স্কুলের দিনগুলি থেকেই স্বপ্নাকে ভালো লাগত সমীরের। ক্লাসের ছোটখাটো খুনসুটি, পেছনে লাগা, ক্লাস বাঙ্ক, ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডা দিতে দিতে কখন দুজন ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে, বুঝতেই পারেনি। একদিন স্বপ্নাকে না দেখে থাকতে পারত না সমীর। মনের কথা খুলে বলার পর স্বপ্নাও না করেনি।
স্কুল লাইফ শেষ করে একই কলেজে পড়তে যায় দুজনে। তাদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ক্রমে বিয়ের দিকে এগোতে চায় তারা। স্বপ্না বাড়িতে সমীরের কথা বলে। সমীরের সম্পর্কে সব কথা জানার পর বাড়িতে ঘোর আপত্তি করে। স্বপ্না কুলীন ব্রাহ্মণ বংশের মেয়ে আর সমীর বৈশ্য। নিচু জাতের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়, বাড়ি থেকে পরিস্কার জানিয়ে দেয়।
স্বপ্না বাপ-মায়ের সাথে তর্কাতর্কি করতে থাকে, বিয়ে করলে সমীরকেই করবে, অন্য কাউকে নয়। বাবার কাছে প্রচণ্ড মার খায় সে। সমীরের সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগ রাখতে বারণ করে দেন বাবা। কিন্তু প্রথম ভালবাসার টান কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারে না স্বপ্না। একদিন বাড়িতে টিউশন যাবার দোহাই দিয়ে সমীরের সাথে দেখা করে সব কথা খুলে বলে। ক্রমাগত কাঁদতে থাকে। সমীরও বুঝতে পারে না কি করবে। নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হয়। প্রথম প্রেমের আবেগ এত তীব্র ছিল যে দুজনে দুজনকে না পেলে বেঁচে থাকার কোন অর্থ খুঁজে পায় না। দুজনে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরদিন সন্ধেবেলা দুজনে এক নির্জন জঙ্গলে দেখা করে। স্বপ্না তার ব্যাগ থেকে একটা শিশি বের করে সমীরের হাতে দেয়। তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। আরেকটা শিশি বের করে নেয় নিজের জন্যে। তারপর শিশির মুখ খুলে দুজনেই ঢেলে দেয় গলায়। তারপর শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। পরদিন সকালে প্রচণ্ড মাথাধরা নিয়ে চোখ মেলে তাকায় সমীর। পাশেই শুয়ে আছে স্বপ্না।
তাকে ডাকতে থাকে, গা ঝাঁকাতে থাকে। কোন সাড়া নেই। প্রাণহীন নিথর দেহ। পাশে পড়ে থাকা বিষের শিশিটা দেখতে পায়। খানিকটা দূরে পড়ে আছে আরেকটা শিশি। এ কি! এটা তো কোন ওষুধের শিশি। নিজের ভালোবাসার মানুষটির মুখে বিষ তুলে দিতে পারেনি স্বপ্না। সমীরের বুকফাটা কান্নার সাক্ষী হয়ে থাকে আকাশ-বাতাস, গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি।