কোড নেম প্রমিথিউস

ফিনিক্স, সেই মৃত্যুঞ্জয়ী পাখি, যার আগুনের মধ্যেই মৃত্যু, আর পুনরুত্থানও ঘটে অগ্নিশিখার পর পড়ে থাকা ছাইয়ের মধ্যে থেকেই। জিপসি সেই আগুনের মধ্যেই অন্তর্হিত হয়েছে এবং পৌঁছে গিয়েছে তার গন্তব্যে। কিন্তু, কীভাবে এই অলৌকিক ঘটনাটা ঘটল, সেটা বোধ হয় আর জানা হবে না কারোর…

পেছন থেকে হঠাৎ একটা নরম হাতের চাপ পড়ল আমার কাঁধে। দেখলাম, ঝিনুক দাঁড়িয়ে আছে। চোখ গুলো বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেছে। আমি কিছু বলার আগেই সে বলে উঠল, “তাহলে আমি অমর নই? আর পাঁচটা মানুষের মতনই?”

বুঝলাম, সে সব কথাই শুনেছে, দেখেছে। আর তার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই। লুকোতেও চাই না আমি।

আমি ঘাড় নাড়লাম। ঝিনুক আনন্দে লাফিয়ে উঠল।

আমি ওর উচ্ছ্বাস দেখে হেসে ফেললাম। তারপর ওর মাথার চুলগুলো ঘেঁটে দিতে দিতে বললাম, “শুধু তোমার হাতদুটো থেকে আমাকে সাবধানে থাকতে হবে।“

এই প্রথম ঝিনুক লজ্জা পেল। চটজলদি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে সে বলল, “পাগল।“

আমি ফিরে তাকালাম সমুদ্রের দিকে। ভোরের আকাশে অরুণ উঠে এসেছে সমুদ্রের কোল থেকে। আকাশের রং, একটু আগেই দেখা ফিনিক্সের লাল আগুনরঙা পালকের মত দেখাচ্ছে। কে জানে, তারা কোন অদৃশ্য, কোন অজানা দুনিয়ায় হারিয়ে গিয়েছে সেই আগুনের মধ্যে দিয়ে… হয়ত, এরকমই কোনও এক সমান্তরাল পৃথিবীতে পাখিটা তার মালিককে নিয়ে গিয়ে ককেশাসের কোথাও নামিয়ে দিয়ে তার কাঁধে বসে ঠোক্কর দিচ্ছে, আর মাঝে মাঝেই মিষ্টি শিস দিয়ে উঠছে। তার মালিক, আগের মতই তাকিয়ে রয়েছে সুদূর ভবিষ্যতের দিকে, উজ্জ্বল স্বপ্নময় নীল চোখে। সেই দৃষ্টিতে আগামীর কোন ঘটনা, কোন যুগান্তকারী ঘটনাবলী ফুটে উঠছে তার চোখের সামনে, একমাত্র সেই বলতে পারে। আর কেউ না।

কে আমরা এই বিশাল মহাবিশ্বে? কত বড়ই বা আমরা, যে অনিশ্চিত, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ অজানা ভ্যারিয়েবলে মোড়া এই তাসের ঘরের মত ভবিষ্যতটাকে দেখতে চাই? কতটাই বা আমাদের দম্ভ, যে আমরা ঈশ্বরের সৃষ্টির ওপরেও কলম বুলিয়ে সৃষ্টি করতে চাই? ঠিক কোথায় আমাদের কৌতূহলের শেষ?

তবু, সেই বুঝেছিল। সেই বুঝেছিল, যে জানার থেকে বড় অর্থহীন কিছু নেই। কারন জানার শেষ হয় না। সবকিছু জেনে ফেলতে নেই এই কারণেই, কারন সব জেনে গেলে আর জানার জন্য আমাদের এই ভবিষ্যতের দিকে ছুটে চলাটা, সেই গতিটা আর থাকে না।

তাই, যতই দুঃখ থাকুক, মাথা উঁচু রেখে সামনে, ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। সে করে দেখিয়ে দিয়েছিল। আর দুই হাজার বছর পড়েও আজ, সেও অপেক্ষা করছে, তার মতই আরও একজনের করে দেখানোর জন্য…

আমার মুখ থেকে অস্ফুটেই বেরিয়ে এল, “মেকরি না ডুওমে যানা, প্রমিথিউস।“

 

~ কোড নেম: প্রমিথিউস (পর্ব ২২) ~

— শেষ —

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleবুভুক্ষু
Next articleঅস্ফুট
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments