পাহাড়ের তীরে দয়া নদী বহে স্বচ্ছ তাহার নীর,
তটিনীর ক্রোড়ে কলিংগ দেশ নীড় সুখশান্তির।
শত সহস্র নরনারী করে আনন্দে অধিবাস,
সহসা ঘনায় তাহাদের মাথে চরম সর্বনাশ।
মৌর্যশূর অশোকের সেথা ঝটিকা আক্রমণ,
রণহুঙ্কারে দুর্মদ সেনা–হস্তীর বৃংহণ।
নিমেষেই হায় শান্তির নীড় কলিংগ ছারখার,
রক্তিম রঙে রাঙিল তটিনী–চৌদিকে হাহাকার।
রহিল সাক্ষী নগনদী দয়া–অশ্রুর বরিষণ,
ভাবে সে নীরবে কেমনে মানব হয় এত দুর্জন !
বিন্দুসারের তনয় অশোক–মগধ নৃপতি তিনি,
চণ্ডাশোক নামেই তাঁহারে প্রথম জীবনে চিনি।
হত্যা করিয়া সহোদরে সবে–মগধ সিংহাসন,
চণ্ডাশোক উপাধি লভিয়া করিলেন আরোহণ।
নির্দয় ক্রুর আগ্রাসী তথা দুর্জয় রণবীর,
আরোহণ করি’ রাজাসনে তিনি কেমনে রবেন স্থির !
যে সকল নৃপ আসে নাই আজও মগধের পদতলে,
‘একে একে সবে বাঁধিব ত্বরায় বশ্যতা শৃংখলে।’
এমত ভাবিয়া চণ্ডাশোকের কলিংগ বিক্রম,
দয়া নদী সেথা নীর হায় কোথা শোণিতেই বুঝি ভ্রম।
আকাশ বাতাস শিহরিত হায় তীব্র আর্তনাদে,
কিন্তু কি হেতু হত্যালীলায় অশোকেরও হিয়া কাঁদে !
লক্ষ শবের মাঝারে নৃপতি–নাহি বুঝি সংযম,
ধিক্কার দেন আপনারে তিনি–পাপিষ্ঠ, নরাধম।
স্বীয় অংসেই বহন করেন হিংস্রতার দায়,
চণ্ডাশোকের চিত্তে সহসা এ কোন্ বিপর্যয় !
অস্থির হিয়া মগধাধিপতি আপনার মাঝে সুপ্ত,
এমত লগণে উপাগত পূত সন্ন্যাসী উপগুপ্ত।
তথাগত বাণী চণ্ডাশোকের হৃদয় করিল শুদ্ধ,
হিংসার পথ ত্যজিলেন নৃপ কণ্ঠে কেবলই বুদ্ধ।
করিলেন পণ–আমৃত্যু তিনি করিবেন জীবসেবা,
মানবের হিতে স্রোত বহে চিতে বুঝি প্রেমরূপ লাভা।
ধর্মাশোক হইলেন নৃপ–চণ্ডাশোকেতে যতি,
ইতিহাস কহে শ্রেষ্ঠ তাঁহারে–সম্রাট মহামতি।
হিমালয় তথা হিন্দুকুশ,ব্রহ্মপুত্র,পেন্নার–
কাশ্মীর আর সুদূর নেপাল,কাবুল,কান্দাহার।
সুবিশাল এই সাম্রাজ্য যেথা অশোকের বিচরণ,
সততই সেথা করিত বিরাজ শান্তির উপবন।
সুমহান নৃপ অশোক শাসনে স্বর্গসুখের চিত্র,
প্রতিবেশী সাথে সখ্যতা সদা–বিদেশী শক্তি মিত্র।
দয়া নদী তীরে রক্তক্ষয়ী কলিঙ্গ মহাযুদ্ধ,
হিংসাশ্রয়ী মৌর্য অশোক–অহিংসা পথে শুদ্ধ।
শান্তির দূত অশোক হিয়ায় প্রভু বুদ্ধের স্তব,
তাঁহার তুল্য তিনিই কেবল–ইতিহাসে দুর্লভ।
———————————————————
–স্বপন চক্রবর্তী।–