেশ অন্ধকার ছিল,সঙ্গে টর্চ না নেওয়ায় সেটা যেন আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে।এই দিকটায় লোকজনের চলাফেরা না থাকায় জায়গাটা বেশ নির্জন আর এমনিতেই রাত হয়ে গেছে তাই লোকজন আরও নেই।
তাই এই কর্দমাক্ত বাঁশবনের ভেতর দিয়ে যেতে তিনজনেরই ভয় ভয় লাগছে।তাঁর মধ্যে আবার শেঁয়ালের ডাক সেটা যেন আরও ভীত করে তুলেছে।কিন্তু অগত্যা যেতেই হবে।তাই ভয়ে ভয়ে বাঁশবনের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় দেখলাম যে একটা কাঁকতাড়ুয়া যেন আমাদেরই দিকে ধেয়ে আসছে বিকট ও ভয়ঙ্কর আওয়াজ করতে করতে।প্রথমটায় প্রচন্ড ভয় পেয়ে তিনজনেই চারিদিকে ছুটে পালিয়ে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর স্থির হয়ে তিনজনেই বনে পড়ে থাকা লাঠি নিয়ে ছুটে গেলাম কাঁকতাড়ুয়াটির দিকে;যেমনি লাঠি দিয়ে তাঁকে আঘাত করব এমন সময়,কাঁকতাড়ুয়াটি ওরে বাপরে!বলে চিৎকার করে ছুটতে লাগল।চিৎকারটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগল সবারই।সকলের বুঝতে আর অসুবিধাই হল না,এই কাজটি আসলে আমাদের দলেরই একজনের।তাঁকে চেপে ধরতে আরেকজনও বেরিয়ে এল।আসলে তাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল,তাই তাঁরা টিউশন থেকে আগে বেরিয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্ৰী যোগার করছিল।যদিও তারা শাস্তিস্বরূপ আমাদের থেকে কিছুদিন দূরে ছিল।
এইভাবেই কেটে গেল বিদ্যালয় জীবন।সবাই এখন নিজের কাজে ব্যস্ত,যোগাযোগ বলতে ওই পূজোর সময়টাতেই।তবে সবাই যখন একসঙ্গে দেখা করি সেই দিনটার কথা মনে পড়ে যায় সকলেরই আর স্মৃতিস্বরূপ কারো না কারো মুখ থেকে বেরিয়ে যায় সেটা যেন ভূত নয়,অদ-ভূত!!
Kid’s Story
Subscribe
Login
0 Comments
Oldest