Home Literature Stories বাতাসে ধোঁয়া

বাতাসে ধোঁয়া

0
বাতাসে ধোঁয়া

ফার্নান্দো খুব ভাগ্যবান শিশু। কারণ একটি খুব স্নেহপরায়ণ ও সচ্ছল পরিবারে তার জন্ম হয়েছিল।  সোনার চামচ মুখে নিয়ে তার শৈশব কেটেছে প্রচুর যত্ন, স্নেহ ও ভালবাসার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ খুব ছোট বয়সেই একটি ভয়ঙ্কর বিমান দুর্ঘটনায় সে তার বাবা ও মা দুজনকেই হারায়।

সেই দিন থেকেই সে পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য তার ঠাকুরদা মিঃ মারটিন এর কাছেই বড় হতে থাকে। তখন থেকেই তার জীবন ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যায়। কারণ তার দাদু ছিলেন খুব কড়া ও কঠোর প্রকৃতির মানুষ। তার মধ্যে স্নেহ, ভালোবাসা বলে কোনও আবেগ ছিল না।

তার ১২ বছর পূর্ণ হতেই দাদু তাকে প্রথমে বোর্ডিং স্কুলে এবং তারপর তাকে মিলিটারি স্কুলে ভর্তি করে দেন। সেখানে তার সহপাঠী ও বড়দের থেকে বিভিন্ন রকম অপমান সহ্য করতে হত। এর ফলে ধীরে ধীরে তার মনের মধ্যে ক্রোধ ও প্রতিহিংসা জন্মাতে থাকে।

এই ভাবে ৯ বছর কেটে গেল, তার আবার নিজের পুরনো বাড়িতে ফিরে আসার পালা। কিন্তু বিমান বন্দরে কেউ তাকে নিয়ে যেতে এল না। এমনকি তাদের গাড়ির চালকও এল না তাকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে যাবার জন্য। বাড়িতে এসে দরজায় টোকা দিতেই বাড়ির পরিচারক টমাস তাকে ভেতরে নিয়ে গেল।

‘তোমাকে দেখে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে যুবক ফার্নান্দো।’

‘আমার ও খুব আনন্দ হচ্ছে টমাস। আর দাদুর খবর কি?’

‘তাঁকে দেখলাম লাইব্রেরী তে বসে পড়ছেন। তাঁকে কি খবর দেব?’

না না, আমি নিজে গিয়েই দেখা করব দাদুর সাথে।

বিশাল ঘরটির দরজা বন্ধ ছিল। সে দরজার key hole দিয়ে মিঃ মারটিন এর সিগার এর ধোঁয়া দেখতে পেল। কোন কিছু না ভেবেই সে দরজাটি খুলে ছুটে ভেতরে ঢুকে গেল এবং চিৎকার করতে লাগলো –

‘দাদু, অবশেষে আমি ফিরে এসেছি, তোমার অভাব খুব অনুভব করেছি।’

বৃদ্ধ মারটিন তার ডেস্ক এর সামনের চেয়ারে বসে দরজার দিকে পেছন করে উত্তর দিলেন –

‘অবিবেচক ছেলে, তুমি জান না ঘরে ঢোকার আগে তোমার দরজায় টোকা দেওয়া উচিত ছিল? এটা ভেবেই আমার খুব দুঃখ হচ্ছে যে তোমার তোমার শিক্ষার জন্য যে অর্থ আমি ব্যয় করেছি সব জলে গেছে। তুমি তোমার জিনিসপত্তর নিয়ে তোমার ঘরে যাও, আর সেখানেই রাতের আহারের সময়ের জন্য অপেক্ষা করো।’

দাদুর কথায় খুব কষ্ট পেয়ে ফার্নান্দো দু চোখে জল নিয়ে দাদুর কথামতই সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেল। এই ভাবে বেশ কয়েক মাস কেটে গেল, ফার্নান্দোর মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরতে লাগলো – তার দাদু মিঃ মারটিন কে হত্যা করার কথা, কিন্তু তাঁকে এমনভাবে হত্যা করতে হবে যে সেটি একটি দুর্ঘটনা বলে মনে হবে। তাহলেই সে উত্তরাধিকার সুত্রে পারিবারিক সব সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবে, কোন সমস্যা হবে না তার।

আগস্ট মাসের এক রাতে তার কাছে সেই সুবর্ণ সুযোগ এসে গেল। তার দাদু সন্ধ্যাবেলায় অনেকটা সময় চিলেকোঠার ঘরে পুরনো কাগজপত্র গোছাতে ব্যস্ত থাকতেন। এই সুযোগটাই সে কাজে লাগালো। ফার্নান্দো  সিঁড়ির ধারে একটি সিগার রেখে দিল যাতে তার দাদু হোঁচট খেয়ে সিঁড়ি থেকে পরে যান। যেমনটি সে ভেবেছিল ঠিক তেমনই ঘটল। দাদু সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে নীচে পড়ে গেলেন এবং কাঠের রেলিং-এ লেগে তাঁর ঘাড় ভেঙে গেল।

এই ঘটনার পর এক বছর কেটে গেছে। ফার্নান্দোর জীবন খুব সুন্দর মসৃণ গতিতে চলতে লাগলো। সপ্তাহে পাঁচ দিন পার্টি, মজা লেগেই থাকত।

একদিন সকালে একটি চেনা গন্ধে হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে গেল। সে চোখ খুলে দেখল ধীরে ধীরে তার ঘরটি ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে। সে বিছানা থেকে নেমে জানলাগুলি খুলে দিতে চাইল, কিন্তু পারল না। সে ছুটে দরজার কাছে গেল, কিন্তু দরজাটিও বন্ধ ছিল। ইতিমধ্যে সারা ঘর ধোঁয়ায় ভরে গেছে, এততুকু অক্সিজেন নেই আর ঘরে।

সে মরিয়া হয়ে চিৎকার করে বলল – ‘দাদু, দাদু, আমি এটা করতে চাই নি, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দাও।’

কিন্তু তার কথায় কেউ সাড়া দিল না। শীঘ্রই সে বুঝতে পারল যে এই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র উপায় হল -‘মৃত্যু’। সে ডেস্কের ড্রয়ারটি খুলে একটি রিভলভার বার করল। রিভলভারটি  সে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে আর দ্বিতীয় বার না ভেবেই সে ট্রিগারটি টিপল। ভয়ঙ্কর শব্দে বাড়িটি কেঁপে উঠল। টমাস দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো যে তার ভালবাসার পাত্র ফার্নান্দো নীচে পড়ে আছে, তার খুলি তে একটি ছিদ্র এবং চারিদিক রক্তে ভেসে যাচ্ছে।

 

~ বাতাসে ধোঁয়া ~

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Exit mobile version