ভোলানাথ জটাধারী তাঁহারে আজিও নারী
আরাধনা করে অনুরাগে,
আধুনিকা নন্দিনী হৃদিমূলে শিন্জিনী
শিবকেই পতিরূপে মাগে।
স্বভাবে বৈপরীত্য তথাপি তন্বীচিত্ত
শিবরাত্রি তিথি করে মান্য,
বর্ণনা করি এবে শাশ্বত মাহাত্ম্য সবে
ভক্তকুল হও আজি ধন্য।
পুণ্যধাম বারাণসী সেথা এক অধিবাসী
পেশায় কিরাত সে নিষ্ঠুর,
গাত্র ছিল কৃষ্ণবর্ণ হিংসায় চক্ষু দীর্ণ
সাতিশয় ধূর্ত তথা ক্রুর।
পিঙ্গলবর্ণ কেশ পরণে রক্তিম বেশ
ভয়ংকর ব্যাপ্ত অবয়ব,
শ্রবণি কিরাত নাদ প্রাণীকুল গণে প্রমাদ
অরণ্যে ত্রাহি ত্রাহি রব।
একদিন সেই ব্যাধ মিটাইয়া মনোসাধ
পশুমেধ যজ্ঞে দেয় আহূতি,
রওয়ানা হইল সুখে নিজ গৃহ অভিমুখে
পথিমধ্যে গ্রাস করে শ্রান্তি।
বৃক্ষতলে শয়নে নিদ্রাদেবী আবাহনে
বীত হয় বেশ কিছু দণ্ড,
সূর্যদেব অস্তাচলে কি আছে কিরাত ভালে
হায় বুঝি সব শ্রম পণ্ড।
পশুর হুহুঙ্কারে ব্যাধ নিদ্রা ভঙ্গ করে
আস্ফালনে নিস্ফল মুষ্টি,
ভয়াবহ তামস সাজে গহীন অরণ্য মাঝে
কিছুই হয় না বুঝি দৃষ্টি।
বিল্ববৃক্ষে আশ্রয় ক্ষুধা আর তৃষ্ণায়
দেহখানি হায় অবসন্ন,
হিমসিক্ত কলেবর সমগ্র রাতিভোর
অনাহারে অনিদ্রায় ক্লিন্ন।
দৈবক্রমে বৃক্ষমূলে বিল্ব বিটপ তলে
ছিল শিব নীলকণ্ঠের চিহ্ণ,
সেই পূত প্রতীক পরে দেহস্নাত হিম ঝরে
তদুপরি বিল্বপত্র অনন্য।
তিথি শিব চতুর্দশী অহোরাত্র উপবাসী
কিরাতের হইল পুণ্যলাভ,
সন্তুষ্ট পিণাকপাণি লভি বিল্বপত্রখানি
খণ্ডন হইল যত পাপ।
আপন অজ্ঞাতে ব্যাধ লভে সে পুণ্যের স্বাদ
পরদিন ঊজ্জ্বল প্রাতে,
ফিরে যবে নিজ গেহে জ্যোতির্ময় শুভ্র দেহে
পরিজন আনন্দে মাতে।
কিরাতের জীবনযাত্রা তাহাতে নূতন মাত্রা
কৈলাসপতির কৃপাধন্য,
হইল সে নরপতি তাহার জীবনে জ্যোতি
লভিল সে অসীম পুণ্য।
অবশেষে জীবনান্ত কালকেতু চিরশান্ত
যমরাজ্যে আনন্দ সঞ্চার,
শমনের সমন লাভে হর্ষে নৃত্য করে সবে
নরকবাস নিশ্চিত তাহার।
যমদূত দলে দলে উদ্যত ছলে বলে
যমপাশে বাঁধিতে ব্যাধ–আত্মা,
এদিকে শিবের দূতী যমদূতে নাহি প্রীতি
কহে–ব্যাধ ছিল পুণ্যসত্তা।
সংঘাত অনিবার্য শিবদূতীর শৌর্য
ধ্বস্ত করে যমদূতে দুষ্ট,
কিরাত আত্মাটিকে বহনে শৈবলোকে
ধর্মরাজ হইলেন রুষ্ট।
শিবলোক পুরদ্বারে জিজ্ঞাসেন ক্রোধভরে
স্বয়ং ধর্মরাজ শমন,
পাপাচারী ক্রুর ব্যাধ আত্মার অপুণ্য স্বাদ
তথাপি কৈলাসে আগমন !
কহিলেন নন্দী দেবে আপনি সঠিক তবে,
হইত সে নরকের যাত্রী,
কিন্তু সেই পাপী ব্যাধ পুণ্য তাহারি অবাধ
যবে হইতে করে শিবরাত্রি।
শিবচতুর্দশী তিথি পালনি সকল রীতি,
হইয়াছে সে পাপমুক্ত,
আশুতোষ কৃপা হেতু শিবলোকে কালকেতু
কিরাত আত্মা যে হরভক্ত।।
শ্রবণি নন্দীর বাক্য ধর্মরাজের লক্ষ্য
হইল না কোনমতে পূরণ,
রুদ্রে প্রণাম করি ফিরিলেন যমপুরী
জয়স্তু শিব ত্রিনয়ন।
চতুর্দশী শিবতিথি মর্ত্যবাসী হয় ব্রতী
ভক্তিভরে করে আরাধন,
হরগৌরী পরিণয় অখিল আনন্দময়
দেবকথা করি সমাপন।