আধুনিক মানুষ আমি, নিজ রোজগারেতে বাঁচি,
তবুও তোমার চোখের কটাক্ষে, আয়নায়ে নিজের শরীর যাচি।
জন্মেছিলাম যখন আমি রাজকন্যার ন্যায়,
বল্লে তুমি এ মেয়ে সকলের মন করবে জয়ে।
অবুঝ মন, বুঝল না, ভাবল ভালোবাসা,
তোমার প্রশংসায়ে ভর করেই স্বপ্ন বাঁধল বাসা।
তবে বয়সন্ধিতে যখন, বদলালাম আমি,
দেখতে পেলাম তোমার চোখে শরীরটাই দামী।
পুজার জামা কিনতে গিয়ে পড়ে দেখতে হত।
কি জানি কখন উন্মুক্ত চর্বীর পরতে তোমার মুখ হবে বিক্রিত।
জুতোর দকানে ঢুকতে গিয়ে উঁচু জুতোর দিকে তাকাই ,
হালফ্যাশনের বৈচিত্র ঠেলে তোমার চোখে নিজের উচ্চতা বাড়াই।
নাকটা বোঁচা, চোখটা ছোট, দেখতে নই আহামরি,
তাই শারীরিক খুঁত ঢাকতে আমি আস্ত্রপচার করি।
বাইশ বছর প্রশিক্ষণে যখন নিজেকে নৃত্যশিল্পী ভাবি,
তুমি বললে “অমন স্থুল শরীরে আবার নৃত্য হয়ে নাকি ?”
অনেক কষ্টে অভিমানে যখন হলাম শীর্ণ কায়,
তখন তোমার চোখে আমার শরীর কঙ্কালের তুলনা পায়ে।
গায়ের রঙ টা বেজায়ে কালো, অন্ধকার বটে,
প্রসাধনী রঙের ছটায়ে শ্যামলা হয়ে ওঠে।
তুমি বলও গায়ের রঙ মনের প্রতিচ্ছবি,
তাই তো তোমার কৃষ্ণ নীল আর ফরসা দ্রৌপদী।
অবাক হয়ে ভাবি আমি সুন্দর কারে কয়?
পাশ্চাত্যের শারীরিক কাঠামোই কেন প্রশংসনীয় হয়?
অন্যরকম হলেই কেন কুশ্রী তকমা পায়ে,
নারী পুরুষ নির্বিশেষে সৌন্দর্যের কাঠগড়ায়ে দাঁড়ায়ে।
শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, মান ও হুঁশ থাকলেই মানুষ হওয়া যায়,
শরীরটা তো তাৎক্ষণিক, কালের গতিতে পৃথিবীরও বদল হয়।
তবে আজ মনুষ্যত্ব হারিয়েছে, জিতেছে মেকী হাঁসি,
অন্তরের চেয়ে আজ মোরকের কদর বেশি।
দৈহিক আড়ম্বরের কাছে, আবেগ অনুভুতিরা ধরাশায়ী,
তাই শিক্ষকের লাল কালির চেয়ে আজ ঠোঁটের রঙই বেশী দামী।