জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা হিসাবে ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় বিস্তৃত। প্রভাতী সঙ্গীত থেকে বাংলা বছরের শুরুতে ‘এসো হে নতুন’ ; ‘এসো হে বিশাখ’; রবীন্দ্রনাথ ছড়িয়ে রয়েছেন আমাদের কাছের মানুষ, আমাদের মনের মানুষ হয়ে। ‘
যদি তোর ডাক শুনে কেঊ না আসে, তবে একলা চলো রে’; ‘গ্রাম ছাড়া এঈ রাঙ্গা মাটির পথ’ বাউল সঙ্গীতেও রবীন্দ্রনাথ। শিশুদের কিশলয় পাঠে ‘আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে মৌ’, রবীন্দ্রনাথ ছড়াতে আছেন; কবিতায় ‘হাট বসেছে শুক্কুরবারে, বক্সী গঞ্জের পদ্মাপারে’। আরো কবিতা ‘প্রশ্ন, ছুটি’ ইত্যাদি।
গীতি নাট্য চন্ডালিকা, চিত্রাংগদা ইত্যাদিতে রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ সার্বজনীন, গরিবের রবীন্দ্রনাথ বা রবি ঠাকুর আবার ধনীর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।রবীন্দ্রনাথ শুধু সাহিত্যের নন রাজনীতির ও। মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীকে তিনি মহাত্মা নামে অভিহিত করেন।
জালিন ওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। বঙ্গভঙ্গের সময় তিনি রাখী বন্ধন উৎসবের আয়োজন করেন। ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু’…… পূণ্য হোক, পূণ্য হোক হে ভগবান।’
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় এই গান তিনি রচনা করেছিলেন। বাংলাকে এক ও অবিচ্ছিন্ন রাখতে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে রাখী বন্ধন উৎসবের ভবনা রবীন্দ্রনাথ বলেই ভবতে পেরেছিলেন। তার এই ভবনায় দুই সম্প্রদায় আরো কাছাকাছি আসতে পেরেছিল। বাংলার আত্মাকে অন্তরঙ্গ ভাবে অনুভব করেছিলেন, ছুঁয়ে গেছিলেন বাংলার মানুষকে, তার প্রতিটা অনুভূতি, কল্পনা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে।
সাংস্কৃতিক রবীন্দ্রনাথ পৌষমেলার ও বাংলা বছরের শুরুতে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন সম্পূর্ণ তারই মস্তিস্কপ্রসুত। শিক্ষাবিদ হিসাবে তিনি অভিনব শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছিলেন শান্তিনিকেতনে। আধুনিক ও মুক্ত শিক্ষার প্রয়োগ তিনি বাংলা তথা ভারতের বুকে প্রথম দেখিয়েছিলেন। পরাধীন, কুসংস্কার ও অর্বাচীন চিন্তাভাবনাগ্রস্ত তৎকালীন ভারতবর্ষের বুকে রবীন্দ্রনাথ প্রতিস্প রধা দেখিয়েছিলেন বিশ্বভারতীকে মুক্ত শিক্ষার পীঠস্থান হিসাবে পরিচিতি দান করেছিলেন।
সমাগম ঘটিয়েছিলেন নন্দলাল বসু, রামকিংকর বেজ দের মত পথিকৃৎদের। সাধারণের জন্য আধুনিক শিক্ষা কি রকম হওয়া উচিত বা আগামী দিনে শিক্ষার পরিবেশ কি প্রকার হতে চলেছে তার চাক্ষুষ প্রমাণ হাতেকলমে বাংলার বুকে প্রচলন করেছিলেন। আদর্শ শিক্ষার পরিবেশ সারা ভারতবর্ষের কাছে নিদর্শন হিসাবে তুলে ধরেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তার কৃষ্টিকে সাহিত্যের গণ্ডিতে আবদ্ধ রাখতে চাননি, বরং বাংলার মানুষের হিতার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন।রবীন্দ্রনাথ ‘গীতাঞ্জলির’ সুত্রে বিশ্বজনীন পরিচিতি পেয়েছিলেন নোবেলে পুরস্কারের মাধ্যমে। তিনি আমার, আপনার সবার কবি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। গদ্যের মাধ্যমে আমার আপনার প্রতিবাদের ভাষা ‘দেনা-পাওনা’ র অনুপমা চরিত্রে তুলে ধরেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ কখনো সাহিত্যের পুব আকাশে নবদয় আবার পরিণত কালে মধ্য গগনের রবি হয়ে বিরাজ করেছেন।
তিনি দেখাতে পেরেছিলেন তিনি সাহিত্যিক হিসাবে নন, সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে কত সহজে প্রতিবাদ করতে পারেন আপনার জন হয়ে। তার সাহিত্যরস আমাদের কত সাবলীল ভাবে স্পর্শ করে। আজো তাই তিনি রবীন্দ্র অনুষ্ঠানে নমস্য ব্যক্তিত্ব। সাধারণের কাছে তিনি তাই কত কাছের কবিগুরু, বিশ্বকবি আবার গবেষকের কাছে প্রাসঙ্গিক গবেষণার বিষয় তার ১৫৭ বছরের জন্মবার্ষিকীতে।