দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেলো, বুঝতেই পারিনি, বলা ভালো ইচ্ছে করেই খেয়াল করিনি কারণ আমি যে ছাইছিলাম রাতটা থাকুক যতক্ষণ ওর ইচ্ছে থাকুক, কালো হয়ে থাকুক। খেয়াল হল যখন রাত দুটোর সময় আমার অ্যালার্ম ঘড়িটা কর্কশ স্বরে ডেকে উঠল।
আমার ঘড়িটা প্রায় ৬৫ বছরের পুড়নো ঘড়ি হবে, WESTCLOX এর BABY BEN, দেখেই বোঝা যায় ওর অনেক বয়স হয়ে গেছে, টেবিল থেকে বার বার মুখ থুবড়ে পড়ে সারা শরীরটা বিশ্রী দাগে ভর্তি, ঠিক যেন বয়স হয়ে চামড়া কুঁচকে গেছে, নিজের নামটাও ঝাপসা আর পড়া যায়না। অ্যালার্ম দিলে আর বুঝতে পারেনা তাই যখন তখন বেজে ওঠে আপনমনে। অবাক লাগে এককালে এই কিনা আমাকে সঠিক সময় দেখাতো, ঘুম থেকে উঠতে সাহায্য করতো আর সেই এখন এরকম বয়স্ক হয়ে কাঁপতে থাকে, জোরে জোরে হাঁপায় আবার মাঝে মাঝে থেমে যায়।
ঘড়িটা কে দেখলে আমার ঠাকুরদার কথা মনে পরে, ঘড়িটা ঠাকুরদারই ছিল, ছোটবেলাতে দেখতাম ঠাকুরদা সারাদিন রোদ- বারান্দাটাতে বসে থাকতো আর রেডিও তে চলত সবার উপরের সিনেমার সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এর “জানিনা ফূড়াবে কবে, এই পথ চাওয়া”, লাঠিটায় তাল দিতেও দেখেছি বহুবার।
বাবা বলতো ঠাকুরদা নাকি খুব ভাল সেতার বাজাতেন, সেই বাবাই এসে বলল ঠাকুরদা আর নেই, মনে আছে মায়ের আঁচল ধরে খুব কেঁদে ছিলাম।ঠাকুরদার এই ঘড়িটা সেদিন থেকে আমার কাছে।
এইসব ভাবতে ভাবতে যখন ঘড়িটা বন্ধ করতে যাচ্ছি দেখি ঘড়িটা হটাৎ কথা বলে উঠল আমার দিকে তাকিয়ে “দাদুভাই আর পারছিনা খুব কষ্ট হচ্ছে, মুক্তি দাও , দাদুভাই,মুক্তি দাও”। মুক্তি মানে Euthanasia, সেতো illegal আমাদের দেশে, আবার সেও কিনা তোমায় যে এতদিন ধরে আমার সাথে ছিল। উত্তর এলো “তাই তো তোমাকে বলছি দাদূভাই, মুক্তি দাও, আর পারছিনারে কষ্ট নিতে, আর পারছিনা”। কিংকর্তব্যবীমূড় হয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে খুলে দিলাম ওর Evereadyর Pacemaker টা।
শেষ বারের মত একটা কর্কশ শব্দে ডাক দিয়ে দীর্ঘশ্বাস মোচন করলো আমার দুটো হাতের ওপর, আর যাওয়ার আগে বলল “ঘুমিয়ে পর, কালতো সকাল সকাল উঠতে হবে, কাল তো তোমার chemotherapy-র প্রথমদিন, তোমারও মুক্তি হোক দাদুভাই ভালোয় ভালোয়”।।