প্রথম দৃশ্য
(মঞ্চের মাঝখানে পুরোনো দিনের ঢাউস একখানা চেয়ার বা সোফা। সেখানে বসে দশরথ খবরের কাগজ পড়ছেন। ভদ্রলোকের বয়েস বাহান্ন/তিপ্পান্ন হবে। মাথায় কাঁচা পাকা চুল, পরণে ঘরোয়া ধুতি ও হাফহাতা পাঞ্জাবি/ফতুয়া, চোখে চশমা, পায়ে হাওয়াই চপ্পল। তাঁর চেয়ারের পাশে অবস্থিত ছোট টেবিলে রাখা চায়ের কাপ। মাঝে মাঝে তিনি চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। মঞ্চে প্রবেশ করছেন তাঁর স্ত্রী এলোকেশী। মহিলার বয়েস মধ্যচল্লিশের একটু বেশিই হবে। সাজপোশাক ও মুখের চড়া মেকআপ তাঁর আধুনিকা হবার প্রবল প্রচেষ্টাকে তুলে ধরছে।)
এলোকেশী : বলি হ্যাঁ গা, তোমার কি আক্কেল বলে কিছু নেই? সেই কবে থেকে বলছি, চলো, কলকাতায় আমার বোনের বাড়ি থেকে একটু বেরিয়ে আসি, তা এর আর মোটে নড়বার নাম নেই! বলি আমারও তো প্রাণে শখ আহ্লাদ বলে কিছু আছে, না কি? বিয়ে হয়ে এসে অবধি তো শুধু তোমাদের সংসারের হাঁড়িই ঠেলে চলেছি। বলি কানে ঢুকছে কিছু? Hear you?
দশরথ : হ্যাঁ, তা ঢুকছে বৈকি। Hear না করে আর উপায় আছে? Bear যখন আমাকেই করতে হয়। ফাটা কাঁসর কানের কাছে দিনরাত ক্যানক্যান করে বেজেই চলেছে। শান্তিতে কোথাও গিয়ে একটু বসবার যো নেই। আচ্ছা, কলকাতায় গিয়ে হবেটা কি শুনি? সেখানে গিয়ে কি তোমার দুটো ড্যানা গজাবে যে কলকাতায় যাবার জন্য ধেই ধেই করছো? যতসব চোর ছ্যাঁচড় আর নেশাখোরদের জায়গা! কোনো ভদ্দরলোক শখ করে কলকাতায় যায়?
এলোকেশী : হ্যাঁ! তোমায় বলেছে! কলকাতায় ভদ্দরলোক থাকে না, সব ছোটলোকরা বাস করে! নাও, নাও, বাজে কথা না বলে যা বলছি তাই করো। What say I, do you. Understand you?
দশরথ : হ্যাঁ হ্যাঁ, very much understand. এখন যাও দিকি।
এলোকেশী : বাড়িখানার চেহারা দেখো না! ঠিক যেন মান্ধাতার আমলের সরাইখানা। সারাদিন এই ঝরঝরে বাড়িটার মধ্যে বসে থাকবে আর বুড়ো হাবড়া বন্ধুদের সঙ্গে বস্তাপচা পুরোনো দিনের গপ্প করবে। এসবের মধ্যে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। I so tired!
দশরথ : কেন, পুরোনো জিনিস কি খারাপ? এই তো, তুমি আমার পুরনো বউ, তোমায় আমি কতো ভালোবাসি!
এলোকেশী : What say you? আমি পুরোনো? I old? মোটেই না! You old, I not old! বুড়ো ভাম! আমার সঙ্গে joke? বলি সতেরো আর সতেরোয় কত হয় শুনি? Tell, tell?
দশরথ : হুঁ, দেখা যাক। সতেরোর সঙ্গে সতেরো যোগ করলে হয়, সাতচল্লিশ! কি, ঠিক কিনা?
এলোকেশী : মিথ্যে কথা! আমার পুলু যখন জন্মেছিল তখন আমার বয়স এই, মেরেকেটে সতেরো। আর পুলুর বয়েসও এখন ওই সতেরো। তাহলে আমার বয়সটা কত দাঁড়ালো শুনি?
দশরথ : কি বললে? পুলুর বয়েস কুড়ি? সে তো কুড়ি বছর আগে ছিল!! হা হা হা!
এলোকেশী : হ্যাঁ! বলবেই তো! আমার ছেলেটাকে তুমি মোটে সহ্য করতে পারো না। তাই ওর নামে যত উল্টোপাল্টা কথা বলছো।
দশরথ : পাগল! তোমার গুণধর ছেলেকে নিয়ে কারো কিছু বলার সাহস আছে? কার ঘাড়ে কটা মাথা? আমার তো বাপু একটাই। আর সেটা আমি অকালে হারাতে মোটেই রাজি নই। অতএব আমি স্পিকটি নট!
এলোকেশী : বুঝি বুঝি, সবই বুঝি। আমার অসহায় রুগ্ন ছেলেটাকে তোমরা কেউ দু চক্ষে দেখতে পারো না। দাঁড়াও না, আগে ওর স্বাস্থ্যটা একটু ভালো হয়ে যাক, তারপর আমার কাছ থেকে ইংরিজিটা একটু শিখে নিলেই…
দশরথ : কি? কি বললে? তোমার ছেলে তার নেশাভাঙ, তাসপাশা, ঘুড়িলাটাই ছেড়ে ইংরিজি শিখবে? তাও কিনা আবার তোমার কাছে? তবেই হয়েছে! ওই যে, এলেন বাবু!
(মঞ্চে পুলকের প্রবেশ। বয়েস সাতাশ/আঠাশ হবে। কাঁধ ছাপানো লম্বা চুলে পনিটেইল করা। পরণে রঙিন স্লিভলেস টি শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট। বাহুতে ট্যাটু, এক কানে দুল, পায়ে বুট, চোখে রঙিন সানগ্লাস।)
পুলক : (উচ্চৈঃস্বরে গান গাইতে গাইতে) ট্রা লা লা লা লা
এলোকেশী : আয় আয় পুলু! আমার সোনা, my darling son! আমার কাছে বোস। কিছু খাবি? Here you sit, then you eat.
পুলক : এখন বসা ফসার সময় নেই মা। বেরুতে হবে।
এলোকেশী : সেকি! এই ভরসন্ধ্যেবেলা আবার কোথায় বেরোবি? ইস, বাছার আমার মুখচোখ বসে গেছে গো!
পুলক : ন্যাকামি কোরো না তো মা! আমি খুব ভালো আচি। এখন ও পাড়ার ঘনাদার বাড়ি তাস খেলতে যাচ্ছি।
এলোকেশী : কি? ওই ঘনা মণ্ডল? That nasty man? ব্যাটা নেশাভাঙ করে, জুয়া খেলে! খবরদার তুমি ওখানে যাবে না। You not go!
পুলক : এই বাওয়াল কোরো না তো মাইরি! সরো সরো, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
এলোকেশী : আমি বলছি তুমি যাবেনা পুলু। আমি কিছুতেই যেতে দেবো না।
পুলক : আরে ধুর! এই আমি যাচ্ছি। দেকি তুমি কি করে আটকাও।
এলোকেশী : চলে গেলো! আমাকে পাত্তাই দিলো না!
দশরথ : আহা হা, রাগ করছো কেন? তোমার অসহায়, রুগ্ন সুপুত্তুর নাহয় একটু জুয়া খেলতে গেল! হা হা হা…কে ওখানে? ও লবঙ্গ! আয় মা। এত সেজেগুজে যাচ্ছিস কোথায়?
(লবঙ্গলতার প্রবেশ। বয়েস চব্বিশ/পঁচিশ হবে। সুন্দরী ও আধুনিকা। পরণে হালফ্যাশনের চুড়িদার কামিজ ও জাঙ্ক জুয়েলারী, পায়ে হাই হিল জুতো, মুখে মানানসই মেকআপ।)
লবঙ্গ : কমলার জন্মদিনে যাচ্ছি বাপি। কাকিমা বারবার করে যেতে বলেছেন। আমার সঙ্গে দামিনীও যাবে।
এলোকেশী : ফিরতে বেশি দেরি করিস না যেন। আজ সন্ধ্যেবেলা একটা ছেলে তোকে দেখতে আসছে।
লবঙ্গ : কই, এ বিষয়ে তোমরা আগে আমায় কিছু বলোনি তো?
দশরথ : আরে বলবো কি করে? কাল রাতেই তো সব ঠিক হলো। আমার ছোটবেলার বন্ধু চরণদাস ফোন করেছিল। তারই ছেলে মদন। যদিও আমার সঙ্গে চাক্ষুষ আলাপ নেই, কিন্তু শুনেছি মদন খুব ভালো ছেলে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে এমবিএ করেছে। এখন নামকরা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে উঁচু পোস্টে চাকরি করে। দেখতে শুনতেও ভালো।
এলোকেশী : তার ওপর কলকাতা শহরে নিজেদের বাড়ি গাড়ি…very rich!
দশরথ : চরণ নিজেও কাল দুপুরে আসছে। তোরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলার পর যদি আপত্তি না করিস তাহলে একেবারে আশীর্বাদটা সেরেই যাবে। আচ্ছা, আর দেরি করিস না মা, তোরা চট করে ঘুরে আয়। ততক্ষণ আমি দিগম্বরটাকে একটু শহুরে আদবকায়দা শেখাই। যা গেঁয়ো ভূত! কি করতে কি করে বসবে।
লবঙ্গ : আমি আসছি বাপি।
দশরথ : আয় মা। দুগ্গা দুগ্গা।
Scene 2
(মঞ্চে প্রবেশ করছে লবঙ্গলতা আর দামিনী। দামিনী লবঙ্গলতারই বয়সী, তার মতোই সুন্দরী ও আধুনিকা। পোশাকআশাকও একই রকম।)
লবঙ্গ : খবর শুনেছিস দামিনী? আজ কলকাতা থেকে কোন এক মদনকুমার আমায় দেখতে আসছেন।
দামিনী : কি নাম বললি? মদন? মদন রায় কি?
লবঙ্গ : হ্যাঁ। বাপির বন্ধু চরণকাকুর ছেলে।
দামিনী : ছেলেটাকে চিনি মনে হচ্ছে।
লবঙ্গ : তাই নাকি? তুই চিনলি কি করে?
দামিনী : ঠিক চিনি না। আমার boyfriend নারায়ণের কাছে নাম শুনেছি। দুজন খুব বন্ধু।
লবঙ্গ : কেমন ছেলে রে? চলবে?
দামিনী : হ্যাঁ, তা চালিয়ে নিলেই চলবে। তবে কিনা ইয়ে, মানে…
লবঙ্গ : কি?
দামিনী : নারায়ণ একদিন বলছিল যে মদন নাকি একটু…ইয়ে, মানে, একটু ঝি-বাজ আছে।
লবঙ্গ : ঝি-বাজ? মানে ঝিয়েদের সঙ্গে প্রেম করে? এমা, ইশ!
দামিনী : না, মানে ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। আসলে মদন নাকি ভদ্রঘরের শিক্ষিতা, সুন্দরী মেয়েদের সামনে ভীষণ নার্ভাস হয়ে যায়, ভালো করে কথাই বলতে পারে না। কিন্তু ঝি চাকরানী শ্রেণীর মেয়েদের সঙ্গে বেশ ফস্টি নস্টি মারতে পারে।
লবঙ্গ : চরণকাকু জানে?
দামিনী : না জানাটাই স্বাভাবিক।
লবঙ্গ : হুঁ, বুঝলাম।
দামিনী : কি বুঝলি?
লবঙ্গ : এটাই যে তোদের মদনকুমার একটি লুজ ক্যারেক্টার।
দামিনী : তুই কি রে? ছেলেটাকে না দেখেই একেবারে charecterless বানিয়ে দিলি?
লবঙ্গ : আচ্ছা, তাহলে দেখার পরই নাহয় judgement দেবো। যাকগে, তোর কথা বল। তোর আর পুলুদার বিয়ের ব্যাপারে মা কদ্দুর এগোলো?
দামিনী : আর বলিস না! মামী পারেও বটে! ভাগ্যিস পুলুদা আমায় সহ্য করতে পারে না।
লবঙ্গ : মা স্রেফ তোর গয়নাগুলো হাত করতে চায়। তুই অন্য কাউকে বিয়ে করলে অতগুলো গয়না হাতছাড়া হয়ে যাবে না? তাই পুলুদার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ওগুলো নিজের কাছেই রাখতে চায়। তাই ভাবছি, তোর আর নারায়ণের ব্যাপারটা জানাজানি হলে মা তুড়িলাফ খাবে। You marry Narayan, Mother very angry! হি হি…
দামিনী : এই চুপ চুপ! মামী শুনতে পাবে যে! চল আর দেরি করিস না। মামা তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছে।
লবঙ্গ : হ্যাঁ চল।
Scene 3
(পুলক ও তারই মতো কয়েকটি ছেলে মাটিতে মাদুর/শতরঞ্চি পেতে বসে তাস খেলছে। সবার হাতে/ঠোঁটে সিগারেট।)
পুলক : এটা কেমন হোলো বে? এট্টু আগেই তো পানের গোলামটা ফেলে দিলি। এখন আবার পানের বিবিটা গপ করে খেয়ে নিলি। বলি মতলবখানা কি?
প্রথম বন্ধু : চুপচাপ খেল না বে! খেলার সময় কতা বললে কনসেনটেসন নষ্ট হয় না?
পুলক : তুই মাইরি আমার মায়ের মতো ইংরিজি বললি।
দ্বিতীয় বন্ধু : তোর মা খুব ইনজিরি বলে বুজি?
পুলক : ও বাবা! কতায় কতায় ভুলভাল ইংরিজি বলা চাই। এই তো এট্টু আগেই বলছিল, here you sit, then you eat. হি হি হি
প্রথম বন্ধু : হি হি হি…এই পুলু, কতাটার মানে কি রে?
পুলক : ওই তো, ‘here’ মানে হলো গে’ শোনা। আর ‘you’ মানে ওই যে, U for ছাতা, সেই ছাতা। আর ‘sit’ মানে হোলো গে’, গায়ে দেওয়ার চাদর। আর ‘দে’ মানে দিনের বেলা। ‘নিউ’ মানে নতুন আর ‘ইট’ মানে ওইটা, মানে একটা লোক। তার মানে, ছাতা মাথায় একটা লোক গায়ে নতুন চাদর দে’ কিচু শুনচে, বুঝলি গাধার দল? ইংরিজিটা দেখছি কিসুই জানিস না!
(দরজা ধাক্কার শব্দ)
পুলক : দেখ তো কে এলো?
প্রথম বন্ধু : এই পুলু, দুটো ছোঁড়া তোদের বাড়ি খুঁজছে। বলছে কলকেতা থেকে এয়েছে।
পুলক : কলকাতা? মনে হচ্ছে এদের কথাই মা বলছিল। ছোঁড়াদুটো নির্ঘাত লবঙ্গকে দেখতে এসেচে।
প্রথম বন্ধু : ওদের এখেনে নিয়ে আসবো?
পুলক : নিয়ে আয়। বুইলি পটলা, বাপটা শালা বহুদিন ধরে জ্বালাচ্ছে। আজ সুযোগ পেইচি। ব্যাটা বুড়ো এবার হাড়ে হাড়ে বুঝবে আমার পেছনে লাগার ফল।
দ্বিতীয় বন্ধু : ওই যে, ছোঁড়াগুলো আসচে। কি ডেরেস মেরেছে দেখেছো? গুরু, দুটোকে ধরে পেঁদিয়ে দিই?
পুলক : তুই থামবি? চুপচাপ শুধু খেলটা দেখে যা।
(মদন ও নারায়ণের প্রবেশ। দুজন পুলকেরই সমবয়সী হবে। পরণে হালকা রঙের টি শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট। পায়ে বুট। দুজনেই সুপুরুষ।)
মদন : উফ, কি জঘন্য জায়গা রে বাবা! একটা বাড়ি অবধি খুঁজে পাওয়া যায় না!
পুলক : আপনাদের নতুন মনে হচ্ছে? কোথ্থেকে আসচেন?
নারায়ণ : আমরা কলকাতা থেকে আসছি ভাই। দশরথ দত্তর বাড়িটা কোথায় বলতে পারেন?
পুলক : সে তো অনেক দূর। আপনারা তো ভুল রাস্তায় এয়েচেন।
মদন : জানি জানি। সেই জন্যই তো এত হয়রানি।
পুলক : দশরথ বুড়োকে আবার চিনবো না? মালটা যেমন খিটখিটে তেমন বদমেজাজি। ওর মেয়েটাও তেমনি। কেলেকুচ্ছিত, বাচাল। বউটা দজ্জাল। ছেলেটা অবশ্য খুব ভালো। ভদ্র সভ্য, লেখাপড়া জানে। সবাই পছন্দ করে।
নারায়ণ : কি বলছো ভাই? আমরা তো জানি মেয়েটাই শিক্ষিতা সুন্দরী। ছেলেটা একেবারে বখা, অকর্মার ধাড়ি। মায়ের আদরে আদরে গোল্লায় গেছে।
পুলক : (গলা খাকরানি দিয়ে) ইয়ে, বাজে কথায় কাজ কি? আজ রাতে সে বাড়িতে পৌঁছতে পারবেন না। রাস্তা খুব খারাপ।
মদন : তাহলে এখন উপায়? কোথাও তো রাতটা কাটাতে হবে।
পুলক : আজ রাত্তিরটা বরং সামনের ওই সরাইখানায় কাটিয়ে দিন। কাল সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে পড়বেন।
মদন : আর তো কোনো উপায়ও দেখি না।
পুলক : ও হ্যাঁ, একটা ব্যাপারে একটু সাবধান করে দিই। ওই বুড়ো সরাইওলাটা কিন্তু বড্ড গায়ে পড়া। কই রে পঞ্চা, বল না!
প্রথম বন্ধু : ভীষণ ঢপবাজ! বলে কিনা, ওর ঠাকুদ্দা নাকি বিলেতে পড়তে গেছিল, ওর মা নাকি কোন জমিদারবাড়ির মেয়ে ছিল, এই সব ভাট বকে আর কি।
দ্বিতীয় বন্ধু : বুড়োটা এট্টু বাতেলাবাজ হলেও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা কিন্তু ভালোই। সে ব্যাপারে আপনাদের কোনো অসুবিধে হবে না।
নারায়ণ : তাতেই হবে। একটা রাতের তো ব্যাপার। ও ঠিক ম্যানেজ হয়ে যাবে। চলি ভাই, অনেক ধন্যবাদ। চল রে মদনা।
প্রথম বন্ধু : গুরু তোমার জবাব নেই! নিজেদের বাড়িটাকে দিব্বি সরাইখানা বলে চালিয়ে দিলে! পায়ের ধুলো দাও!
দ্বিতীয় বন্ধু : শুধু তাই? তোমার খিটকেল বাপটাকেও সরাইওলা বলে চালিয়ে দিলে? তুমি সত্যি ওস্তাদ!
পুলক – আঃ! খেলখানা যা জমবে না! চ দেখি, ঘনাব্যাটার বাড়িতে তাড়ির ঠেক বসেচে। একবার ঢুঁ মারতে হচ্ছে।
Scene 4
(দশরথ ও তার ভৃত্য দিগম্বরের প্রবেশ। দিগম্বরের বয়েস প্রায় চল্লিশ। মাথায় কাঁচাপাকা চুল, পরণে খাটো করে পরা ধুতি আর ফতুয়া, খালি পা।)
দশরথ : হ্যাঁ রে দিগে, যা যা শিখিয়ে দিইছি সব মনে আছে তো?
দিগম্বর : হ্যাঁ হ্যাঁ বাবু। ও আপনি কিচ্ছু ভাববেন নি কো।
দশরথ : শোন, কলকাতার বাবুদের ভালো করে যত্ন আত্তি করতে হবে, বুঝলি? তারা যখন খেতে বসবে, তখন গিন্নিমার সঙ্গে তুইও তাদের খাওয়ার তদারকি করবি।
দিগম্বর : সে আর বলতি হবেনি। তাঁরা যদি খেতি না চান তো জোর করি তাঁদের খাওয়াবো। বলবো, খান বাবুরা, বেশ ভালো কইরা প্যাট ভইরা খান। এমন আন্না তো কলকেতায় পাবেননি। সেথায় সব জিনিসে ভ্যাজাল! তাই এই বেলা যত পারেন খেইয়ে নেন। নইলে পরে আপসোস করতি হবে।
দশরথ : উফ দিগে! বলেছি না, বেশি কথা বলবি না, শুধু চুপচাপ শুনে যাবি। হাসির কথায় বেশি হাসবি না, খেতে দেবার সময় নিজে খাওয়ার কথা ভাববি না।
দিগম্বর : ই কেমনতরো কতা বাবু? কতার পিটে কতা কবুনি, হাসির কতা শোনলি হাসবুনি, পরকে খাবার দোবো কিন্তু নিজে খাবুনি, তাই কি হয়, না হতি পারে? না না বাবু, ও আমি পারবুনি।
দশরথ : ওরে হতভাগা! তোকে পেটে পেটে এত! দিনরাত তোর গিন্নিমার মুখে মুখে চোপা করিস, রান্নাঘর থেকে চুরি করে খাস, তাও কিছু বলিনা। আর একটা দিন আমার কথা মতো চলতে পারবি না? ঠিক আছে, ওদের খেতে দেবার আগে রান্নাঘরে বসে নাহয় খানিক গিলে নিও। তাহলে হবে তো?
দিগম্বর : হ্যাঁ। ইটা বেশ ভালো ব্যবস্থা। ভরা প্যাটে ঘুম ঘুম পাবে। ত্যাকন কতাও কইতে মন করবেনি, হাসিও পাবেনি। উঃ! বাবুর কি বুদ্যি!
দশরথ : হয়েছে হয়েছে। আচ্ছা ধর, একজন বাবু খেয়ে উঠে তোর কাছে এক গ্লাস জল চাইলেন। কি করবি তুই?
দিগম্বর : কি আবার করবো? বলবো, দ্যাকতে পাচ্ছোনি, আমি টেবিলের এঁটো পোষ্কের করতিচি? অই হোথায় কুঁজো রইসে, গ্যালাস রইসে, জল গড়াও, গইড়ে খাও। কি, ঠিক বলিনি?
দশরথ : হায় কপাল! এতক্ষণে তুই এই শিখলি? তোকে আমার জুতোপেটা করতে ইচ্ছে করছে। (দরজা ধাক্কার আওয়াজ) ওই যে, ওরা এসে পড়েছে মনে হচ্ছে। এই দিগে! হতচ্ছাড়া ছাগল! যা শিগগির দরজা খুলে দে! আমি তোর গিন্নিমাকে খবর দিই।
(মদন ও নারায়ণের প্রবেশ।)
দিগম্বর : আসেন, আসেন বাবুরা। ভেতরে আসেন। আরে, জুতা মশমশিয়ে উদিকে চললেন কোতায়? জুতাগুলা ইদিকে ছাড়েন।
মদন : বাঃ, বেশ সাজানো গোছানো দেখছি। আশা করি রুমগুলো ভালোই হবে।
নারায়ণ : একটা রাতের তো ব্যাপার! এখন তোর কালকের ব্যাপারটা ভালোভাবে উৎরে গেলেই হয়।
দিগম্বর : অ বাবুরা! জুতা পইরে ঘুরবেন নি কো। গিন্নিমা আগ করবেন।
মদন : কালকের ব্যাপারটা নিয়ে তো আমারও tension আছে রে। জানিসই তো, এসব মেয়েদের আমি ঠিক handle করতে পারি না।
নারায়ণ : কিন্তু একদিন না একদিন তো settle down করতেই হবে। কদ্দিন আর ঝি-মহলের কেষ্ট ঠাকুর হয়ে চালাবে চাঁদু?
মদন : O shut up! সবসময় ঠাট্টা ইয়ার্কি ভালো লাগে না।
দিগম্বর : অ বাবুরা! জুতাগুলা খোলবেন নি?
নারায়ণ : এই যে চাঁদু! তুমি বকবক না করে আমাদের রুমটা দেখিয়ে দাও দিকি। একটু গড়িয়ে নিই।
দিগম্বর : এজ্ঞে আমার নাম চাঁদু না, দিগম্বর। দিগে বলিও ডাকতি পারেন। অই যে বাবু আসতিচেন। ওনার সাথেই কতা কন।
(দিগম্বরের প্রস্থান। দশরথের প্রবেশ)
নারায়ণ : তাসের আড্ডার ছোঁড়াটা নির্ঘাত এই বুড়োটার কথাই বলেছিল। এটাকে বেশি কথা বলতে দেওয়া চলবে না।
দশরথ : এই যে বাবাজীবন। সব ঠিক আছে তো? রাস্তায় কোনো কষ্ট হয়নি? তা বাবা মদন, এটি তোমার বন্ধু বুঝি?
মদন : (একান্তে) By jove! বুড়োটা আমার নাম জানলো কি করে? নির্ঘাত সুটকেস তোলার সময় নামটা দেখে নিয়েছে। ব্যাটা ঘোড়েল আছে তো!
নারায়ণ : আমাদের রুমটা একটু দেখিয়ে দিন তো। জামাকাপড় ছেড়ে একটু গড়িয়ে নিই।
দশরথ : হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই। তোমরা এসো আমার সঙ্গে।
মদন : একিরে নারাণ! তুই আবার অফিসের ফাইল সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিস কেন? মেয়ে দেখতে এসে ফাইল দেখবি নাকি?
দশরথ : ঠিকই তো। অফিসের কথায় একটা ভারী মজার ঘটনা মনে পড়ে গেলো।
মদন : (একান্তে) ওই শুরু হলো।
দশরথ : তখন আমি একটা সদাগরী অফিসে চাকরি করি বুঝলে? বয়েস কম, একটু কবিতা টবিতা লিখি…
নারায়ণ : ফাইলটা মোটামুটি ready হয়ে আছে। শুধু ফাইনাল চেকিংটা বাকি। ফিরেই submit করে দেবো। জানিসই তো, আমাদের GM মিস্টার গোয়েল পোঁদে বাঁশ দিতে ওস্তাদ। শালা হাড়বজ্জাত!
দশরথ : ইয়ে, শোনো না। আমাদের ওপরওয়ালা ছিলেন একজন খাঁটি ব্রিটিশ সাহেব। নাম মিস্টার ব্রাউন। কি দাপট ছিল তাঁর। তা একদিন হয়েছে কি…
মদন : সেকিরে, তুই যে বলেছিলি মিস্টার গোয়েল ট্রান্সফার হয়ে যাবে? এখনো হয়নি?
দশরথ : তো যা বলছিলাম…একদিন মিস্টার ব্রাউন আমাকে ডেকে বললেন, মিস্টার ডাটটা, টুমি নাকি কবিটা লেখো? আমি তো শুনে অবাক! মাথা চুলকে বললাম…
নারায়ণ : কপাল ভাই, কপাল! ট্রান্সফার তো কবেই হয়ে যেত। কিন্তু ব্যাটা আটকে দিলো। কলকাতার weather নাকি ওর suit করে। তাই MD কে তৈলমর্দন করে এখানেই থেকে গেল। ব্যাটা কম ঘোড়েল নাকি?
দশরথ : (গলা খাঁকরে) আমি মাথা চুলকে বললাম, নো স্যার, মানে ইয়েস স্যার, মানে কি যে বলি স্যার! ব্রাউন সাহেব আমার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বললেন…
মদন : এই যে মশাই শুনুন, আপনার বকবকানি থামিয়ে আমাদের জন্যে একটু মালের বন্দোবস্ত করুন দিকি। Whiskey পাওয়া যাবে?
দশরথ : (একান্তে) হবু শ্বশুরের কাছে মদ চাইছে! কি যুগই পড়লো! এমন অসভ্যতা তো বাপের জম্মে দেখিনি।
মদন : কি মশাই, চমকে উঠলেন যে? এমন ভাব করছেন যেন জীবনে কোনোদিন Whiskey র নাম শোনেননি! ভেবেছিলাম কয়েক পেগ whiskey খেয়ে journey র ধকলটা কাটাবো, কিন্তু আপনার হাবভাব দেখে বুঝতেই পারছি যে whiskeyর আশা দুরাশা। তা সে যাক। খিদেও তো পাচ্ছে বেশ। এখন বলুন তো, ডিনারে কি কি পাওয়া যাবে?
দশরথ : খিদে পেয়েছে? তা আগে বলতে হয় বাবা। দেখো দিকিনি কি কাণ্ড। আমি যাই দেখি ওদিকে কদ্দুর কি হোলো।
মদন : আরে আগে মেনুটা কি শুনি?
দশরথ : হেঁ হেঁ, ওই ব্যাপারে অবশ্য আমার গিন্নি ভাল বলতে পারবেন। তাও যতোটুকু জানি বলছি। সরু চালের ভাত, নারকোল দিয়ে সোনামুগের ডাল, বেগুনভাজা…
মদন : ছ্যা ছ্যা! বেগুনে আমি দু চক্ষে দেখতে পারিনা।
দশরথ : আমাদের ক্ষেতের বেগুন বাবা, খুব মিষ্টি!
মদন : মিষ্টির নিকুচি। আর কি আছে?
দশরথ : কচি এঁচোড়ের ডালনা, মোচার ঘন্ট…
নারায়ণ : ঘন্টা বাজিয়ে দিলে!
দশরথ : ইয়ে, টাটকা রুই মাছের ঝোল…
মদন : ঝোল? আমরা কি রুগী নাকি?
দশরথ : কাঁচা আমের চাটনি…
মদন : সে কি? এরই মধ্যে চাটনি?
নারায়ণ : চিকেন? চিকেন নেই? চিকেন কারী, চিকেন কসা, চিকেন চাঁপ, চিকেন রোস্ট…এসব হবে না?
দশরথ : না! আমার বাড়িতে মুরগি ঢোকে না! (একান্তে) উঃ, এদের অসভ্যতা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যেন বাপের হোটেলে এসে উঠেছে।
মদন : তবে আর কি! ওই যা আছে আপনার চাকরকে বলুন নিয়ে আসতে। গলধঃকরণ করে শুয়ে পড়ি।
দশরথ : হ্যাঁ দিগের হাতে সব পাঠিয়ে দিচ্ছি। (একান্তে) এদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে খাবার প্রবৃত্তিও হচ্ছে না আমার। মদ! মুরগি! ছি ছি!
মদন : দেখো কাণ্ড! ঘরের সঙ্গে একটা attached বাথরুম অবধি নেই। ও মশাই, টয়লেটটা কোথায় একটু দেখিয়ে দিন তো!
দশরথ : হ্যাঁ হ্যাঁ, এসো আমার সঙ্গে।
(দশরথ ও মদনের প্রস্থান।)
নারায়ণ : (হাই তুলে) যাই একটু গড়িয়ে নিই। বেশ tired লাগছে। কে ওখানে? আরে দামিনী যে! তুমি এই সরাইখানায় কি করছো?
(দামিনীর প্রবেশ)
দামিনী : সরাইখানা? কি বাজে কথা বলছো! এটা সরাইখানা কেন হবে? এটা তো আমার মামা দশরথ দত্তর বাড়ি।
নারায়ণ : Oh no! তার মানে ওই বয়স্ক ভদ্রলোক তোমার মামা? ওনার মেয়েকেই আমরা দেখতে এসেছি?
দামিনী : একদম তাই। কিন্তু বাড়িটাকে সরাইখানা বলে ভুল করলে কি করে?
নারায়ণ : আর বলো কেন! ওই সামনে একটা বাড়ির রকে কয়েকটা ছোঁড়া বসে তাস খেলছিলো। ওদের কাছে তোমাদের বাড়ির direction জানতে চাওয়ায় একজন বলল যে আমরা নাকি ভুল করে উল্টো রাস্তায় চলে এসেছি। তারপর সেই ছোঁড়াটাই তো সরাইখানা বলে এখানে পাঠিয়ে দিলো। বললো আজ রাতে ওই সরাইখানায় থাকুন, কাল সকালে বেরিয়ে পড়বেন।
দামিনী : বোঝো কাণ্ড! এ নিশ্চয়ই ওই শয়তান পুলুদার কাজ।
নারায়ণ : মানে সেই অপগন্ডটা, যার সঙ্গে তোমার মামী তোমার বিয়ে দিতে চায়?
দামিনী : হ্যাঁ সেই।
নারায়ণ : তোমার মামীর ভীমরতি হয়েছে। ভাই-বোনে আবার বিয়ে হয় নাকি?
দামিনী : পুলুদা ঠিক আমার নিজের দাদা নয়। আমাদের দুই পরিবার এক পাড়ায় থাকতো। মামাকে আমার মা ভাইফোঁটা দিত। ছোটবয়েসে বাবা-মা মারা যাবার পর এই মামাই আমাকে মানুষ করেছেন।
নারায়ণ : ও, তাই বলো! কিন্তু এভাবে আর ভালো লাগছে
না সোনা। এমন সুযোগ আর আসবে না। চলো না, আজ রাতে আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি?
দামিনী : দাঁড়াও, আগে মামীর কাছ থেকে আমার গয়নার বাক্সটা উদ্ধার করি, তারপর।
নারায়ণ : দেখো যা ভালো বোঝো। আর হ্যাঁ, মদনকে কিন্তু আমরা এখন কিচ্ছু জানাবো না। রগড়টা জমুক না!
দামিনী : মদনদা গেলো কোথায়?
নারায়ণ : ও টয়লেটে গেছে। এই এলো বলে।
দামিনী : কিন্তু লবঙ্গর সঙ্গে যদি ওর দেখা হয়ে যায়, তখন কি হবে? এই তো, মদনদা এসে গেছে।
(মদনের প্রবেশ)
মদন : একি, আপনি? ঠিক চিনলাম না তো?
নারায়ণ : আয়, তোদের আলাপ করিয়ে দিই। এ হলো আমার ফিঁয়াসী দামিনী। আর দামিনী, এ আমার বন্ধু মদন।
মদন : কিন্তু এই সময় উনি এখানে?
নারায়ণ : দামিনী আর লবঙ্গলতা এদিকে কয়েকটা জিনিস কিনতে এসেছে। ভালোই হোলো, লবঙ্গলতার সঙ্গে তোর আলাপটাও হয়ে যাবে।
মদন : (একান্তে) ইস, কি বিপদেই পড়া গেল! সব ঝামেলা কি আজকেই? (নারায়ণকে) ইয়ে, নারাণ, বলছিলাম কি, আলাপটা নাহয় কালকেই করা যাবে। আজ তো অনেক রাত হয়ে গেছে, ওনাদের বাড়িও ফিরতে হবে।
দামিনী : আপনি চিন্তা করবেন না। আজ রাতে আমরা আর বাড়ি ফিরবো না। অনেকটা দূর তো! একেবারে উল্টো রাস্তায়।
মদন : আ-আপনারাও কি তাহলে এখানেই…
দামিনী : না না, কাছেই মাসীর বাড়িতে উঠেছি। কাল সকালেই ফিরে যাব। ওই যে, লবঙ্গ আসছে।
নারায়ণ : Be smart মদন। মেয়েটাকে impress করতেই হবে।
(লবঙ্গলতার প্রবেশ)
দামিনী : লবঙ্গ, আয় তোর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। এ হচ্ছে নারায়ণ, আমার ফিঁয়াসে। আর ইনি হলেন গিয়ে (গলা খাঁকরিয়ে) মদনদা!
নারায়ণ : নমস্কার।
মদন : ন-নমস্কার।
লবঙ্গ : নমস্কার। (একান্তে) তাহলে এই সেই ঝি-বাজ মদনকুমার! হুঁ, দেখতে শুনতে তো বেশ ভালোই দেখছি। (মদনকে) আপনাদের আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?
মদন : (চমকে উঠে) কই, কই না তো। বেশ..ভালোই তো এলাম।
নারায়ণ : (মদনকে) বাঃ, দারুণ হচ্ছে। চালিয়ে যা।
লবঙ্গ : কেমন লাগছে জায়গাটা?
মদন : ইয়ে, ভালোই তো। কেমন চমৎকার আলো, বাতাস, (চটাস করে মশা মারে) মশা..মানে, খাসা!
নারায়ণ : (মদনকে) এই তো, দিব্বি হচ্ছে। এইভাবেই চালিয়ে যা। আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসছি। (দামিনীকে) চলো দামিনী, একটু বাগান থেকে ঘুরে আসি। কাবাব মে হাড্ডি হয়ে কি লাভ, বলো?
মদন : (একান্তে) এই সেরেছে! (নারায়ণকে) না না, তোরা এখানেই থাক। বাইরে যাবার কোনো দরকার নেই। যাঃ! চলে গেলো!
(নারায়ণ ও দামিনীর প্রস্থান)
লবঙ্গ : আরে, একেবারে নিবে গেলেন যে!
মদন : (ঘাম মুছে) ক-কই, না তো!
লবঙ্গ : আমার সঙ্গে কথা বলতে আপনার ভালো লাগছে না বুঝি?
মদন : না না, ত-তা কেন হবে?
লবঙ্গ : তাহলে কথা বলছেন না কেন? দেখুন, আমি একাই শুধু কথা বলে যাচ্ছি।
মদন : আ-আচ্ছা লবঙ্গলতাদেবী, আপনি…ইয়ে, মানে, আপনার নাম কি? (লবঙ্গ হেসে গড়িয়ে পড়ে) আ-আপনি হাসছেন কেন?
লবঙ্গ : (একান্তে) তুমহারা নাম কেয়া হ্যায় বাসন্তী? হি হি হি
মদন : কি-কি বললেন?
লবঙ্গ : কিছু না। বেশ কথা বলেন তো আপনি।
মদন : ওহ! আচ্ছা নারাণ কোথায় গেল বলতে পারেন?
লবঙ্গ : কেন, আপনার চাই বুঝি?
মদন : হ্যাঁ, মানে, পেলে ভালো হতো।
লবঙ্গ : বাগানে চলে যান। পেয়ে যাবেন মনে হয়।
মদন : আ-আমি যাই তাহলে।
লবঙ্গ : (জনান্তিকে) কি কাণ্ড! ছেলেটা একবার আমার মুখের দিকে অবধি তাকালো না। আজকালকার যুগে এমন লাজুক ছেলে হয় ভাবাই যায়না। আচ্ছা, সত্যিই কি ও ঝি-বাজ? বিশ্বাস হচ্ছে না। যাচাই করে দেখতে হবে তো!
Scene 5
(এলোকেশী ও নারায়ণের প্রবেশ)
এলোকেশী : ও নারায়ণ, কলকাতার ফ্যাশন সম্পর্কে আমায় কিছু বলো না! যদিও কলকাতায় যাইনি কখনো, কিন্তু খবর সবই রাখি। I keeping all news!
নারায়ণ : বলছেন কি? আপনি কলকাতায় যাননি কখনো? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না ম্যাডাম। আপনার হাবভাব, সাজপোশাক, এত সুন্দর ইংরিজি বলা…এ তো বানতলা, তিলজলা বা গার্ডেনরিচ ছাড়া দেখাই যায়না।
এলোকেশী : হেঁ হেঁ! Thanku thanku. আচ্ছা নারায়ণ, আমার চুলের styleটা কেমন হয়েছে বলো তো?
নারায়ণ : অসাধারণ! নিশ্চয়ই কোনো নামকরা beauty parlour থেকে করানো। Either জাভেদ হাবিব বা কেয়া শেঠ। ঠিক কিনা?
এলোকেশী : হোলো না, হোলো না। এটা আমার নিজস্ব style, বুঝলে? I do it.
নারায়ণ : আমি বাকরুদ্ধ! কলকাতায় এত সুন্দর hairstyle বা আপনার মত সুন্দরী মহিলা তো চোখেই পড়ে না।
এলোকেশী : হেঁ হেঁ, কি যে বলো! তাও তো এখন বয়েস হয়ে গেছে বলে তেমন করে আর সাজতেই পারি না। অল্প বয়সে যদি দেখতে!
নারায়ণ : কিই বা এমন বয়েস আপনার? এখনো তো কচি খুকি! পুলককে দেখলে তো মনে হয় আপনার ছোট ভাই!
এলোকেশী : হেঁ হেঁ! আমার পুলুর মতো ভালো ছেলে আর হয় না। আরে, পুলু আর দামিনী তো এদিকেই আসছে দেখছি। আহা, দুটিকে যা মানায় না!
(দামিনী ও পুলকের প্রবেশ)
দামিনী : মামী, পুলুদাকে বলে দাও, সবার সামনে যেন আমাকে পেঁচি, খেঁদি এইসব না বলে। আমার কিন্তু একটা প্রেস্টিজ আছে!
পুলক : তোর আবার পেস্টিজ? আর হাসাসনি পেঁচি।
দামিনী : ওই শোনো মামী, আবার পেঁচি বললো।
পুলক : বলেছি বেশ করেছি। আবার বলবো। পেঁচি!
দামিনী : ভালো হচ্ছে না পুলুদা!
এলোকেশী : আঃ, কি হচ্ছে কি পুলু? দুদিন পর ও তোর বউ হবে না?
পুলক : ও পেঁচিকে বিয়ে করতে আমার বয়ে গেছে!
এলোকেশী : বটে! চলে আয় দামিনী! দেখবো ও কি করে তোকে বিয়ে না করে। আরে ও তো ও, ওর বাপ বিয়ে করবে! ইস্টুপিড fool!
দামিনী : হ্যাঁ মামী, চলো। মামাও তোমার খোঁজ করছিল।
(এলোকেশী ও দামিনীর প্রস্থান।)
পুলক : (নেচে নেচে) লুঙ্গি ড্যান্স লুঙ্গি ড্যান্স লুঙ্গি ড্যান্স লুঙ্গি ড্যান্স… কিচু মনে কোরো না গুরু। বুড়িটা সব সময় খ্যাঁচ খ্যাঁচ করে। পেঁচিটাও মার নেজুড় হয়ে সমানে চুকলিবাজি করে। খাবে একদিন এমন গাঁট্টা!
নারায়ণ : সেকি? দামিনীকে তোমার ভালো লাগে না বুঝি? দেখতে তো বেশ ভালোই।
পুলক : আবে দূর দূর! ওসব রং চুন মাখা। আমার পারুলের পাশে পেঁচিটা দাঁড়াতেই পারবে না।
নারায়ণ : আচ্ছা, ধরো অন্য কোনো ছেলে যদি ওকে বিয়ে করে, তুমি খুশি হবে?
পুলক : খুশি হব মানে? আনন্দে সারারাত মাল খেয়ে গড়াগড়ি দেবো। কিন্তু এমন উপকার কে আর করবে বলো? কে ওই পেঁচিটাকে বিয়ে করে আমায় উদ্ধার করবে?
নারায়ণ : আমি করবো। কিন্তু তার আগে ওর গয়নাগুলো তোমার মার কাছ থেকে উদ্ধার করে দিতে হবে।
পুলক : এই সত্যি বলছো মাইরি?
নারায়ণ : সত্যি বলছি। তুমি শুধু ওর গয়নার বাক্সটা এনে দাও আর আজ রাতে আমাদের পালাবার ব্যবস্থা করে দাও।
পুলক : ওস্তাদ! আজ থেকে তুমি আমার সাচ্চা দোস্ত। তুমি যা যা বললে সব করে দেব। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
Scene 6
(দশরথের প্রবেশ।)
দশরথ : (একান্তে) মদনের মত এমন অসভ্য, অভদ্র ছেলে বাপের জম্মে দেখিনি। বার বার মানা করা সত্ত্বেও সারা বাড়িতে জুতো মশমশিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেন বাপের সম্পত্তি পেয়েছে। নেহাত চরণের ছেলে তাই, নইলে ব্যাটাকে জুতিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দিতাম। কে ওখানে? (লবঙ্গলতার প্রবেশ) ও, লবঙ্গ, আয় মা। বাঃ, এই তো, বেশ দেখাচ্ছে। ঘরোয়া সাধারণ জামাকাপড়েই তোকে বেশি ভালো লাগে আমার।
লবঙ্গ : একা একা কি করছো বাপি?
দশরথ : কি আর করবো মা, মদনের কাজকারবার দেখে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। ওর বন্ধুটা ওর থেকে অনেক ভদ্র।
লবঙ্গ : ঠিক বলেছো বাপি। মদনের মত লাজুক, হাঁদা গঙ্গারাম ছেলে এ যুগে অচল।
দশরথ : কে লাজুক? মদন? তুই কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছিস মা?
লবঙ্গ : ওমা ঠাট্টা করবো কেন? যা সত্যি তাই বললাম। অতক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বললো, কিন্তু একবার সাহস করে আমার মুখের দিকে অবধি তাকালো না! একে তুমি লাজুক ছাড়া কি বলবে?
দশরথ : মানতে পারলাম না। মদনের মতো উদ্ধত, অসভ্য, বাচাল ছেলে আমি জীবনে দেখিনি।
লবঙ্গ : মদন উদ্ধত, অসভ্য, বাচাল? অসম্ভব বাপি! তোমার কোথাও একটা বিশাল ভূল হচ্ছে।
দশরথ : আমার কোনো ভুল হচ্ছে না। ভুল করছিস তুই। ওর সুন্দর চেহারা দেখে গলে যাচ্ছিস।
লবঙ্গ : মোটেই না। আমি আজ রাতের মধ্যেই প্রমাণ করে দেব যে তোমার ধারণা ভুল।
দশরথ : বেশ, দেখা যাক।
Scene 7
(পুলকের প্রবেশ। তার হাতে একটা বড়সড় কাঠের বাক্স।)
পুলক : ইল্লু! পেরেচি! পেঁচির গয়নার বাস্কোটা ঝাড়তে পেরেচি! এখন আজ রাতে আপদ বিদেয় হলেই বাঁচি। হোতায় কে? অ, নারাণবাবু। এসো দোস্ত এসো।
(নারায়ণের প্রবেশ)
নারায়ণ : সব ঠিকঠাক আছে তো? গাড়ি তৈরি?
পুলক : সব কিচু ফিট করে এসেচি বস। পেঁচির গয়নার বাস্কোটা ধরো। অনেক কষ্টে বুড়িটাকে চকমা দিয়ে ঝেড়েচি।
নারায়ণ : ওহ, তোমার জবাব নেই দোস্ত। তোমার উপকার চিরকাল মনে রাখবো।
পুলক : তোমার উপকারও ভুলবো না। এখন এখেন থেকে ফোটো দিকি। বুড়ি আবার পেঁচির সঙ্গে ইদিক পানেই আসচে।
নারায়ণ : ওরে বাবা, আমি কাটি।
(নারায়ণের প্রস্থান। অন্য দিক দিয়ে দামিনী ও এলোকেশীর প্রবেশ)
দামিনী : গয়নাগুলো একবার পরতে দাও না মামী।
এলোকেশী : বললাম তো, তোর গয়নার বাক্স কোথায় রেখেছি মনে নেই। Now go you.
দামিনী : বা রে, go you বললেই হোলো? আমি জানি, গয়নার বাক্স তোমার আলমারিতেই আছে।
এলোকেশী : ছিল, কিন্তু এখন নেই। বাক্সটা হারিয়ে গেছে।
পুলক : ঠিক ঠিক, তোর গয়নার বাস্কোটা হারিয়ে গেচে রে পেঁচি।
এলোকেশী : শুনলি তো? নে আর ঘ্যান ঘ্যান করিসনি। আমি পরে খুঁজে দেখবো নাহয়। যাই দেখি গিয়ে রান্নাবান্না কদ্দূর কি হোলো।
(এলোকেশীর প্রস্থান)
দামিনী : এ কি অন্যায়! এ কি জুলুমবাজি!
পুলক : চুপ কর না পেঁচি। সবসময় ঘ্যানোর ঘ্যানোর! তোর গয়নার বাস্কো আমি মার আলমারী থেকে ঝেড়ে এনে নারাণকে দিইচি। এখন কেটে পড় দিকি। মা আবার ইদিকেই আসচে। গতিক সুবিদের ঠেকচে না।
দামিনী : ওঃ পুলুদা, তুমি great! আমি পালাই।
(দামিনীর প্রস্থান)
এলোকেশী : চোর! ডাকাত! পুলিশ! Where পুলিশ? নিয়ে গেছে। সব নিয়ে গেছে। ওরে বাবারে! এখন আমার কি হবে গো!
পুলক : কি হয়েচে মা? তোমার শরীর টরীর সব ঠিক আচে তো?
এলোকেশী : ওরে পুলু! সব্বোনাশ হয়ে গেছে। দামিনীর গয়নার বাক্সটা চুরি হয়ে গেছে।
পুলক : ওহ তাই বলো! বাঃ, দারুণ এ্যাক্টো হচ্ছে। চালিয়ে যাও।
এলোকেশী : ওরে মিথ্যে নয়, সত্যি সত্যি চুরি হয়েছে। আমার আলমারী খোলা, গয়নার বাক্স লোপাট। এক্ষুনি পুলিশ ডাক।
পুলক : সত্যি, তুমি সিনেমাকে হার মানাচ্চো মাইরি। কি এ্যাক্টো! চোকে জল এসে যায়!
এলোকেশী : আমার সঙ্গে ইয়ার্কি হচ্ছে? মেরে তোমার ঠ্যাং ভেঙে দেবো। I breaking your leg!
পুলক : উঃ, কি ব্রেক ড্যান্স দিচ্ছ গুরু! হা হা হা…
এলোকেশী : তবে রে শুয়োর!
পুলক : বুড়ি এবার ক্ষেপেছে রে! পালা পালা পালা!
Scene 8
(দিগম্বরের প্রবেশ)
দিগম্বর : আন্নার চাপে সারাদিনে ঘরদোর ঝাঁট দেওয়ার সময় পাইনি কো। উঃ, কি ধুলো জমেছে। অই যে, দিদি ইদিকপানেই আসতেচে।
(লবঙ্গলতার প্রবেশ)
লবঙ্গ : (একান্তে) পুলুদা শেষ অবধি আমাদের বাড়িটাকে সরাইখানা বানিয়ে দিলো! কি বিচ্ছু রে বাবা! ভাগ্যিস দামিনী বললো!
দিগম্বর : জানো দিদি, অই মদনবাবু তোমারে দেকি আমারে কি বলতেছেল? বলে কিনা, অই মেয়েটা তোমাদের কাজের নোক বুজি? কি আসপদ্দার কতা বলো দিকি? আমার এত নাগ হইচে যে উত্তুর না দে চলে এইচি।
লবঙ্গ : কি সর্বনাশ! এই কথা বলেছে বুঝি?
দিগম্বর : তবে না তো কি? আসলে তুমি ঘরের জামা পরে আচো তো, তাই দেকে বোদয় ভুল করেচে।
লবঙ্গ : তাই হবে। (একান্তে) তার মানে আমায় চিনতে পারেনি। মাথায় একটা মতলব এসেছে।
দিগম্বর : কি এত ভাবচো গো দিদি?
লবঙ্গ : এই দিগে, ঝাঁটাটা একবার দে দেখি। এবার তুই যা। মা কে রান্নাঘরে সাহায্য কর গিয়ে। আমি ঘর ঝাঁট দিয়ে দিচ্ছি।
দিগম্বর : ওমা, সি কি কতা! আমি থাকতি তুমি ঝাঁট দেবে কেন?
লবঙ্গ : তুই ঝাঁটাটা দিবি? নে, এবার যা।
দিগম্বর : জানিনি বাপু, কি মতলব তোমার। এই আমি চললুম।
(দিগম্বরের প্রস্থান)
লবঙ্গ : এবার মদনবাবু, তুমি গেলে! দেখি তুমি কত বড়ো ঝি-বাজ! ওই যে, বাবু এদিকেই আসছেন। আমি এখন ঝি সেজে মন দিয়ে ঝাঁট দিই বরং।
(মদনের প্রবেশ)
মদন : উঃ, কি বিচ্ছিরি জায়গা রে বাবা! কি সাঙ্ঘাতিক মশা! রাতে ঘুমোবো কি করে?
লবঙ্গ : (গলা পাল্টে) বাবু, আপনি আমারে ডেকিচেন?
মদন : (একান্তে) লবঙ্গলতা বড়ই ডেঁপো। চলবে না।
লবঙ্গ : আমারে ডাকতিচেন বাবু?
মদন : উঁ? কই না তো? (একান্তে) আর দেখতেও এমন কিছু আহামরি নয়। বাবাকে স্রেফ বলে দেবো যে মেয়ে আমার পছন্দ হয়নি। ব্যস, মিটে গেল।
লবঙ্গ : তবে কি আপনার বন্ধু ডাকলেন?
মদন : বলছি তো না! ইয়ে, হ্যাঁ। মনে হচ্ছে ডেকেছিলাম যেন। কি নাম তোমার?
লবঙ্গ : আমার নাম টগর গো বাবু।
মদন : টগর? বাঃ, কি সুন্দর নাম। দেখতেও ফুলের মতো। কত বয়স তোমার?
লবঙ্গ : বয়েস? কি জানি! সেই যেবার গেরামে ভীষণ বিষ্টি হোলো, নদীতে বান এলো, অনেক ফসল নষ্ট হোলো, সে বছরই আমি জম্মেছিলুম।
মদন : তাই? তাহলে তো অনেক বয়েস তোমার। চল্লিশ পঞ্চাশ তো হবেই। অবশ্য কাছ থেকে দেখলে আরো ভালো বোঝা যাবে। কই দেখি, একটু কাছে এসো।
লবঙ্গ : ওমা, হাত ধরেন কেন বাবু? যা বলার অই দূর থেকেই বলেন।
মদন : কিন্তু কাছে না এলে তোমার বয়েসটা বুঝবো কি করে?
লবঙ্গ : আমার বয়েস জেনে কি করবেন বাবু? নবঙ্গ দিদিরে বে করতে এয়েচেন ওনারই বয়েস জানুন। মাসীর বাড়ি তো কাচেই। ডেকে দোবো দিদিমণিরে?
মদন : ইয়ে, না না। তার আর দরকার কি? তুমি তো আছোই।
লবঙ্গ : বুজিচি। দিদিমণির সামনে তো নজ্জায় এক্কেরে আদ্দেক হয়ে গিছলেন। আড়াল থেকে আমি সবই দেকিচি। একন আমার কাচে যত বীরত্বি, না?
মদন : (একান্তে) ঈশ! Prestige একেবারে puncture করে দিলো রে! (লবঙ্গকে) কি বললে? লজ্জা? তোমার লবঙ্গ দিদিকে? হাসালে আমায়। আমাদের কলকাতার মেয়েদের পাশে তোমার দিদিমণি দাঁড়াতেই পারবে না।
লবঙ্গ : তাই বুজি? কলকেতায় অনেক মেয়েদের সাথে আপনার আলাপ আচে বুজি?
মদন : আছেই তো। কত hot hot মেয়েরা আমার পেছনে ঘুরঘুর করে। বারণ করলেও শোনে না। ভালো লাগে, বলো?
লবঙ্গ : কেন গো? তারা সোন্দর নয় বুজি?
মদন : সুন্দর কেন হবে না? সব ভালো ঘরের মেয়ে। কিন্তু সবসময় বিরক্ত করলে ভালো লাগে বলো? আরে আমারও তো কাজকর্ম আছে, না কি?
লবঙ্গ : এজ্ঞে সে তো ঠিকই। আপনি তা’লে একন বসে বসে কাজকম্ম করেন, আমি যাই। আমারও কাজ আচে।
মদন : আরে শোনোই না। এত তাড়া কিসের? আমার পাশে এসে একটু বোসো না।
লবঙ্গ : ওমা! আমার নজ্জা করে না বুজি? হাত ছাড়ো বাবু। কেউ এসে পড়বে।
মদন : তুমি খুব মিষ্টি। তোমাকে আমার ভারী ভালো লেগেছে।
লবঙ্গ : এসব কতা বোলো না বাবু। গিন্নিমা শোনতে পেলে আমার চাকরী চলে যাবে।
মদন : বেশ হবে। আমি তোমাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যাবো।
লবঙ্গ : না না বাবু, হাত ছাড়ো, আমি যাই।
মদন : না, এখন আমার কাছে থাকো। আর একটু পরে যেও।
লবঙ্গ : ওই বুড়ো বাবু আসছে গো। ইস, কি নজ্জা!
মদন : আঃ, বুড়ো ভামটা আবার এসে জুটেছে। প্রায় পটিয়ে এনেছিলাম। কি জ্বালা রে বাবা! আমি যাই বরং। নয়তো আবার বুড়োর বকবকানি শুনতে হবে।
(মদনের প্রস্থান। অন্য দিক দিয়ে দশরথের প্রবেশ)
দশরথ : তাহলে এই হলো তোর লাজুক ছেলে? ছি লবঙ্গ। আমার কাছে তুই মিথ্যে কথা বললি?
লবঙ্গ : আমি মিথ্যে বলিনি বাপি। তুমি পুরো ব্যাপারটা ভুল বুঝেছো।
দশরথ : ভুল বুঝেছি? আমি নিজের চোখে দেখলাম…
লবঙ্গ : ভুল দেখেছো।
দশরথ : আমি তর্ক করতে চাই না। আজ রাতে চরণ আসছে। যা বলার আমি তাকেই বলবো। তোমার মাকে বলে দিও আমি বাগানে হাঁটতে যাচ্ছি।
(দশরথের প্রস্থান)
লবঙ্গ : (একান্তে) যাচ্চলে! বাপি যে এমন ভুল টাইমে entry নেবে কে ভেবেছিল? প্রায় পটিয়ে এনেছিলাম। কি জ্বালা রে বাবা!
Scene 9
(মদন ও দিগম্বরের প্রবেশ।)
মদন : (একান্তে) নারাণ হঠাৎ আমার কাছে দামিনীর গয়নার বাক্স রাখতে দিলো কেন কে জানে। এই অচেনা জায়গায় চুরি হয়ে গেলে কি হতো? (দিগম্বরকে) দিগম্বর, তুমি তোমার গিন্নিমার হাতে বাক্সটা ঠিকঠাক রাখতে দিয়েছো তো?
দিগম্বর : হ্যাঁ, ও আপনি কিচ্চু চিন্তা করবেননি। গিন্নিমা আলমারীর মধ্যি চাবি দে রেইখ্যে দেছেন। আমি নিজের চোকে দেকিচি।
মদন : যাক বাবা, নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।
দিগম্বর : বাস্কোটা দেখে গিন্নিমা চোক কপালে তুলে আমারে জিগোলেন, হ্যাঁ রে দিগে, এ বাস্কোটা তুই কোতায় পেলি রে? তা আমি কইলাম অই মদনবাবু রাকতে দ্যাছেন। কতাটা শুনি গিন্নিমা এট্টু অবাক হলেন বলি মনে হোলো। তাপ্পর খুশি খুশি মুকে ওটারে আলমারীতে তুলে রাকলেন।
মদন : যাক বাবা, নিরাপদে থাকলেই হোলো। আচ্ছা তুমি যাও এবার।
দিগম্বর : হ্যাঁ যাই। মেলা কাজ পড়ি আচে। অই যে, নারাণবাবু আসতিচেন। আমি যাই।
(দিগম্বরের প্রস্থান। নারায়ণের প্রবেশ)
নারায়ণ : গয়নার বাক্সটা ঠিকঠাক রেখেছিস তো?
মদন : হ্যাঁ। ও ব্যাপারে তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না। বাক্সটা আমি সরাইওলার স্ত্রীর কাছে রাখতে দিয়েছি। উনি যত্ন করে আলমারীতে তুলে রেখেছেন।
নারায়ণ : স-স-সরাইওলার স্ত্রীর কাছে রাখতে দিয়েছিস?
মদন : হ্যাঁ। কেন, ঠিক করিনি?
নারায়ণ : খু-খুব ভালো করেছিস। তু-তুই rest নে, আমি একটু ঘুরে আসছি। (একান্তে) গয়নার বাক্স গয়ংগচ্ছ! বেচারা দামিনী!
(নারায়ণের প্রস্থান)
মদন : নারায়ণকে নার্ভাস লাগলো কেন? কোনো রহস্য আছে মনে হচ্ছে। এই রে, বুড়োটা আবার এদিকে কি করতে আসছে!
(দশরথের প্রবেশ)
দশরথ : এই যে মদন! এ সব কি শুরু করেছো? ঠাকুরঘরের সামনে এঁটো হাতটা কি বলে ধুলে? আচার বিচার কি কিছুই মানো না?
মদন : মানে? আপনার ঠাকুরঘর কোথায় সেটা আমি কি করে জানবো মশাই? আপনার ঝি চাকরদের তো ডেকে ডেকেও সাড়া পাওয়া যায় না। হাত ধোবোটা কোথায়! আপনার মাথায়?
দশরথ : কি বললে? অসভ্য! ছোটলোক! বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।
মদন : কি? এতবড় অপমান? আপনাকে দেখে তো আমার ভদ্রলোক বলেই মনে হয়েছিল। নিয়ে আসুন আপনার বিল।
দশরথ : তোমাকেও তো ভদ্রলোক বলেই জানতাম। ছি ছি! কি বাপের কি ছেলে! আজ আসুক চরণ। তার সামনেই সব ফয়সালা হবে।
মদন : মা-মানে?
দশরথ : মানেটা তোমার বাবার কাছেই বুঝে নিও। আমি চললাম।
(দশরথের প্রস্থান)
মদন : (একান্তে) কেসটা কিরকম হোলো? আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না। ভদ্রলোক কে? ওই তো টগর আসছে। ওকেই জিজ্ঞাসা করি। (লবঙ্গকে) ও টগর! একবার শুনবে এদিকে?
(লবঙ্গলতার প্রবেশ)
লবঙ্গ : বলুন কি বলবেন?
মদন : আচ্ছা ওই বয়স্ক ভদ্রলোকটি কে বলো তো?
লবঙ্গ : সেকি? ওনাকে চেনেন না? উনি তো আপনার হবু শ্বশুর দশরথ দত্ত।
মদন : What? আমি তো ভেবেছিলাম যে উনি…
লবঙ্গ : কি ভেবেছিলেন?
মদন : না থাক। কিন্তু এই সরাইখানায় উনি কি করছেন?
লবঙ্গ : সরাইখানা? কে বললো এটা সরাইখানা?
মদন : এটা সরাইখানা নয়?
লবঙ্গ : কস্মিনকালেও নয়। এটা দশরথ দত্তর বাড়ি। মানে (একটু হেসে) আপনার হবু শ্বশুরবাড়ি। বুঝলেন মশাই?
মদন : হে ধরণী, দ্বিধা হও। তুমি তাহলে কে?
লবঙ্গ : এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়া।
মদন : টগর, আমার ভারী ভুল হয়ে গেছে।
লবঙ্গ : কি ভুল?
মদন : দশরথকাকাকে আমি সরাইওলা বলে ভুল করেছিলাম, আর এই বাড়ীটাকে ভেবেছিলাম সরাইখানা।
লবঙ্গ : হায় হায়, কি সর্বনাশ!
মদন : আর তোমাকে ভেবেছিলাম…
লবঙ্গ : কি ভেবেছিলেন? সরাইখানার কাজের লোক?
মদন : না, ঠিক তা নয়! আসলে তখন তুমি অন্যরকম করে কথাও বলছিলে। সে যাই হোক, তোমাকে কিন্তু আমার সত্যিই ভালো লেগেছে।
লবঙ্গ : বাঃ! আমাকে আপনার ভালো লাগে কিন্তু বিয়ে করবেন লবঙ্গকে। আপনি তো আচ্ছা মানুষ মশাই।
মদন : কে বলেছে আমি লবঙ্গকে বিয়ে করবো?
লবঙ্গ : থাক, আর ড্রামা করতে হবে না। আপনার বাবা তো আজ আপনাদের বিয়ের কথা পাকা করতে আসছেন, তাই না?
মদন : হ্যাঁ। কিন্তু আমি ওকে বিয়ে করতে চাই না। আমি তোমাকেই…
লবঙ্গ : আপনার বাবাকে সে কথা বলতে পারবেন? সে সাহস আছে আপনার?
মদন : বাবার অবাধ্য কোনোদিন হইনি।
লবঙ্গ : দেখলেন তো? আপনি পারবেন না। তার চেয়ে বাবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে সুখে সংসার করুন।
মদন : ওইভাবে বোলো না প্লিজ। আমি সত্যিই একটা অপদার্থ, কাপুরুষ। তুমি ঠিকই বলেছো। বাবার মুখের ওপর কথা বলার সাহস নেই আমার। আমাকে ভুলে যেও। আর যদি পারো তো আমায় ক্ষমা কোরো। আমি যাচ্ছি।
লবঙ্গ : (একান্তে) আহা, বেচারাকে এতটা মুরগি করা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। অবশ্য আর কিছুক্ষণের ব্যাপার। চরণকাকু এলেই তো পর্দা ফাঁস! হি হি হি
Scene 10
(পুলক ও দামিনীর প্রবেশ)
পুলক : খবদ্দার বলচি পেঁচি। আমার কানের গোড়ায় একদম ঘ্যান ঘ্যান করবি না। নিজেদের দোষে তোরা গয়নার বাস্কো হাতছাড়া করেচিস। এখন আমি আর কিচু করতে পারবো না। জানিস, মা কে কত কৈফিয়ৎ দিতে হয়েচে?
দামিনী : রাগ কোরোনা পুলুদা। জানি আমাদেরই দোষ। মদনদাকে সব বলা উচিৎ ছিল। আমার bad luck! যাক, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। কিন্তু আজ রাতে আমাদের পালাতে সাহায্য করো please!
পুলক : আঃ! সবসময় প্যানোর প্যানোর! নে, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। ভ্যান রিস্কো বলে রেকিচি। এখুনি এসে পড়বে। তোদের এখেন থেকে সিধে ইস্টিশনে নিয়ে যাবে। যা যা, দেরি করিসনি।
দামিনী : ভ্যান রিক্সা না বলে ট্যাক্সি ডাকলেই তো পারতে।
পুলক : তুই কিচু বুঝিস না পেঁচি, চুপচাপ থাক। ট্যাস্কি ডাকলে সবার চোকে পড়তো, মা হাজারটা পোসনো করতো। ভ্যান রিস্কায় চুপি চুপি কেটে পড়তে পারবি। এই রে, মা আবার ইদিক পানেই আসছে! চুপ চুপ!
(এলোকেশীর প্রবেশ)
এলোকেশী : শুনেছিস দামিনী? তোর গয়নার বাক্সটা পাওয়া গেছে রে। ওহ, now I so happy! তা তোরা দুটিতে মিলে কি এত গপ্প করছিস রে?
পুলক : ওসব পেরাইভেট ব্যাপার, তুমি বুঝবে না। এখন এখান থেকে ফোটো তো মাইরি! কি রে দিগে, কি ব্যাপার? কিচু বলবি?
(দিগম্বরের প্রবেশ)
দিগম্বর : দাদাবাবু! তোমার নামে চিটি আচে গো!
পুলক : কই, দেকি!
(দিগম্বর পুলকের হাতে চিঠির খাম দেয়)
এলোকেশী : কার চিঠি রে পুলু?
পুলক : সেটাই তো বোঝবার চেষ্টা করছি মাইরি।
দিগম্বর : আমি তা’লে যাই গ দাদাবাবু। উদিকে আবার মেলা কাজ পড়ে আচে।
(দিগম্বরের প্রস্থান)
পুলক : হ্যাঁ যা। ইশ, কি জঘন্য হাতের লেখা! কিসুই তো পড়তে পারছি না। দুত্তেরি! এই পেঁচি, দেখ তো চিঠিটা পড়তে পারিস কিনা? যা হাতের লেখা!
দামিনী : হাতের লেখার দোষ নয় পুলুদা। কবে থেকে বলছি একটা চশমা নাও।
পুলক : হ্যাঃ! বুড়োদের মত নাকি নাকের ডগায় চশমা লাগাবো! তুই বকবক না করে চিঠিটা পড় দিকি।
এলোকেশী : কার চিঠি রে দামিনী? Who write letter?
দামিনী : (একান্তে) সর্বনাশ! এ যে নারায়ণ লিখেছে। (এলোকেশীকে) ওই পুলুদার বন্ধু পটলার চিঠি।
পুলক : কি লিকেচে পড় না বে!
দামিনী : হুঁ… প্রিয় পুলু…আশা করি ভাল আছিস…আমরা সবাই ভালো আছি…সামনের সপ্তাহে ফিরবো…কাল আমাদের এখানে মোরগের লড়াই হয়েছিল…শ্যাম মল্লিকের কালো মোরগটার সঙ্গে ধলা সরকারের সাদাটার…খুব জমেছিল…সবাই বাজি ফেলেছিল…আমিও একটা বাজি জিতেছি…দূর, যত বাজে কথা! ও আর কি শুনবে? আমি ফেলে দিচ্ছি।
পুলক : ফেলে দিবি? আমার বন্ধুর চিঠি তুই ফেলার কে রে? সাহস তো কম নয়! দে বলছি! পুরোটা তো যত্ন করে পড়লিই না। নাও তো মা, চিঠিটা পড়ে শোনাও। মোরগের লড়াইয়ের গপ্পটা একটু ভালো করে শুনি।
দামিনী : (একান্তে) সাড়ে সর্বনাশ!
এলোকেশী : এ কি! এ তো পটলার চিঠি নয়! এ তো দেখছি নারায়ণের চিঠি। লিখেছে ‘প্রিয় বন্ধু পুলক, তোমাকে মোবাইলে না পেয়ে এই চিঠি লিখছি। আমি এখন বাগানের গেটের পাশে দামিনীর জন্যে অপেক্ষা করছি। তোমার ভ্যান রিক্সা এখনো আসেনি। কিন্তু আর দেরি করা উচিত হবে না। পালাতে হলে সেটা চরণকাকা আসার আগেই করতে হবে। দামিনীকে নিয়ে তুমি তাড়াতাড়ি এখানে চলে এসো। আর হ্যাঁ, তোমার মা যেন কোনোমতেই জানতে না পারে। জানতে পারলে বুড়ি কিন্তু ছেড়ে কথা বলবে না। ইতি নারায়ণ।’ কি? আমি বুড়ি? I old? আমার বাড়িতে এসে আমার পিঠেই ছুরি মারার ধান্দা! দেখাচ্ছি মজা! I very angry!
দামিনী : রাগ করোনা মামী। নারায়ণকে আমি ভালোবাসি। ওকেই বিয়ে করতে চাই।
এলোকেশী : চুপ কর! নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে! আর পুলু! তুইও ঘরের শত্তুর বিভীষণ হলি? সবকটাকে শায়েস্তা করবো। আগে এই বজ্জাত মেয়েটাকে শান্তিপিসির বাড়ি রেখে আসি, তারপর ওই হতচ্ছাড়া নারায়ণটার সঙ্গে ফয়সালা করবো। বলে কিনা আমি বুড়ি? দিগে! এই হারামজাদা দিগে! যা, ট্যাক্সি ডেকে আন। আমিও যাই, চটপট সব গুছিয়ে নিই গে।
(এলোকেশীর প্রস্থান)
দামিনী : (পুলককে) দিলে তো সব গুবলেট করে? (ভেঙিয়ে) ‘নাও তো মা, চিঠিটা পড়ে শোনাও। মোরগের লড়াইয়ের গপ্পোটা ভালো করে শুনি!’ নাও, এখন তোমার মার ধেই ধেই নেত্য দেখো। তোমার বোকামির জন্য পুরো প্ল্যানটা মাটি হয়ে গেল।
পুলক : ফালতু কথা বলবি না পেঁচি। নিজেকে বড্ড চালাক ভাবিস, না? মোরগের লড়াইয়ের কথা বলতে তোকে কে বলেছিল? তুই জানিস না, এসব গপ্প শুনতে আমি কত ভালোবাসি?
দামিনী : কিন্তু তাই বলে তুমি…আরে, ওই তো নারায়ণ আসছে।
(নারায়ণের প্রবেশ)
নারায়ণ : একি? তোমরা এখনো তৈরি হওনি? আমি বাগানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোর হয়ে…
দামিনী : ওঃ, তোমায় দেখে বাঁচলাম। এদিকে কেলেঙ্কারি হয়ে গেছে। পুলুদার বোকামির জন্যে মামী সব জানতে পেরে গেছে। এখন কি হবে?
নারায়ণ : সে কি?
পুলক : আমার কোনো দোষ নেই দোস্ত। তুমি বিস্বাস করো। পেঁচিটা বেশি চালাকি কত্তে গিয়ে আমাদের সবাইকে ফাঁসালো। ওই তো, মদনবাবু আসচে। ওকেই জিজ্ঞেস করো।
নারায়ণ : মদন আবার এর মধ্যে কি করে এলো?
(মদনের প্রবেশ)
মদন : এই যে নাটের গুরু! তোমাকে ধরে পেটানো উচিত।
পুলক : যাব্বাবা! তোমার সঙ্গে আবার কি করলাম?
মদন : কিছুই বুঝতে পারছো না, তাই না? সরাইখানা বলে এই বাড়িটা আমাদের কে দেখিয়ে দিয়েছিলো? তোমার বাঁদরামির জন্যে আমি দশরথকাকাকে মুখ দেখাতে পারছি না।
দামিনী : তোমার বোকামির জন্যে আমাদের সব প্ল্যান ভেস্তে গেল।
নারায়ণ : তোমার দোষে আমাদের বিয়েটা আটকে গেলো।
পুলক : ওরে বাবা রে! সবাই মিলে একসাথে attack করেচে রে! ও মা, আমায় বাঁচাও!
এলোকেশীর গলা শোনা যায় : পুলু! দামিনীকে নিয়ে এক্ষুনি নীচে আয়। ট্যাক্সি এসে গেছে।
পুলক : হ্যাঁ যাই!
দামিনী : আমি যাচ্ছি। জানিনা আর কোনোদিন দেখা হবে কিনা।
নারায়ণ : এ হতে পারে না! দামিনী একজন সাবালিকা! আমি কেস করবো। বুড়িকে জেল খাটাবো।
মদন : একটা গামবাট ছেলের বোকামির জন্যে আমরা তিনজন suffer করছি। (পুলককে) কি হে পুলকচাঁদ, দেখে মজা পাচ্ছো তো?
পুলক : আরে দূর মশাই। সারাক্ষণ ব্যাকর ব্যাকর করবেন না তো। আমায় এট্টু ভাবতে দিন।
মদন : সব কিছু ঘেঁটে দেবার পর ভাবার আর কি আছে হে গবেট?
পুলক : ইয়াহু! পেয়েচি! কে বলে আমার মাতায় বুদ্দি নেই? শালা ভানুমতীর খেল দেখিয়ে দেবো। ক্ষমা করো ভাইসব। এখন আমায় যেতে হবে। এই পুলকচাঁদকে এখনো চেনোনি তোমরা। দিগে, এই হতভাগা দিগে! আমার জুতো কোতায়?
(পুলকের প্রস্থান)
Scene 11
(দশরথ ও চরণদাসের প্রবেশ। চরণদাস দশরথেরই বয়েসী। পরণে স্যুট বুট, মুখে সিগার)
দশরথ : হা হা হা! তোর ছেলের কাণ্ড মনে পড়লে এখনো হাসি পাচ্ছে রে চরণ! আচ্ছা বল দেখি, এমন ভুলও কেউ করে?
চরণদাস : আসলে তোকে কোনোদিন দেখেনি তো। কি করে বুঝবে বল?
দশরথ : সেটা অবশ্য ঠিক।
চরণদাস : তোর মেয়েকে কিন্তু ভারী সুন্দর দেখতে হয়েছে। কথাবার্তাও কি মিষ্টি। মদনের সঙ্গে লবঙ্গর আলাপ করিয়ে দিয়েছিস তো?
দশরথ : আমাকে আর করাতে হয়নি, তারা নিজেরাই আলাপ করে নিয়েছে।
চরণদাস – বাঃ, খুব ভালো। আজকালকার ছেলেমেয়েরা বিয়ের আগে নিজেদের মধ্যে আলাপ পরিচয় করে নিতে পছন্দ করে। সেটা অবশ্য ভালোই। বিয়ের পর বলতে পারবে না যে বাপ-মা জোর করে ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে।
দশরথ : তা যা বলেছিস। তবে আমার মনে হয় ওদের মধ্যে already একটা understanding হয়ে গেছে।
চরণ : তাই নাকি? সে তো খুব আনন্দের কথা। তোকে কে বললো? লবঙ্গ বুঝি?
দশরথ : আরে না না। আসলে আজ সন্ধ্যেবেলা হঠাৎ চোখে পড়ে গেল ওরা হাতে হাত রেখে কথা বলছে। তাই মনে হলো।
চরণ : তাই নাকি? কিন্তু মদন তো চিরকালই মেয়েদের ব্যাপারে অসম্ভব লাজুক। ওর এত improvement হোলো কবে থেকে?
দশরথ : লাজুক? কিন্তু আমার তো ওকে বেশ smart ই মনে হোলো। ওই তো, মদন এদিকেই আসছে। ওকেই জিজ্ঞেস করা যাক।
(মদনের প্রবেশ)
মদন : কাকাবাবু, আপনি আমায় ক্ষমা করেছেন তো?
দশরথ : আমি তোমায় অনেক আগেই ক্ষমা করেছি বাবা। তুমি তো আর জেনেশুনে কিছু করোনি।
চরণ : কি রে, লবঙ্গকে তোর কেমন লাগলো?
মদন : ইয়ে, ভালোই তো।
চরণ : বেশ আলাপ পরিচয় হয়েছে তো?
মদন : ওই সামান্য আর কি।
দশরথ : সামান্য? কি বলছো মদন? তার হাতে হাত রেখে কথা বলার পরও তুমি সামান্য পরিচয় বলছো?
মদন : আপনি কি বলছেন কিছুই বুঝতে পারছি না কাকাবাবু। লবঙ্গলতার সঙ্গে আমার একবারই দেখা হয়েছে। সেটাও খুবই কম সময়ের জন্য। তার মধ্যে তার হাত ধরার কোনো প্রশ্নই ওঠেনি।
চরণ : খুবই confusing ব্যাপার।
দশরথ : কিন্তু আমি যে নিজের চোখে দেখলাম…
চরণ : ক্ষমা করবেন কাকাবাবু। এসব কথা শুনে খুব বিব্রত বোধ করছি। কিন্তু আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে লবঙ্গলতার সঙ্গে আমার কোনোরকম ঘনিষ্টতা হয়নি। আমি যাচ্ছি বাবা।
(মদনের প্রস্থান)
দশরথ : তোর ছেলে তো দেখছি অভিনয়টা ভালোই করতে পারে।
চরণ : মানতে পারছি না দাশু। মিথ্যে কথা বলে ওর কি লাভ বল?
দশরথ : কিন্তু আমি যে নিজের চোখে দেখলাম…ওই তো, লবঙ্গ এদিকেই আসছে। ওকেই জিজ্ঞেস করে দেখা যাক। (লবঙ্গকে) লবঙ্গ, শোন তো মা।
(লবঙ্গলতার প্রবেশ)
লবঙ্গ : কি বলছো বাপি?
দশরথ : সত্যি করে বল তো মা, মদন কি তোকে পছন্দ করে?
লবঙ্গ : হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
চরণ : লজ্জা কোরো না মা, তুমি বলো। এটা জানা আমাদের খুবই দরকার।
লবঙ্গ : আমার ধারণা খুবই পছন্দ করে।
দশরথ : শুনলি তো চরণ?
চরণ : সে কি আজ তোমার…ইয়ে, হাত টাত ধরেছে?
লবঙ্গ : হ্যাঁ, ধরেছে।
দশরথ : কি রে চরণ, শুনলি তো?
চরণ : কিন্তু তোমার সঙ্গে তো তার মাত্র একবারই দেখা হয়েছে।
লবঙ্গ : না তো। অনেকবার দেখা হয়েছে।
দশরথ : (চরণকে) শোন শোন!
চরণ : কি আশ্চর্য, দুজনের কথা তো একেবারেই মিলছে না!
লবঙ্গ : এক কাজ করুন। ঠিক আধঘন্টা পর আপনি আর বাপি দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনবেন। তাহলেই প্রমাণ হয়ে যাবে কে সত্যি বলছে।
চরণ : সেটাই ভালো হবে। সত্যি ঘটনাটা তো আমাদেরও জানা দরকার।
লবঙ্গ : ঠিক আছে। আধঘন্টা পর দেখা হচ্ছে।
Scene 12
(এলোকেশী আর পুলকের প্রবেশ। মঞ্চে আলো আঁধারি)
এলোকেশী : ওরে পুলু, এ কোথায় এলুম রে? আর যে পারিনা। গাড়িটা কতক্ষণে ঠিক হবে?
পুলক : তার আমি কি জানি? তকনই বলেছিলুম, রাত্তিরবেলা এতটা পথ যাওয়া ঠিক হবে না। কাল সকালে যেও। তুমিই তো কতা শুনলে না। জেদ ধরলে এক্কুনি যাবো। ন্যাও, এবার ঠ্যালা সামলাও! গাড়ি কখন ঠিক হবে কে জানে!
এলোকেশী : তুইই বা এমন একটা লজঝড়ে গাড়ি নিতে গেলি কেন?
পুলক : এত রাতে ট্যাস্কি পেয়েচ তোমার বাপের ভাগ্যি। আবার নতুন গাড়ি চাই!
এলোকেশী : রাগ করিস কেন পুলু? কদ্দূর এলুম রে?
পুলক : তা ছ’ সাত মাইল তো হবেই। হুই যে ওদিকে রণচণ্ডীর জঙ্গল দেকা যাচ্ছে।
এলোকেশী : রণচণ্ডীর জঙ্গল? ওরে বাবা! সে যে ডাকাতদের আখড়া! Very danger place!
পুলক : মাইরি তোমার ইনজিরি থামাও দিকি একন! চুপচাপ বসে থাকো। কতা কইলে তো শোনো না! চুপ, চুপ! কে যেন ইদিকপানেই আসচে।
এলোকেশী : ওরে বাবা! ডাকাত নয়তো?
পুলক : তা আমি কি করে জানবো? তুমি চুপচাপ এখেনে বসে থাকো, আমি দেকচি গিয়ে। খবদ্দার বাইরে বেরিও না। পেঁচিটাকেও গাড়ি থেকে নাবতে দিও না।
এলোকেশী : যাসনে পুলু! যদি তোকে ছুরি মারে? আমার খুব ভয় করছে। I very fear!
পুলক : আঃ! আবার বাওয়াল করচো! দেকচো না, লোকটা ইদিকেই আসচে? ব্যাটার মতলবখানা কি দেকি তো?
(এলোকেশী উইংয়ের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। দশরথের প্রবেশ)
দশরথ : মনে হোলো যেন লোকজনের গলার আওয়াজ পেলুম? কে ওখানে? আরে পুলু না? শান্তির বাড়ি যাসনি?
পুলক : গেসলুম তো। ওদের রেখে দিয়ে এইচি।
দশরথ : এতটা রাস্তা, এক্ষুনি গিয়ে ফিরে এলি?
পুলক : এলুম তো। রাস্তা ফাঁকা ছিল কিনা!
দশরথ : তা গাড়িটা এখানে কেন? ড্রাইভার কোথায়?
পুলক : ওদিকে কোতায় গেল। বিড়ি ফিড়ি ফুঁকচে মনে হয়।
দশরথ : গাড়ি থামিয়ে বিড়ি খেতে গেছে?
পুলক : হতেই পারে।
এলোকেশী : (একান্তে) হায় হায়! ডাকাতটা পুলুর কোনো ক্ষতি করবে না তো? কেন যে মরতে এলুম?
দশরথ : কিন্তু কারা যেন এখানে কথা বলছিল? এক্ষুনি শুনলুম।
পুলক : ও আমারই গলা।
দশরথ : তুই কি নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলেছিলি নাকি? মনে হচ্ছে গাড়ির মধ্যে কেউ আছে? তুই সর দিকি। আমি দেখবো।
পুলক : আরে, বলচি তো কেউ নেই ওখানে।
দশরথ : পথ ছাড় বলছি পুলু! আমাকে রাগাসনি! গাড়িতে কেউ নেই, না? তাহলে ওটা কে আসছে?
(এলোকেশীর প্রবেশ)
এলোকেশী : ও ডাকাতবাবু, আমার পুলুকে তুমি মেরো না গো। পয়সাকড়ি, গয়নাগাঁটি যা আছে সব তুমি নাও। শুধু আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও বাবা!
দশরথ : আরে, এলোকেশী না? ও এরকম করছে কেন? ওর কি হয়েছে?
পুলক : ওই, বেশি গরমে মাথাটা এট্টু খারাপ হয়েছে। ও কিচু না। তুমি যাও। আমি ঠিক সামলে নেবো।
এলোকেশী : বাবা ডাকাত। আমি তোমার মায়ের মতো বাবা! Mother বাবা, mother! মায়ের কথাটা রাখো বাবা। আমার পুলুকে ছেড়ে দাও।
দশরথ : কি ভুলভাল বকছ? এলোকেশী, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আমাকে চিনতে পারছো না?
এলোকেশী : এঁ্যা? তুমি? উঃ, বাঁচলাম বাবা! আমি তো মনে করেছিলুম…কিন্তু এত রাতে তুমি এখানে কি করছো?
দশরথ : মানে?
এলোকেশী : না, মানে বাড়ির থেকে এত দূরে…
দশরথ : দূরে? কি বলছো তুমি? নাঃ, মাথাটা সত্যিই গেছে দেখছি। নিজের বাড়ির রাস্তা চিনতে পারছো না?
এলোকেশী : ওমা, সত্যিই তো? ওই তো আমাদের বাগানের পাঁচিলটা। ওরে বজ্জাত পুলু! এতক্ষণ ধরে তুই এখানেই চক্কর খাওয়াচ্ছিলি আমাকে? কোথায় গেল সেই ড্রাইভার হতচ্ছাড়া? সেটাও নিশ্চয়ই তোরই স্যাঙাত? হায় হায়, এইভাবে বোকা বানালি আমাকে?
পুলক : বানালুমই তো! কিন্তু সেটা তো তোমার দোষ। আমাকে আদর দিয়ে দিয়ে বাঁদর কে বানিয়েচে শুনি? সে তো তুমি মামণি! এখন তার ফল ভোগ কত্তে হবে না?
এলোকেশী : তবে রে শুয়োর!
পুলক : বুড়ি ক্ষেপেছে রে! পালা পালা পালা!
দশরথ : হা হা হা! এত দিনে পুলু একটা সত্যি কথা বলেছে।
Scene 13
(দশরথ ও চরণদাসের প্রবেশ)
চরণ : আধঘন্টা তো প্রায় হয়েই এলো। চল দাশু, আমরা বরং এবার দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়ি।
দশরথ : হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। এবার সত্য উদঘাটন হতে চলেছে, বল?
চরণ : আশা করি। চুপ চুপ! ওই যে,লবঙ্গ আর মদন আসছে।
(দশরথ ও চরণদাস উইংয়ের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়)
(লবঙ্গলতা ও মদনের প্রবেশ)
লবঙ্গ : যা বলার সবই তো বলেছো। আর কেন?
মদন : তুমি আমায় ভুল বুঝোনা সোনা।
চরণ : (একান্তে) সোনা?
দশরথ : (নিচু গলায়) শোন, শোন!
লবঙ্গ : যা বোঝার আমি ঠিকই বুঝেছি।
মদন : না, বোঝোনি। বুঝলে এইভাবে কথা বলতে না। যদি জানতে যে তোমার থেকে দূরে সরে থাকতে আমার কত কষ্ট হচ্ছে!
চরণ : (নিচু গলায়) ওরে দাশু, এ যে ডুবে ডুবে জল খায়!
দশরথ : (নিচু গলায়) আমি বলিনি তোকে? হুঁ হুঁ বাবা, নিজের চোখে দেখা।
লবঙ্গ : আমি তোমার একটা কথাও বিশ্বাস করিনা।
মদন : আমার কথা তুমি বিশ্বাস করো না? তাকাও আমার দিকে। আমার চোখে চোখ রেখে বলো যে তুমি আমায় ভালোবাসো না?
লবঙ্গ : আমার ভালোবাসা না বাসায় তোমার কি আসে যায়? একটু পরেই তো তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। যাও তুমি! Leave me alone!
মদন : আমি তোমার উত্তর না জেনে কোত্থাও যাবো না। বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা?
লবঙ্গ : হ্যাঁ। ভালোবাসি। খুশি? আর কোনো প্রশ্ন?
মদন : Just আর একটা। আমাকে বিয়ে করবে?
লবঙ্গ : আমি কি জানি? বাপিকে বলো।
(দশরথ ও চরণদাসের প্রবেশ)
চরণ : নাঃ, আর আড়ালে থাকা গেলো না। (লবঙ্গকে) তুমি full marks পেয়ে পরীক্ষায় পাস করেছো মা।
দশরথ : তবে? বলিনি আমি?
মদন : এসব কি হচ্ছে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
দশরথ : কিছুই বুঝতে পারছো না, না? আড়ালে আমার মেয়ের সঙ্গে প্রেম করো, আর আমাদের সামনে এমন ভান করো যেন তাকে চেনোই না।
মদন : মেয়ে? এ আপনার মেয়ে?
দশরথ : কেন, কোনো সন্দেহ আছে নাকি? দেখ চরণ, মদন আবার হয়তো বলে বসবে, যে লবঙ্গকে ও চেনেই না! হা হা হা…
চরণ : যা বলেছিস! হা হা হা…
মদন : হে ধরণী, দ্বিধা হও।
লবঙ্গ : (মদনকে) এই, তোমার সঙ্গে একটু মজা করলাম। রাগ করলে নাকি?
মদন : (লবঙ্গকে) দাঁড়াও, বিয়েটা একবার হয়ে যাক, তারপর দেখবো কে কার সঙ্গে মজা করে।
লবঙ্গ : আমিও দেখবো, কলকাতার কত hot hot মেয়েরা তোমার পেছনে ঘুরঘুর করে।
মদন : আঃ, চুপ করো না! বাবার সামনে এসব কথা কি না বললেই নয়?
লবঙ্গ : কেন বলবো না? ওনারও তো সব কথা জানা দরকার!
দশরথ : এবার ওকে ছেড়ে দে মা। তোরা সবাই মিলে ওর পেছনে আর লাগিস না।
লবঙ্গ : That’s not fair বাপি! তুমি ওর হয়ে কথা বলছো?
দশরথ : নিশ্চয়ই বলবো! একশোবার বলবো! ভুলে যাস না, মদন আমার হবু জামাই!
চরণ : একচোখো আর আর কাকে বলে! ঠিক আছে, তোর জামাই তুইই রাখ বাবা! আমিও কেমন চমৎকার একটা মেয়ে পেয়ে গেলাম।
দশরথ : হা হা হা…আয় আয় দামিনী, কোথায় ছিলি এতক্ষণ? এসো নারায়ণ।
(নারায়ণ ও দামিনীর প্রবেশ)
নারায়ণ : এই শুভক্ষণে আমাদেরও permission টা দিয়ে দিন না কাকাবাবু।
দশরথ : কিসের permission?
নারায়ণ : বিয়ের। আমি আর দামিনী পরস্পরকে ভালবাসি। বিয়ে করতে চাই।
দশরথ : কি রে দামিনী, তুই নারায়ণকে বিয়ে করতে চাস?
দামিনী : হ্যাঁ মামা।
দশরথ : যব মিঞা বিবি রাজি, তো কেয়া করেগা কাজী! আমি সানন্দে মত দিলাম। তবে বিয়ের পরে যেন আবার দুজনে মিলে কোথাও পালিয়ে যাস না, কেমন? হা হা হা…
দামিনী : ওঃ মামা, তুমি না!
দশরথ : আজ আমার বড় আনন্দের দিন রে মা। আমার দুই মেয়েই বিয়ে করে সুখী হতে চলেছে। আয় আয় পুলু।
(পুলকের প্রবেশ)
পুলক : এ কি! আমি এসে পৌঁচনোর আগেই হ্যাপ্পি এন্ডিং হয়ে গেলো? এই নে পেঁচি। তোর গয়নার বাস্কো। মা পাটিয়ে দিলে। গয়না গয়না করে হেদিয়ে করছিলি।
দামিনী : মামী পাঠিয়ে দিল? মামী সত্যিই great! তুমিও great পুলুদা! আর কোনোদিন তোমায় জ্বালাতন করবো না।
পুলক : খবদ্দার পেঁচি। সেন্টু দিবি না বলছি। এই দ্যাকো না মা, পেঁচিটা কেমন সেন্টু দিয়ে কতা বলচে।
(এলোকেশীর প্রবেশ)
এলোকেশী : বলি তোমরা কি শুধু বকবকই করবে? খেতে টেতে হবে না? You no eat? দিগে কতক্ষণ খাবার নিয়ে বসে থাকবে, হ্যাঁ?
দশরথ : আজকের এই আনন্দের দিনে ওদের একটু আশীর্বাদ করো এলোকেশী।
পুলক : আগে পেন্নাম করুক, তবে তো আসিব্বাদ! যা যা পেন্নাম কর সবাইকে। আমাকেও বাদ দিসনি। আমি তোদের বড় দাদা বলে কতা!
দশরথ ও চরণ : আরে থাক, থাক। আশীর্বাদ করি, তোমরা সুখী হও।
এলোকেশী : সবাই সুখে ঘর সংসার করো। মেয়েরা নিজেদের গয়নাগাঁটি সামলে রেখো। আজকাল আলমারীর থেকেও গয়না চুরি যায়।
পুলক : হি হি হি…আইব্বাস! সত্যি সত্যি পেন্নাম করলি যে! থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ! আয় আয় দিগে, তুইই বা বাদ যাস কেন?
(দিগম্বরের প্রবেশ)
দিগম্বর : শোনলাম দিদিমণিদের নাকি বে’ হচ্ছে? খুব ভালো। তা বে’ হওয়ার আগে এট্টু খেইয়ে নিলি ভালো হতো নি? আমারও তো খিদা পায়, না কি?
দশরথ : চলো চলো, সবাই খেতে চলো। অনেক রাত হলো। আর হ্যাঁ। দর্শকবন্ধুদের অনুরোধ করি, আপনারাও ওদের প্রাণভরে আশীর্বাদ করুন। সবাই ভালো থাকবেন।
*************************
সমাপ্ত
*************************
Influenced by : She Stoops to Conquer by Oliver Goldsmith
Screenplay : Rini Basu