খুব ক্লান্ত লাগছে মায়ার । রোজকার রোহনের সঙ্গে এই ঝগড়া আর ভালো লাগছে না। আজ মায়া এসেছিল রোহনকে একটি কথা বলতে, যার জন্যে কিছুদিন ধরে মানসিক কষ্টে ভুগছিল সে। কিন্তু বলা হলো না। যে রোহনের সঙ্গে সুদীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সম্পর্কে আছে মায়া তাকেই এই কথাটি বলতে ইচ্ছে হলো না মায়ার । রোহনের বকাবকি কান না দিয়ে পার্কের বাইরে চলে গেল সে। রোহন বোকার মতো তাকিয়ে রইল।
আজ ঈশানের কথা খুব মনে পড়ে মায়ার । ঈশান কাছে থাকলে হয়তো ওর মনটা এত খারাপ হতো না। ঈশানের সঙ্গে বেশি দিনের বন্ধুত্ব নয় মায়ার তবুও ঈশানের সঙ্গে সময় কাটাতে ওর খুব ভালো লাগে, যদিও মায়া জানে ঈশান একাধিক সম্পর্কে জড়িত।
বাড়ি গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ ঘুমোতে চেষ্টা করলো মায়া কিন্তু পারলো না। অবশেষে ঈশানকে ফোন করলো । মায়ার মনের অবস্থা বুঝে ঈশান মায়াকে ওর বাড়ি যেতে বলল।
সন্ধ্যায় মনের কোনে অজানা একটা আশা নিয়ে ঈশানের দরজার বেল বাজালো মায়া। দরজা খুলতেই ঈশানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল সে। ঈশান ওকে হাত ধরে ঘরে এনে বসিয়ে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে? মায়ার কথা আসে না মুখে , চোখ বেয়ে জল পড়ে শুধু।ঈশান গালে ধরে কপালে চুমু খায় ,মায়াও ঈশানকে কাছে পেয়ে অনেকটা শান্তি অনুভব করে, যেমন এক ঘরহারা আশ্রয় খুঁজে পেলে করে।
সেরাতে ঈশানকে ছেড়ে, সেই সুখের ঠিকানা ছেড়ে বাড়ি ফিরতে পারলো না মায়া। ঈশান ডিনার বানালো, মায়া তাকিয়ে রইল । ডিনার করে জানলার কাছে চাঁদের আলোয় মায়ার মুখটা অপূর্ব লাগছিল। ঈশান নিজেকে আটকাতে পারলো না। মায়াও বাধা দিল না, তারও ভালো লাগছিল ঈশানের স্পর্শ। দুজনই হারিয়ে গেল দুজনের মাঝে। সেরাতে রোহনের মুখটা একবার মনে আসল না মায়ার, একটি বার সাইলেন্ট হয়ে থাকা ফোনটা দেখল না যেখানে রোহনের বিশটি ফোন এসেছে।
সকালে ঘুম ভাঙতেই ঈশানের মুখটা দেখতে পেল মায়া। মনে মনে শিউরে উঠল। একি করল সে! আবেগের বসে এমন একটি কাজ করে ফেলেছে। ঈশানকে না ডেকেই ছুটে বাইরে চলে আসে মায়া । রোহনের কথা মনে পরে যায়। রোহন যে উপহার পাওয়ার জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে সে উপহার আর তার পাওয়া হবে না। কি জবাব দেবে মায়া রোহনকে? এসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা দেখল সে, তখনও রোহনের ফোন আসছিল।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উত্তেজিত স্বর শোনা গেল- মায়া তুমি কোথায়? তুমি ঠিক আছো তো। আমি আর কখনো ঝগড়া করবো না। ভালো হয়ে থাকবো। আমাকে ছেড়ে তুমি কোথাও যাবে না কিন্তু। মায়ার বুক চিড়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এল। শুধু এটুকুই বলতে পারলো- সরি, আর কখনো এমন হবে না।