কিছু মানুষের জীবনের সব আলো কেড়ে নিয়ে রাতের অন্ধকারের মতো অনুজ্জ্বল করে দেয় এই ছাদ; পড়ে থাকে শুধু টিম টিম করা তারা গুলি যা পুরোনো স্মৃতি গুলোকে সর্বক্ষণ মনের ভিতর নারা দেয়।
তখন কি অবিভাবক বা আশ্রয় হিসেবে সত্যিই ছাদকে চিহ্নিত করা যায়?
কত কিছু বলার ছিল মা-কে, কিন্তু কেউ আমাকে দেখাই করতে দেয় না। তোমরা কেন বুঝতে চাওনা যে আমি কারোর ক্ষতি করতে চাই না। আমি বারবার তোমাদের বলার কত চেষ্টা করি। তোমরা বুঝতে পারো না কেন? আমার মনের মধ্যে কত কথা জমে আছে। জানো কি?
এখানে কেউ আমার কথা শুনতে পায় না। কেউ আমাকে আদর করে না। কেউ কাজু দিয়ে গুড়ের পায়েস বানিয়ে খাওয়ায় না। আমার জন্মদিন কারোর মনে নেই। কেন বলতো?
আমার নীল-হলুদ রঙের দেওয়াল গুলো অন্ধকারে কালো হয়ে গিয়েছে । ভেজা মাটির মতোন গন্ধ। ছোট্ট একটা জানলা। বড্ড উঁচু। এক চিলতে রোদ যখন জানলা দিয়ে এসে মুখের উপর পড়ে তখন যেন প্রান জুরিয়ে আসে। জানো? আমার এই নতুন ঘরের রং-টা একেবারে বর্ষা কালে স্যাৎস্যাতে কলতলার শ্যাওলার মতো। এখানে একটা দেওয়ালের বদলে খাঁচা আছে। ডোরা ডোরা দাগ কাটা। আমাকে যেন এখানে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কেউ আমার সাথে কথাই বলে না, শুধু একটা অ্যান্টি (aunty) আসে আর বলে যে মা নাকি আমাকে রোজ দেখতে পায়। কিন্তু কথায় আমি-তো মা-কে দেখতে পাই না!
জানো ওই অ্যান্টি (aunty) আমাকে রোজ জিজ্ঞাসা করে যে মা কিভাবে পড়ে গেল? আমি তো বলি কিন্তু তিনি শুনতেই পায় না। একটা পচা আঙ্কেল (uncle) আছে, আমাকে শুধু ‘বোবা বোবা ‘ বলে ডাকে, আর আমার তখন মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি তো কথা বলি! এই যেমন তোমাদের সাথে কথা বলছি।
যবে থেকে এখানে এসেছি তবে থেকেই
মা-কে দেখতে পাই না। ভালো অ্যান্টি (aunty) বলে যে যখনই মায়ের কথা পড়বে তখনই ওই যে! ওই তারা টা কে দেখতে। কিন্তু ওই দিকে তাকালে আমার শরীর যেন শিউরে ওঠে। মনে পড়ে সেই দিনের কথা। আমি মায়ের সাথে কানামাছি খেলছিলাম আমাদের নতুন বাড়ির ছাদে। মা আমাকে ধরছিল। আর আমি লুকিয়ে গিয়েছিলাম ফুলের টব-এর পিছনে। আমি বসেই ছিলাম, ভাবছিলাম যে ‘এবার মা আমাকে আর খুজে পাবে না!’ মা সত্যি সত্যিই আর আমাকে খুজে পেল না।
আমি যখন খুঁজতে গেলাম, তখন দেখি মা ছাদ থেকে একেবারে নিচে চলে গিয়েছে। দেখলাম মা নিচে পড়ে আছে। আমি মা-কে ধরার জন্য গেলাম নিচে। মা-কে ডাকলাম,” মা! মা! এই চলে এসেছি আমি। এবার আমি তোমায় ধরবো। চোখ খোল! চোখ খোল!” সেইযে মা একবার চোখ বন্ধ করল, তার পর থেকে আমি রোজ আকাশের দিকে তাকিয়ে মা-কে দেখি।
হয়তো কেউ আমার কথা শুনতে পায় না, কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই শুনতে পাও মা।