দুপুরবেলা অফিসে বসে কাজ করছিলেন বোধন বাবু। হাত ঘড়িতে বেলা ১টা ৩০ বাজছে দেখে খিদেটা যেন আরেকটু চাগাড় দিয়ে উঠল. ছোট ঘুপচি ঘরের ভাঙা জানালাটা দিয়ে চেয়ে দেখলেন, বাইরে আকাশে মেঘ করেছে। বাদলা দিনে এরম হয়. চেয়ার থেকে ক্যাঁচ শব্দে উঠে জালানার কাছে গেলেন বোধন বাবু, দেখলেন, কলেজ স্ট্রিটের জনজোয়ার। শুনতে পেলেন, বইওয়ালাদের কোলাহল, বুড়ো ট্রামের ঠং ঠং আওয়াজ। একগাদা পড়ুয়ার দল পিঠে বইয়ের ব্যাগ চাপিয়ে চলেছে, কেউ জীবন মুখোপাধ্যায়ের ইতিহাস বই খুঁজছে, কেউবা কেশব নাজের অংক বই, কে যেন একটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই এর খোঁজ করছে। কেউ প্রেমিকার হাতে হাত রেখে চলছে, কেউ বা কে এর ভাঁড় হাতে কে খাচ্ছে. কলেজ স্কয়ারের ক্যান্টিনের কাপ প্লেটের আওয়াজ আসছে, পুটিরামের মিষ্টির দোকানে ভিড় দেখতে পাচ্ছেন বোধন বাবু। বোধন বাবুর মৌচাকের কচুরি ডাল খেতে ইচ্ছে করল. তারপর না হয় কল্পতরু তে গিয়ে একটা মিথ্যে পান খাওয়া যাবে ফিরতি পথে খেলার খবরটা নিয়ে নেয়া যাবে পারামাউন্টের পাশের দোকান থেকে। কলেজ স্কয়ারে বচ্চার সাঁতার কাটছে নাকি আজ? কি সুন্দর লাগছে আজ কলেজ স্ট্রিটটা। এযেন এক ব্যস্ত কলকাতার মেঘলা দুপুর। এমন ভাবে বোধন বাবু যে কতক্ষন চেয়ে ছিলেন তা জানেন না. হঠৎই সহকর্মী মুরলি প্রসাদ এসে বলল, খানে চালো। চমক ভাঙতে বোধন বাবু দেখলেন, সহকর্মী মুরলি দাঁড়িয়ে আছে. বাইরে তাকিয়ে দেখলেন, মধ্য ভারতের নোংরা একটা গলি, কাদা জল মাড়িয়ে লোকে হেটে যাচ্ছে, হিন্দি তে সাইন বোর্ড। কি হলো এটা ? একি কোথায় কলেজ স্ট্রিট? কোথায় বইয়ের দোকান গুলো? চকিতে বোধন বাবু বুঝতে পারলেন, ভাঙা জানালা দিয়ে উনি যেন চলে গেছিলেন, ওনার শহর কোলকাতাতে , হারিয়ে গেছিলেন, সেই জনজোয়ারে, মিশে গেছিলেন, বই পাড়ার সেই পুরোনো বইয়ের গন্ধে। নিজেকে ভারাক্রান্ত মনে হলো বোধন বাবুর, নিজেকে এক মনে হল। একটা বিদ্যুৎ চমকে উঠেই শুরু হয়ে গেল, বৃষ্টি। আর তখনই সেই ভাঙা জানালা দিয়ে মিলিয়ে গেল, বোধন বাবুর সেনা শহর, কলকাতা।