সেদিন ভোরে একটি ছোট্ট রংবেরঙের পাখী,
হঠাৎ দেখি উড়ে এসে বাতায়নে দেয় উঁকি ।
বলে আমায়–ওগো মানুষ তুমি ত’ বেশ সুখী,
তোমার সুখের রহস্যটা বলবে আমায় নাকি ।
শুধাই আমি– বিহঙ্গম তুমি কেমন করে ,
দিলে পাড়ি আমার মনের গহীন সুখের নীড়ে !
হেসে বিহগ বললে – যেথায় যাই গো আমি উড়ে,
সেথায় কেবল দেখি মানুষ ভাসছে অন্ধকারে।
উপর থেকে তোমায় হেরি’ অবাক হলেম ভারী,
তোমার চোখে মুখে যেন সুখের আলোর সারি।
হেসে আমি বলি তারে – ঠিক ধরেছ পাখী,
আশেপাশে সবার চেয়ে আমি অনেক সুখী।
হৃদয় মাঝে খুঁজি আমি খুশীর ঠিকানা,
স্বল্পেতেই তৃপ্ত হবার মন্ত্র আমার জানা।
প্রাণভরে শ্বাসটি নিতে পারি অহর্নিশ,
মন্দিরে নয় হৃদয়েই মোর বাস করেন ঈশ।
তাঁর পূজাই আমার মনের শুদ্ধ অনুশীলন,
তাই ত’ আমার চোখেমুখে আলোর উচ্ছলন।
তবুও আমার মনে হয় ওগো ছোট্ট পাখী,
আমার থেকে তুমি বুঝি আরো অনেক সুখী।
ছোট্ট দুটি ডানা মেলে নীল আকাশের পরে,
যখন তুমি যাও গো উড়ে দেখি নয়নভরে।
ভাবি তখন মোরও যদি থাকত এমন ডানা,
আমিও কি আর শুনতাম এই চার দেওয়ালের মানা !
মেলে দিতেম আপন শরীর দূর আকাশের বুকে,
উড়ে যেতেম বহু যোজন হিয়ার অপার সুখে।
হেসে পাখী বলে – মানুষ, এই তোমাদের ভ্রম,
সুখী হয়েও তোমরা বল খুশী হলেম কম।
এই ধরণীর সকল জীবই ভগবানের সৃষ্টি,
কারোর প্রতিই নেই তাঁর কোনই অসম দৃষ্টি।
তোমার পক্ষে যে কাজটি সহজসাধ্য বটে,
আমার পক্ষে হয়ত সেটি সম্ভব নয় মোটে।
প্রতি জীবের তরে তাঁর গণ্ডী আছে আঁকা,
তোমার জন্য চার হাত পা, আমার আছে পাখা।
আর এমন করেই চরাচরের সঠিক ভারসাম্য,
রক্ষা করেন সৃষ্টিকর্তা–হয় না তারতম্য।
মেলল ডানা ছোট্ট পাখী সুদূর নীলাম্বরে,
যাবার আগে দিয়ে গেল চরম শিক্ষা মোরে।
সুখ কথাটি ছোট্ট হলেও বিস্তৃতিতে বিশাল.
সত্য বুঝি অসম্ভব পাওয়া তারই নাগাল।
আমার মনের সুখ হয়তো অন্য কারো দু:খ,
সুখ কথাটির সংজ্ঞাটি তাই বুঝি অসীম সূক্ষ্ম।
মনের ডানা দিলেম মেলে সিদ্ধি সন্ধানে,
নির্নিমেষে তাকিয়ে থাকি নীল আকাশের পানে।
সুখ ত’ বুঝি লুকিয়ে আছে উজল তারার মাঝে,
সুখী আমি–এই গরব আর কি আমার সাজে !
রঙবেরঙের ঐ ছোট্ট পাখিই মোদের দিশারী,
তার দেখানো পথেই এস সুখের খোঁজ করি।