তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা। একটি ঝকঝকে শপিংমলে শপিং করছিল একজন কমবয়সী সুন্দরী বিবাহিতা যুবতী। বেশ ধনী ঘরের বলেই মনে হয়। দামি শাড়ী তার পরনে, মুখে প্রশাধনের প্রলেপ, গায়ে সোনার গহনা। একটু দুরেই দাড়িয়ে আছে তার স্বামী। সম্ভ্রান্ত ঘরের ঝকঝকে মার্জিত এক যুবক। তার মুখটা বেশ গম্ভীর। দেখে মনে হচ্ছিল যেন বাধ্য হয়েই এখানে এসেছে সে। ভাবলেশহীন মুখে দাঁড়িয়েছিল সে। যুবতীটি একটি শাড়ীর দোকানে একটি শাড়ী পছন্দ করছিল। সে তার স্বামীকে ডেকে বলে,
” শোনো, দেখোনা, এই নীল শাড়িটা কেমন লাগছে?”
-“ভালো”
-“হুম”
-“আর কপিন টা?”
-“ঠিক আছে, তুমি যা খুশি পছন্দ করো।”
-“বাঃরে তুমি কিছু হেল্প করবে না?”
-“আচ্ছা তাঁতের দুটো আর সিল্কের দুটো শাড়ী নেই বলো?”
-“এখান থেকে চলোতো!”- যুবকটি ধিরে বলে।
-“তুমি জলপাইগুড়িতে মানুষ হয়েছো। এখানের তুমি কিচ্ছু চেনো না।”
তারা অন্য একটি দোকানে যায়। যুবতীটি শাড়ী পছন্দ করতেই থাকে। তার যেন পছন্দই হচ্ছে না। যুবকটির অস্বস্তি লাগছিল। আজ এই মলে এসে একজনের কথা খুব মনে পড়ছিল। তারা আজ বিয়ের পর প্রথম এই মলে এসেছে। দুর্নিবার তার স্ত্রী ঝিলিককে নিয়ে প্রথম এই মলে এসেছে। ভাবলেশহীন মুখে দাঁড়িয়েছিল সে। ঘড়ি দেখে সে তার স্ত্রীকে বলল, – “আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি। কেনা হলে বাইরে এসো।” তার স্ত্রী ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল। যুবকটি মল থেকে বেরিয়ে বাইরে দাঁড়াল।
-“উফঃ বাইরে কি গরম! ভেতরে এসি চলছিল বলে গরমটা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না।”
সে রুমাল বার করে ঘাম মুছলো। বেশ কয়েক বছর আগে একজনকে এই শপিং মলে নিয়ে এসেছিল সে। আজ তার কথা খুব মনে পড়ছে। তাকেতো সে সত্যি ভালবাসত। তাই মলের ভেতরে তার মনটা খুব খারাপ লাগছিল। তার দেওয়া সেই রুমালটা সে অনেক যত্নে রেখেছিল। আজ কেন জানেনা সে তার দেওয়া সেই রুমালটাই সে সাথে এনেছে। দুর্নিবার যখন রুমালটা বের করছিল ওর বউ ঝিলিক বলে, -“ওই পুরনো রুমালতা রেখে দাও। ওটা কেউ বাইরে নিয়ে বেরোয়? তোমারতো অনেক ভালো ভালো রুমাল আছে, সেগুলো থেকেই একটা নাও।”
দুর্নিবার বউয়ের কথার উত্তরও দেয়না। ততক্ষণে রুমালটা তার পকেটে স্থান পেয়ে গেছে। ঝিলিক জানে তার স্বামী তার সব কথার উত্তর দেয়না। কখনো বাইরে ঘুরতে নিয়েও বেরয়না। আজ তাদের দু’বছরের বিবাহবার্ষিকী। এই দিনটাও সেলিব্রেট করার ইচ্ছেও তার খুব একটা নেই। ঝিলিকের চাপে পড়ে দু’বছর থেকে শুধু আজকের দিনেই বেরোয় ঘুরতে। কেনা-কাটা করে বাইরে খেয়ে তারা ঘরে ফেরে। শপিং মলে ঢোকার সময় একটি ছেলের সঙ্গে দুর্নিবারের গায়ে ধাক্কা লাগে।-” সরি” বলে সে সরে যায় দরজার কাছ থেকে। রুমালটা দিয়ে আবার মুখ মোছে। রুমালটার এক কোনে হাতে সেলাই করা ফুল তারপাশে ইংরেজির “j” লেখা। জাহ্নবী আর দুর্নিবার পরস্পরকে ভালবাসত। দুর্নিবারের হঠাৎ করে মনটা কেমন করে ওঠে। ওর এক বন্ধু বলেছিল রুমাল গিফট করলে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। সত্যি কি তাই? নইলে ওদেরও তো তাই হয়েছে। ও জানেনা কেন আজ জুনির মুখটা বারবার মনে পড়ছে তার। হঠাৎ তার নজরে পরে একটি যুবতী পরনে নেভি-ব্লু জিন্স আর সাদা টপ, হাইহিল জুতো, মাথার ছোট ছোট চুলগুলি পনি টেইল করে বাঁধা, মুখের দুপাশে কেয়ারলেস বিউটি। কাঁধের ওপর একটা সাইড ব্যাগ, একটু দুরেই দাড়িয়ে আছে। সাইড থেকে দেখতে পাচ্ছে ও। মাঝে মাঝে মেয়েটা সময় দেখছে। বোধয় কারো জন্য অপেক্ষা করছে। মেয়েটার ফিগার নজর কাড়ার মতো। অনেকেই মেয়েটার দিকে দেখতে দেখতে যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই ও হাত দিয়ে মুখের অবাধ্য চুলগুলো সরাচ্ছিল। তার সুডোল হাতের তীক্ষ্ণ নখগুলিতে ছিল গোলাপী নেইল পলিশ। দুর্নিবার কৌতূহল বশে একটু এগিয়ে গেল ওর দিকে। ওর অনেকটা কাছে এসে গেছে। হঠাৎই মেয়েটা ঘুরে দাঁড়ায়। বিনামেঘে যেন বজ্রপাত হল।
একি কাকে দেখছে ও!?
জাহ্নবী ?……!!
ক্রমশঃ……
অন্য জীবন : দ্বিতীয় পর্ব – Click here