মনটা বড়ই এলোমেলো লাগে না কিছুই ভালো,

আজকে যেন নিভেই গেছে এই জীবনের আলো।

হাতড়িয়ে তাই বেড়ায় স্মৃতি দূরের সকালে,

মা ঠাকুমা জেঠী কাকী ব্যস্ত পাকশালে।

উনানের ধোঁয়ার চোটে সারা বাড়ীটাই মাত,

ভোর থেকেই রান্না শুরু সাড়ে সাতটায় ভাত।

বাবা জেঠু কাকু সবার অফিস যাওয়ার তাড়া,

তার মধ্যেই চায়ের কাপে চুমুক দিতেন তাঁরা।

ঘুম থেকে তুলে এবার মোদের ভাইবোনে,

দাঁত মাজিয়ে পাঠিয়ে দিতেন কলতলায় স্নানে।

তারপর খাওয়াদাওয়া আর পোশাক যেমনতরো ,

টিনের বাক্সে বইখাতাপাঠশালা পথ ধরো।

পাঠশালার জন্য নয় পোশাক ধরাবাঁধা,

হেঁটে হেঁটেই যাওয়া আসা জীবন সাদাসিধা।

থাকত না সাথে কোনোই বাক্স ভরা খাবার,

কেক প্যাস্ট্রির নাম বোধহয় জানা ছিলনা সবার।

দুপুর বেলায় ফিরে এসে আবার ভাত খাওয়া,

তারপর মা ঠাকুমা জেঠীর কাছে শোওয়া।

বিকেলবেলায় খেলতে যাওয়া বন্ধুদের সাথে,

ফুটবল কি ক্রিকেট নয়ত গাদী খেলায় মেতে।

ক্লান্ত হয়ে অবশেষে সাঁঝের আগেই ফেরা,

হাত পা ধুয়ে তারপরেই শুরু লেখাপড়া।

চক্ষু দুটি ঢুলুঢুলু ঘুমের কড়া নাড়া,

ভাইবোন সব একসাথে গলার জোরে পড়া।

কারো হাতে ভূগোল বই কেউ বা ইতিহাস,

ইংরাজী আর বিজ্ঞানেতে বিষম হাঁসফাস।

কিন্তু সবথেকে শক্ত ছিল ওই বাংলা ব্যকরণ,

কোনটা কারক কোনটা সমাস সবই বিষ্মরণ।

কিন্তু পড়তে হবে জোরে জোরে থামলেই যে সন্দ,

মা কাকীমা রান্নাঘরেআওয়াজ কেন বন্ধ !

আর আজকে সবাই মনে মনেই করে পড়াশুনা,

কি পড়ছে, কে পড়ছে বুঝতে সবই মানা।

রবিবার অঙ্কবারবাবা কাকার ছুটি,

অবশ্যই ফাউটি সাথেবেজায় কান্নাকাটি।

মাঝে মাঝেই হুহুঙ্কারপড়াশুনার এই হাল !

বুঝবে সবই একদিন কত ধানে কত চাল !

রিক্সা টেনে খেতে হবে কিম্বা কুলীগিরি,

কিন্তু কখ্খনো ভাবিনি হায় আত্মহত্যা করি।

দুপুরবেলা পাঁঠার মাংস কি যে তার স্বাদ,

রেঁস্তোরা নামটি ছিল জীবন থেকে বাদ।

রবিবার বিকাল বেলা ছিল সবার ছুটি,

মামার বাড়ি, মাসীর বাড়ি কেবল হুটোপাটি।

শীতকালে সার্কাস আর চিড়িয়াখানা ঘোরা,

ভবতারিণী মায়ের কাছে যাওয়াও বাঁধাধরা।

মোবাইল তখন কোথায় ফোনই ছিল বিরল,

জেঠু যখন কিনল টিভি পাড়ায় সোরগোল।

ক্রিকেট কিম্বা ফুটবলে মোদের বাড়িই মাঠ,

পাড়ার সবার হৈচৈতে বসতো খুশীর হাট।

অনুষ্ঠান চলার সময় হঠাৎ হঠাৎ বন্ধ,

কেমন যেন কেটে যেতো দেখাশোনার ছন্দ।

রুকাবট কে লিয়ে খেদ”-এমনতরো লেখা,

তখন থেকেই কথাগুলি হল সবার শেখা।

সন্ধ্যা হলেই লোডশেডিংলণ্ঠনের আলো

বিকেল হতেই সবকিছু তৈরী করে ফ্যালো।

মা জেঠিমার ব্যস্ততা তখন ছিল তুঙ্গে,

ইনভার্টার নামটি তখন কে শুনেছে বঙ্গে !

গরমকালে সবাই মিলে চলে যেতেম ছাদে,

বিজলী দেবী ফিরে এলেই চিৎকার আহ্লাদে।

মাঝে মাঝে জ্বর কাশি মিক্সচারেতেই হাওয়া,

ডাক্তারকাকার আবির্ভাবে বেশই মজা পাওয়া।

পড়াশুনায় ছেদ কদিন স্কুলের পথও বন্ধ,

জ্বর গায়েও ছিল কেমন ছুটি ছুটির গন্ধ।

পেট,পিঠ, জিভ দেখেই ওষুধ হত নিদান,

পরীক্ষা কি নিরীক্ষার ছিলনা অভিধান।

এখন ডাক্তারবাবুর বাড়ী আসাই মানা,

কিছু হলেই শরীর থেকে তাজা রক্ত টানা।

এখন বড়ই জটিল বন্ধু নব্যযুগের জীবন,

সেই সাথে অশান্ত হায় মোদের সবার মন।

তখন হয়ত দেনা পাওনায় ছিল অনেক ফারাক,

কিন্তু তখন শান্তি ছিল আর কিছু না থাক।

আজকে হয়তো মোদের হাতের মুঠোয় সারা বিশ্ব,

কিন্তু সুখের বাসার চাবিটিকে হারিয়ে মোরা নি:স্ব।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleনিয়ে চলো
Next articleব্লাকবোর্ড
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments