Home Literature কবিতা কী

কবিতা কী

0
কবিতা কী

কবিতা কি?

সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল কবিতা। পৃথিবীর সব দেশে সব ভাষাতেই কবিতা লেখা হয়। এক কথায় কবিতার কোনো সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। কয়েকটি বাক্যে কবিতার বৈশিষ্ট্য সব প্রকাশ করা যায়না । জগতের অধরা মাধুরী কবিতার মধ্যে খানিক প্রকাশ পায়। শ্রেষ্ঠ কবিতা তার বাচ্যার্থ ও লক্ষ্যণার্থকে অতিক্রম করে ব্যঞ্জনার্থে উন্নীত হয় এবং রসময়তা সষ্টি করে। কিন্তু কাব্য রস অপার্থিব । কবিতা অলৌকিক। কবিতা লোকোত্তর আনন্দ দান করে।

সাধারণ ভাবে কবিতা হল কবির উপলব্ধিজাত এক বিশেষ শিল্পভাবনা। কবিতা হল এক ধরনের সৃষ্টি । কবির মনে বা জগতে – যা আগে ভাবের মধ্যে ছিল,বস্তু হিসেবে ছিল না, কবি তাকেই রচনা প্রতিভার গুণে কবিতা হিসেবে নতুন রূপ দেন। কবিতা হল কবির সৌন্দর্য্যভাবনার বহিঃপ্রকাশ বা কবির বাস্তবতাবোধের উন্মোচন ঘটায়। পাশা পাশি কবিতা হল কবি মনে স্থিত ভাব ও ভা্লোবাসার জাগরণ। কবিতা হল এক ধরনের সদর্থক জীবনভাবনা – যা মানুষকে সতত প্রেরণা দেয়। কবিতা মানুষকে ভালবাসতে শেখায়, প্রতিবাদী হতে সাহায্য করে। কবিতা মানুষকে নির্মল আনন্দ দান করে।কবিতা কবির শিক্ষা, সংস্কৃতি, চেতনার পরিচয় প্রদান করে।কবিতা পাঠে মন-প্রাণ সমৃদ্ধ হয়।কবিতা রচনা করলে প্রজননের স্বাদ পাওয়া যায়।

এক বিশেষ মুহূর্তে কবিতা রচিত হয়। অন্য কোনো সময়ে জোর করে কবিতা লেখা যায় না। মনের অস্থিরতাতেও কবিতা লেখা যায় না। শব্দ এবং অর্থের যথার্থ মিলনের ফলেই কবিতার জন্ম হয়। কবি মধুসূদন বলেছিলেন – ‘কে কবি, কবে কে মোরে শব্দে শব্দে বিয়া দেয় যেই জন’। প্রাচীন কালে আচার্য ভামহ বলেছিলেন- ‘শব্দার্থৌ সহিতৌ কাব্যম্’। অর্থাৎ শব্দ ও অর্থের সমন্বয়ে কাব্য বা কবিতা গড়ে ওথে। আচার্য বামন বলেছিলেন- ‘কাব্যং গ্রাহ্যং অলংকারাৎ’। অর্থাৎ কাব্য বা কবিতা গ্রাহ্য হয় অলঙ্কারের দ্বারা। অলঙ্কার দুই প্রকার- শব্দালঙ্কার এবং অর্থালঙ্কার ।শব্দালঙ্কার কবিতাকে শব্দধ্বনিগত সৌন্দর্য দান করে আর অর্থালংকার কবিতাকে অর্থগত সৌন্দর্য দান করে। কবিতা ছন্দবদ্ধ রচনা। নিরূপিত ছন্দে রচিত না হয়েও কবিতার মধ্যে এক ধরনের ছান্দিক সৌন্দর্য প্রকাশ পায়।

কবিতা আমাদের চিন্তা-চেতনাকে জাগ্রত করে, প্রেরণা দেয়। কবিতা আমাদের সৃষ্টিশীল করে। কবিতা আমাদের জীবনকে ভালবাসতে শেখায়।কবিতা আমাদের আত্মসংস্কৃতিকে ও জাতীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে। কবিতা পাঠকের অন্তরঙ্গতা ও আন্তরিকতা দাবি করে।

সকল লেখাই আবার কবিতা হয়ে ওঠে না। এই প্রসঙ্গে কবি জীবনানন্দ বলেছেন- ‘সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি’।অর্থাৎ কবিতা লিখলেই কবি হওয়া যায় না। কাব্যলক্ষ্মী যাঁকে কৃপা করেন তিনিই কবি হয়ে উঠতে পারেন । অমর কবিতা লিখে বিখ্যাত হয়েছেন বাল্মীকি, ব্যাসদেব , হোমার প্রমুখ কবি। পরবর্তী কালে কালিদাস, ভারবি, শেলী, কীটস, বায়রন, ইয়েটস, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ কবি উচ্চ মানের কবিতা লিখে জগতে বিখ্যাত হয়েছেন। আমরা এ প্রসঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘কবিতার কথা’ গ্রন্থ থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি ব্যবহার করতে পারি।

 

১। “কবিতা রসেরই ব্যাপার, কিন্তু এক ধরনের উৎকৃষ্ট চিত্তের বিশেষ সব  অভিঞ্জতা ও চেতনার জিনিস – শুদ্ধ কল্পনা বা একান্ত বুদ্ধির রস নয়”।

২। “হতে পারে কবিতা জীবনের নানারকম সমস্যার উদ্ঘাটন; কিন্তু উদ্ঘাটন দার্শনিকের মতো নয়, যা উদ্ঘাটিত হল তা যে কোন জঠর থেকেই হোক আসবে সৌন্দর্য রূপে …”

৩। “বিভিন্ন অভিজ্ঞ পাঠকের বিচার ও রুচির সঙ্গে যুক্ত থাকা দরকার কবির; কবিতার সম্পরকে পাঠক ও সমালোচকরা কীভাবে দায়িত্ব সম্পন্ন করছেন – এবং কীভাবে তা করা উচিত সেইসব চেতনার উপর কবির ভবিষ্যৎ কাব্য,আমার মনে হয় আরো স্পষ্টভাবেশুরাড়াবার সুযোগ পেতে পারে”।

৪।  “কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার, কবিতার অস্থির ভিতরে থাকবে ইতিহাস চেতনা ও মরমে থাকবে পরিচ্ছন্ন কাল জ্ঞান” ।

 

 

~ কবিতা কী ~

 

1 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Exit mobile version