রবিবারের দিনটা সকাল থেকেই ছিল মেঘাচ্ছন্ন, যেন আকাশের মুখ ভার। গুরুজনেরা বলেন, সকাল দেখেই নাকি বোঝা যায় যে সারা দিনটা কেমন যাবে। যদিও এদিনের সকাল দেখে একদমই বোঝা যায়নি এর শেষটা কি নিদারুণ হতে চলেছে, বিকেল পর্যন্ত বোঝাই যায়নি রবিবারের রাতটা ভরে যেতে চলেছে নিকষ কালো অন্ধকারে। রবিবার রাত ৮টা ৪৫-এ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ভারতীয় ক্রিকেটের বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া । বয়স হয়েছিল ৭৫।
এটা কারও অজানা নয়, যে কয়েকমাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন বি.সি.সি.আই তথা সি.বি.আই প্রেসিডেন্ট মি. ডালমিয়া । অসুস্থ শরীর নিয়েও এই যুগ্ম দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন তিনি। ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের অনুপ্রেরণাই তাকে এই দায়িত্ব পালন করে যেতে সাহায্য করেছে। মাত্র ৩ দিনের রোগভোগের পরেই অন্তিম যাত্রা, যে যাত্রায় সামিল হলেন বাংলার তথা সারা দেশের তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বরা। মৃত্যুর খবর পেয়েই হাসপাতালে আসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সহ অনেকে।
সাতের দশকে বিশ্বনাথ দত্তের হাত ধরে সি.এ.বি প্রশাসনে এলেও বি.সি.সি.আই-এ যোগ দেন ১৯৭৯ সালে। ১৯৮৩ সালে ভারত প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতার বছরই বোর্ড-এর কোষাধ্যক্ষ ও পরে সচিব পদে দেখা যায় তাকে। এরপর-ই ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথমবারের জন্য বিশ্বকাপ আয়োজনে বড় ভূমিকা নেন তিনি। দূরদর্শন-কে ক্রিকেট সম্প্রচারের জন্য বিপুল অর্থ দেওয়ার পরিবর্তে টি.ভি সম্প্রচারের সত্ত্ব বিক্রি জন্য সচেষ্ট হন তিনি, যাতে বি.সি.সি.আই লাভের মুখ দেখে। এহেন ক্রিকেটের দক্ষ পরিচালক ১৯৯৭ থেকে ৩ বছর আই.সি.সি.-র ও ২০০১ থেকে ৩ বছর বি.সি.সি.আই-এর প্রেসিডেন্ট পদে বহাল ছিলেন। ২০১৩ সালে স্পট ফিক্সিং কাণ্ড প্রকাশ্যে আসাতে তিনি বোর্ড-এর অন্তর্বর্তী কালীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মার্চ, ২০১৫-এ অবশ্য পূর্ণ সময়ের জন্য বোর্ড প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।
বাঙালি ক্রিকেটের ক্যামব্যাক বলতে সৌরভ-কে বুঝলেও ৭৫-এর(বয়স) দোরগোড়ায় ডালমিয়া -র বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে ক্যামব্যাকও খুবই উল্লেখযোগ্য। অনেক সমীকরণ বদলে দিয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। আর হয়েই তার সাধের ‘ইডেন’-কে এনে দেন টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল আয়োজনের সুযোগ। তার দ্বিতীয় ইনিংস খুব বেশী সময় স্থায়ী না হলেও ভারতীয় তথা আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রিকেটের দুর্দান্ত এক প্রশাসক হিসেবে তাকে মনে রাখবে ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলি। ভারতীয় ক্রিকেটের পথপ্রদর্শক হিসাবে তার বিপুল অবদানের কথাও ভোলবার নয়। প্রশাসক হিসেবে তার সময়কাল শেষ হলেও তার করে যাওয়া কাজের বাগানে ফুল ফুটবে চিরকাল।