খাব খাব করে সদা বাঙালীর মনটা,
রেগে যায় যদি কেউ খেতে দেয় ঘন্টা।
ফোকটে খাবার পেলে দাঁড়ায়ে ত’ ঠায়,
কচুপোড়া দিলে পাতে শুধু গালি দেয়।
বাঙালী পেটুক ভারী আছে নাকি সন্দ,
দেশী কি বিদেশী খানা নেই কোন দ্বন্দ্ব।
তবে ভাত ডাল পোস্ত-বড় একঘেয়ে,
পান্জাবী খানাতে জল আসে ধেয়ে।
চোখে জল,জিভে জল আর জল ঘামে,
নকুড়ের তালশাঁসে ঝাল বুঝি নামে।
গোলাপজামুন খায়–খায় পান্তুয়া,
পুরী গিয়ে খোঁজ করে কোথা কাকাতুয়া।
কাকাতুয়া থেকে কেনে মুঠোমুঠো খাজা,
খেতে ও খাওয়াতে ভাই বাঙ্গালীরা রাজা।
আলুর দমের সাথে গোল গোল লুচি,
ভাজাভুজি যাই দাও নেই অরুচি।
তেলেভাজা সিঙারা এঁচোড়ের বড়া,
নিমেষে উড়িয়ে দেয় ভাজা হলে কড়া।
মাদ্রাসী দোসা কি ইডলী সাদা,
বাঙালীর সাদা মনে নেই কোন কাদা।
উত্তপমটি পেলে খায় খুঁটেখুঁটে,
পায়সম–তাও বুঝি নেয় চেটেপুটে।
ঢোকলার নাম জান–গুজরাটী খানা,
পাওভাজী শিবাজীর–খেতে নেই মানা।
শীতকালে গুড় খায়–দুধপুলি পিঠে,
নারকেল নাড়ু খায় যদি হয় মিঠে।
শরীরে চিনিটি তবু মিষ্টিটি খেতে,
বাঙালীর জুড়ি নেই দিনে কিবা রাতে।
ফলাহারে ফল থাকে সাথে চিড়ে দই,
জলযোগে দেখি হায় জল মোটে নেই।
এ ত’ গেল নিরামিষ ভোজনের কথা,
আমিষ না খেলে পরে বাঙালীর ব্যাথা।
মাছেভাতে বাঙালী–কবে থেকে শুনি,
এস ভাই পদগুলি একে একে গুণি।
কাতলার মাথা দিয়ে ভাজা মুগডাল,
তার সাথে বড় বড় পার্শের ঝাল।
ট্যাংরার ঝোল খায় ফুলকপি দিয়ে,
তোপসের বড়া জমে যদি ভাজে ঘিয়ে।
সাগরের কাঁকডা–পলকে সাবাড়
তেলকই পমফ্রেট কি বা বাকী আর।
ইলিশ চিংড়ি আছে ছোট থেকে বড়,
ভেটকী কাতলা রুই সবই সড়গড়।
ঝোলেঝালে পাবদা মুইঠা চিতল,
ভাবলেই বাঙালীর জিভে আসে জল।
পাঁঠার মাংস মাগো জয় মা কালী,
ভক্তিতে গদগদ যত বাঙালী।
রুটি খেতে আজকাল নেই অনীহা,
অনেকেই বলে নাকি ভাল থাকে প্লীহা।
মুরগীর ঠ্যাং খায়, ডিম খায় রোজ
ফলাহারী বাঙালী–পাবে নাকো খোঁজ।
কব্জি ডুবিয়ে খায় ছুটির কদিন,
বিয়ে বাড়ী পড়লেই তাক ধিনা ধিন।
রোল খায় ফ্রাই খায় মোগলাই খানা,
খেতে ভালবাসে সে বাটোরা ও চানা।
আর বিদেশী আহার–সে যায় কম কিসে !
বার্গার,পিজা,মোমো খায় ভালবেসে।
তবে নৈব নৈব চ আরশুলা ব্যাঙ,
খায় না কখনো সে ফড়িঙের ঠ্যাঙ।
চাউমিন খায় বটে চাইনিজ প্রিয়,
ধন্য বাঙালী তুমি যুগ যুগ জিও।
সিগারেট বিড়ি খায় গাঁজা তাড়ী মদ,
তবে ভাই নেশাগুলি সত্যিই বদ।
আরো দেখি কতশত খাওয়া আছে বাকী,
পালটিটা খেতে কারো জুড়ি নেই নাকি !
হিমশিম খায় যদি পড়ে মুস্কিলে,
চোখমুখ লাল হয় গালাগালি খেলে।
তেলেজলে মিশ খায় পেলেই সুযোগ,
চুকলিটা খাওযা জেনো বাঙালীর রোগ।
সুদ খায় ঘুষ খায় দাঁও বুঝি পেলে,
খাবি খায় যদি কেউ ডুবে যায় জলে।
কেউ কেউ তাড়া খায়,কেউ থতমত,
হাঁটতে হোঁচট খায়,ভিড়েতে গুঁতো।
কিল চড় লাথি ঘুষি পুলিশের লাঠি,
আর বিষমটা খেলে লাগে দাঁতকপাটি।
চাবুকটা খায় কেউ,কেউ খায় গুলি,
গলায় ধাক্কা খেয়ে বড় বড় বুলি।
নুন খেলে গুণ গাও সেই কবে শেখা,
ধোঁকা খায় ঘোল খায় যারা সৎ বোকা।
হুমকিটা খেলে কেউ কেঁদে ফেলে ভয়ে,
রোগা হাড়ে থাপ্পড়–খেলে যাবে নুয়ে।
ধমক বকুনি খায় ভালবেসে চুমা,
ডিগবাজী খেয়ে কেউ খুলে ফেলে জামা।
আদাজল খেয়ে তুমি লাগবে কি নাকি !
কানমলা খেয়ে বলো মারবে না ফাঁকি।
ভ্যাবাচাকা খেয়ো নাকো যেও নাকো ভড়কে,
রাবড়িটা বেশী খেলে যেতে পার হড়কে।
মাথা খাও বলে কেউ দেয় বুঝি বাধা,
দইয়ের মাথা খাও লাল হোক সাদা।
তবে এসব খাবার খেতে সব্বাই পাকা,
নয় শুধু বাঙ্গালীরা দুনিয়ায় একা।
তবলাটা ভালো বাজে যদি খায় চাঁটি,
বেহালা মোচড় খেলে খোলে বাজনাটি।
ঘটি বাটি টোল খায় নীচে পড়ে গেলে,
হাসলেও টোল খায় মুখমণ্ডলে।
দিন আনে দিন খায়–গরীবের কষ্ট,
ভাবে হায় জীবনটা হল তার নষ্ট।
গরমেতে হাওয়া খায় শীতে কাঁপুনি,
কাদায় আছাড় খায়–বর্ষায় জানি।
খাপ খায় যদি হয় দুয়ে দুয়ে চার,
দুষ্টুমি করলেই খেতে হয় মার।
ঘুঁডি খায় গোত্তা বাতাসের চোটে,
পাক খেয়ে ভরাস্রোতে জেলেডিঙা ছোটে।
এমন কতই খাওয়া চারিপাশে ছড়িয়ে,
বসে যাও চটপট পেট দাও ভরিয়ে।
আজব আহার কত গুরুভোজ বটে,
পেটে ক্ষিধে মুখে লাজ কোরনাকো মোটে।
ছোঁকছোক না করে পাশে এসে বোসোনা,
আহামরি আহারে খুশী করো রসনা।
খাই খাই করে কেন জ্বালাতন করো !
তোমাদের তরে সব করে দিনু জড়ো।
সবকিছু মিলেমিশে যেন ভোজবাজী,
একবার খেলে হবে বারেবারে রাজী।
বেছেবুঝে খেয়ো সবে তবে সাবধান,
বেশী খেলে আইঢাই করবেই প্রাণ।
যদি ভাই খাবি খাও দুষোনা আমায়,
মহাকবি সুকুমার দিয়েছেন রায় !
তিনি মোর কবিগুরু–তাঁরই আদেশে,
কলমটি গিয়েছিল ভোজরাজ দেশে।
দেরী নয় খেতে শুরু করো এইবেলা,
পছন্দ হচ্ছে না–খাও কাঁচকলা।