আজ এতদিন পর তোমাকে চিটি লেখার সাহস পেলাম। প্রায় ৫ বছর। গতকাল বাড়ি ফিরছিলাম দুপুরে, হঠাৎ উলটোঠাঙ্গার বাস স্ট্যান্ড দেখি  তুমি দাঁড়িয়ে। এই ক বছরে পালটাও নি খুব একটা। প্রায়ই মনে হয় তোমার মুখো মুখি হই, জিঞ্জাসা করি ভালো আছো তো? সাহস হয়নি।

এই রকমেই একটা গ্রীষ্ম ছিল সেটা। সবে কলেজে ভরতি হয়েছি। লাইব্রেরিতে তোমার সাথে প্রথম দেখা… তোম।র মনে আছে? কলেজের প্রতীকা টা তোমার হাতে ছিল, তাই চেয়ে নিতে হোল। তারপর কতবার এই লাইব্রেরিতে তুমি আমায় কবিতা পড়ে শোনাতে…… জীবনানন্দ দাশ, তোমার প্রিয় কবি।

বই আর নিস্তব্দতার মাঝে আমাদের প্রেম টা জমে উঠেছিল বেশ। সেই বিকেলেগুলোর কথা মনে পড়ে, ঝাউ বনের পাশের রাস্তায় হাঁটতাম। তুমি আমার হাত টা শক্ত করে ধরে রাখতে।  গোধূলির আলোয় তোমার বুকে মাথা রেখে মনে হত এই যে দূরে সাদা বকেদের সারি আর তেপান্তরের মাঠে এই যে সূর্য অস্ত যায়,তার মাঝে জীবনটা বড়ই সুন্দর। এখানে কাউকে ভালবাসা যায়, সমস্ত যন্ত্রনা ভুলে কারোর চোখে চোখ রেখে স্বপ্ন দেখা যায়।

কিন্তু সে স্বপ্ন পুরন হোল কই। বাড়ি থেকে আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেয়নি কখনো। আমি মুসলিম, তুমি হিন্দু- দূরত্বটা সময়ের, সমাজের। শেষের সময় তোমাকে একটা যুঁইয়ের চারা দিয়ে ছিলাম, বলেছিলাম- যত্ন করে রেখো। তারপর তোমার সাথে আর  দেখা হয় নি।

২ বছর পর শুনলাম তুমি বিয়ে করেছো। আশ্চর্য হয়নি। যা পাবার নয় তার আশায় আর বসে থেকে লাভ কি। আর আমি, আমার সবটুকু দিয়ে তোমায় ভালবেসেছি যে, বাকি রইলো কই যা অন্য কাউকে দেওয়া যায়।

আমার কথা তোমার আর মনে পড়ে না বোধহয়। এতদিনে আমার গায়ের চেনা গন্ধ, হাতের স্পর্শ মুছে গিয়েছে হয়তো। আর সেই যুঁইয়ের চারাটা

 

চিঠিটা শেষ করে ওটা হয়নি  অনীশার। বিতু ঘুম থেকে উঠে কাঁদছে পাশের ঘরে।

সে জানে সমাজের স্বীকৃতি বিতু কোন দিনও পাবে না হয়তো। কিন্তু নিশিতের দেওয়া এই  উপহারটা সে মুছে ফেলতে পারেনি কোনোদিন। সমস্ত যন্ত্রনা আর হারিয়ে যাবার মাঝে এটাই তার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল।

Print Friendly, PDF & Email
0 0 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments