Home Literature Stories ইচ্ছের বিরুদ্ধে

ইচ্ছের বিরুদ্ধে

0

-কিগো শুনছো! তোমার মেয়েতো সারারাত ঘুমাইলো না। কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলে যাচ্ছে ঘুমের মধ্যে। আমার কেমন জানি লাগতেছে।

-কি হয়েছে বলতো? কিছু বুঝে উঠতে পারতেছিনা। এমন ভাবেতো কোনোদিন বলো নি।

-আরে তেমন কিছু নয়গো। ও বাড়ির ভূত চেপেছে ঘাড়ে। ঠিক মতো মেয়েটা আমার কথাই শুনেনা। আবার অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠতেছে। এইখানে থাকলে হইতো আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।

-না তুমি যাই বলো না কেনো, আমার মন জানি কেমন করতেছে। মেয়েটাকে ঠিক মতো পড়াশোনাও করতে দিলে না। ধুম করে বিয়ে দিলে। মেয়েটা আমার কত ভালো ছাত্রী ছিলো।

-আচ্ছা সব বললে কিন্তু একটা কথা এখনও মাথায় আসেতেছে না জামাই তো এলো না আমাদের বাসায়।

-আরে! মেয়ে বলেছে আমাকে, জামাইয়ের অনেক কাজ। ইদানিং নাকি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছে। জামাই আমার খুব ভালো বুঝছো। কয়জন আছে যে শ্বাশুড়ীর খোঁজ নেয়!

-হাহাহা, এই মাত্র বললে মেয়ে নাকি তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়েছি সব দোষ আমার, এখন আবার ভূতের মুখে রাম। তাই না? তবে মেয়ের বিয়ে দিলাম মাত্র চার মাস হলো। আর
জামাই মেয়েকে ছেড়ে দিলো একা আসতে? কি জানি বাপু আমাদের কালে তো এরকম ছিলো না। আমি তোমাকে নিয়েই তোমার বাড়িতে সবসময় গেছি। যাই নাই কি?

-আরে কি যে বলো না। তোমাদের সময় দিনকাল আলাদা ছিলো। এখন সব কিছু ডিজিটাল। ওই সব ভাবলে চলে না বুঝছো?

-তোমার সাথে কথা বলে পারা যায় না। তুমি যাই বলো না কেনো, আমি আজই জামাইকে ফোন করবো। দেখি জামাই কি বলে!

-আচ্ছা যা ভালো বুঝো তুমি করো। এখন মেয়েকে ডাকি, নাস্তা খাইতে হবে তো। এত ঘুমাইলে কি চলে। শরীর ভেঙে পরবে। ঠিক মতো একটু কথাই বলতে পারবো না অর সাথে।

-আহা! থাক না আরও একটু ঘুমাক না মেয়ে। ও বাড়িতে ঠিক মত ঘুমায় কি না কে জানে! আমার মেয়েটাকে ওরা মনে হয় অনেক কাজ করায়। একটু না হয় একটু শান্তিতে ঘুমোক এখন।

-বেলা কিন্তু পেরিয়ে গেলো। দুপুর হতে যাচ্ছে। কথা না বলে উঠিয়ে দাও মেয়েকে।

-হোক বেলা! মেয়ে যখন বাড়িতে প্রবেশ করলো মুখটা একবার দেখেছো? কি রকম মনমরা দেখাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো হয় ভয়ে বা ঝগড়া করে পালিয়ে আসছে।

-তুমি থামবে একটু ! সবসময় তোমার খুঁত না ধরলে কি চলে না। খালি উল্টা পাল্টা চিন্তা তোমার।

-মায়ের মন তুমি কি বুঝবে! বাবা হয়ে কি কাজটা করেছো মেয়ের জন্য শুনি?

-থামোতো তুমি। সব কিছুতে একটু বেশি বেশি কুকথা না বললে তোমার মন শান্তি হয় না। সকাল সকাল কি সব শুরু করে দিলে আজ আবার।

-তুমি যাই বলো না কেনো, আমার মন বলতেছে কিছু একটা হয়েছে। তুমি মিলিয়ে দেইখো।

-আবার শুরু করলে? কথা না বারিয়ে যাও মেয়েকে ডেকে দাও। হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নিক। তারপর জামাইকে ফোন লাগাক। আমি কথা বলবো।

-রাখো তোমার বকবক। আমি যাচ্ছি মেয়েকে ডাকতে।

*

হঠাৎ দেখি পাশের বাসার খালার আগমন।  আমার মেয়েতো মাধ্যমিক পাশ করে এখন কলেজে দিলাম। ও  হ্যাঁ! আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম। মেয়ের না ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব আসতেছে। ছেলে ভাবী জানেন কি যে সুন্দর, দেখতে রাজকুমার। সরকারী চাকুরী করে ভাবী। আপনি তো মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কি জানি করে ভাবী জামাই!

আমার মেয়েকে তো তাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিলাম। আপনি ভাবী এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা ভাবতেছেন কেন? মাত্রই তো মেয়ের বয়স আঠারো তে পা দিলো। মেয়ের কি রাজি আছে বিয়েতে?

ধুর ভাবী আপনি বেশি পেঁচিয়ে ফেলেন সব কিছু। মেয়েকে তো অন্যের ঘরে দিয়ে দিয়েছেন। তা ভাবী মেয়ে যে একাই ফিরলো কাহিনী কি ভাবী।

বলতে না বলতেই আরও চার জন হাজির। ভাবী ও ভাবী! ভাই কি বাসায় নাকি? শুনলাম বাপু মেয়ে বলে চলে এসেছে। তা এইবার কি নাতির মুখ দেখবেন না কি!

*

মা বাবার কথা গুলো বিছানায় শুয়ে চুপচাপ শুনতে ছিলাম আমি। ঘুমতো আমার সেই অনেকক্ষণ আগেই ভেঙে গেছে। ঘুম থেকে উঠলেতো আবার মায়ের হাজার টা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে, তাই সেই ভয়েই চুপচাপ শুয়ে আছি। আমার থেকে মা-কে ভালো মত কেউ চিনে না। হাজারটা প্রশ্ন করবে আমাকে। জামাই কেন এলো না? তুই একা আসলি কেন? ওকে নিয়ে আসলি না কেন? তোর শরীর ঠিক আছে তো? নাকি শ্বাশুড়ী মা তোকে কিছু বলছে?

সত্যি কথা বলতে সব প্রশ্নের জবাব দিতে আমি এখন প্রস্তুত নই। কি করে বলি বাবা-মা কে আমি যে ভালো নেই। আমাকে তো সেদিনই শেষ করে দিয়েছো তোমরা, আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়ে দিয়েছো। কিন্তু না কিছু বলছি না আমি। বলার মতো সেই সাহসটুকু নাই আমার। মা তো অনেক প্রশ্ন করে যদি রেগে যেয়ে জিজ্ঞাসা করে কেনো ভালো নেই, আমি কি বলবো তখন?

সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করতে ছিলাম। অনেক ইচ্ছা ছিলো স্নাতক ডিগ্রী টা পাওয়া। কিন্তু প্রতিবেশীদের সবসময় বাজে মন্তব্য তার বাবা-মার একটুও ভালো লাগতোনা। পাশের বাসার খালা প্রতিদিন ওর মা-কে নানারকম কথা বলতো। কি ভাবী! মেয়ের বয়সতো বাইশ পেরিয়ে গেলো বিয়ে কি দিবেন না ? পরে কিন্তু ভালো ছেলে কপালে জুটবে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের এত পড়ালেখা করার দরকার নাই। বিয়ে দিয়ে দেন, সব ঝামেলা দূর হয়ে যাবে। মেয়ে মানুষ পড়ালেখা করে কি করবে? চাকুরী করলে সমাজ খারাপ বলবে। বাদ দেন তো ভাবী বিদায় দেন মেয়েকে।

আচ্ছা! ওর বাবা আসুক বলবো সব খুলে।

ওগো জানো পাশের ভাবীর মেয়ে তো মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলো, ভালো একটা ছেলে পেয়েছে সরকারি চাকুরী করে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।

আসলে আমি দেখলাম এই সমাজে মেয়েদেরকে কেউ দাম দিতে চায় না। সবাই কি তাহলে আমাদেরকে বোঝা ভাবে সংসারে! আমারতো অনেক ইচ্ছে ছিলো পাশ করে নিজের এলাকার জন্য কিছু কাজ করবো, দেশের জন্য কাজ করবো! তরুণ-তরুণীদের কে উৎসাহিত করবো সমাজের গরীবদের কে সাহায্য করা। কিন্তু আমার স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে!

বিয়েতে রাজি না থাকার পরও বিয়ে করলাম। নাহ, আমার শ্বাশুড়ী আজ পর্যন্ত কোনো কাজ করতে দেয় নি। এমনকি শ্বশুড় ও ‘মা’ ছাড়া অন্য কিছু বলে সম্বোধন করে নি। দেবর তো বৌদি ছাড়া কাউকেই আর চেনে না।

বৌদির বিয়ে হয়েছে ষোলো বছর বয়সে। ছেলেটাও তার বড় হয়ে যাচ্ছে। অনেক ইচ্ছে ছিলো তার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার। তা আর হলো না। বিয়ের পিরিতে তাকে পাশ করতে হইলো। মাঝে মাঝে বৌদি এইসব বলে আর কান্না করে। সমাজের এইসব বাজে মন্তব্যের ফলে এই অবস্থা। শিক্ষিত হয়েও আজ আমরা মূর্খ্য।

আমার স্বামী রোজ রাত্রে কাজ থেকে ফেরার সময় কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। চার মাসে একদিনও তার অন্যথা হয়নি। সবাই খুব ভালো পরিবারের। আমি তাও সুখী নই। প্রতিটা রাত আমার কাছে কাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিটা দিন মনে মনে ভাবি এটাই বুঝি আমার শেষ রাত। ভয়ে চুপটি মেরে এক কোণায় বসে থাকি। অসহ্য ব্যাথায় কাতরাই, তবুও আমি মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারিনা। আমি জানি একমাত্র আমার মা-ই শেষ সম্বল। মাকে বলতেই হবে সব খুলে। আমি সত্যিই খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।

*

কি মেয়ের সাথে কি কিছু কথা হয়েছে? দেখলাম জ্বর কাশি ঠান্ডা লেগে ফেলেছে। প্রায় পাঁচ দিন হয়ে গেলো এখানে এসেছে কেমন মুখ শুকনো করে বেড়ায়।

কি কথা হবে শুনি? তোমার মেয়ে কি আমাকে কিছু বলতে চায়? হাজার টা প্রশ্ন করলে একটা উত্তর দেয়। আমি পারবো না তুমি না হয় দেখো ব্যাপার টা।

ওহ! তুমি এত অস্থির হচ্ছো কেনো বুঝতেছি না। তুমি না ওর মা। বাবাকে কি কেউ কিছু বলতে চায়। তোমাকে নিশ্চয় কিছু বলবে।

তোমার কি মনে হয় কিছু হয় নি? মেয়ে আমার বিয়ের আগে কি সুন্দর হাসিখুশি ছিলো তুমি জানো না? না কি সব ভুলে গেছো। বিয়ের পর জানি মেয়েরা কত আনন্দে থাকে, আমার মেয়ে দেখি দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।

আচ্ছা একটা কথা মাথায় আসতেছে না। ওহ! মনে পড়েছে। আচ্ছা তুমি কি সেইদিন জামাই এর সাথে কথা বলেছিলে? কি বললো জামাই?

তুমি না বললে কথা বলবে বলো নি? তোমার আশায় কি থাকা যায়। আমি কথা বলেছি একবার না হয় বহুবার। জামাই বললো, সে জানে না কিছুই। শুরু একটা কথা বলেছে যে, মেয়ে এখানে আসতে চেয়েছে তাই পাঠিয়ে দিয়েছি।

মেয়ে কি জানে তুমি জামাই এর সাথে কথা বলেছো?  কি বললো মেয়ে ? কিছু বুঝে উঠতে পারলে?

হ্যাঁ, মেয়ের সাথে কথা হয়েছে। বললাম জামাই এর সাথে কথা বলেছি। এই কথা বলার পর তো আরও রেগে গেলো মেয়ে আমার। আমাকে উল্টা পাল্টা আরও কত কথা শুনিয়ে দিলো। বুঝি না বাপু আজকালকার ব্যাপার স্যাপার। বেশি পড়ালেখা করালে এমনই হয়। পাকনা হয়ে যায়, কথার সাথে পারবানা মেয়ের সাথে।

আবার শুরু করলা। আচ্ছা দাঁড়াও আমি কি মেয়ের সাথে কথা বলে দেখবো ?

হ্যাঁ, দেখো কথা বলে কিছু উদ্ধার কুরতে পারো কি না। মনে হয় না তোমাকে কিছু বলবে। ছোট বেলা থেকে তোমাকে ভয় পেয়ে আসতেছে। আজ পর্যন্ত কোনো দিন ও তোমার কাছে কিছু চাই নি মেয়ে আমার।

আরে বাবা থামো তো, আমার মেয়ের সাথে কথা বলা দরকার। কতদিন কথা হয় না মেয়ের সাথে।

*

বাহ! আজ কি দেখি রান্নাঘর থেকে সুন্দর ঘ্রাণ বের হচ্ছে। ব্যাপার টা কি! কেউ আসবে না কি বাড়িতে? না কি অন্য কোনো মতলব আছে।

আমার যে কিছু খেতে ইচ্ছা করে না। একটু যাই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে আসি কি রান্না করেছে। ও বাড়িতেও তো ভালো মন্দ খেয়েছি অনেক। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী তো আমাকে ছাড়া খাওয়ার টেবিলে বসতোই না।

ওমা! এই সময়ে আবার কে ফোন করলো।

কিরে বাড়ি আসলি  একবার বলতে তো পারতিস।

গলার আওয়াজটা চেনা মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, চিনেছি। বান্ধবী কেমন আসিস তুই? শুনছিলাম  তুই বলে ডিগ্রী নিতে বিদেশে এখন। কি ভালো! তুই তোর স্বপ্ন পূরণ করলি।

হ্যাঁ রে! এই দেশে ফিরলাম, আর তোর ফোন নম্বর খুঁজে বের করলাম। তাই তো ফোন দিলাম। একটা চাকুরীতে ধুকেছি। তোর কি অবস্থা? বড় আশা ছিলো তোর বিয়েতে থাকবো। ইশ! আর যদি চারটা মাস আগে আসতাম।

হ্যাঁ, আগে আসলে ভালো হয়তো রে। বিয়ে করে খুব শান্তিতে আছি। একদিন আয় বাড়িতে কথা আছে অনেক, না বলা কথা গুলো জমিয়ে রেখেছি।

তুই এখন কই রে?

মা-বাবা কে দেখতে বাড়িতে আসলাম।

ও আচ্ছা! জামাই বুঝি এসেছে তোর সাথে?

আরে না রে বান্ধবী। আমি নিজেই আসলাম। ও তো নতুন ব্যবসা শুরু করেছে, তাই খুব চাপে আছে।

*

ওদের সাথে ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও কথা বলতে পারিনা। বড় আফসোস লাগে আমার। আজ হয়তো আমিও ভালো কিছু করতে পারতাম। ভাগ্যের কি নিয়তি! কই আমি কষ্টে নেই। আমি তো কষ্ট পেতে ভালোবাসি। বান্ধবীকে তো ব্যবসায় আসতে বললাম, সব কি খুলে বলে দিবো? না থাক! নিজের ব্যক্তিগত কথা অন্যকে না বলাই ভালো। কিন্তু এই বিভীষিকাময় রাতের কথা গুলো কিভাবে জমিয়ে রাখি।

হাহাহা! সংসার সেইটা আবার কি?

না না! কি সব বলতেছি আমি! মেয়েদের মুখে তো আবার এইসব কথা মানায় না।

ইচ্ছার কি কোনো অর্থ আছে? আমার তো মনে হয় জানা নেই। জানবো কিভাবে আমরা কি কারো কথা শুনতে চাই? স্বপ্ন যদি বাস্তবায়িত না হয় সেই সমাজে থেকে কি বা লাভ।

কি সব বলতেছি আমি! পাগল হয়ে গেলাম নাকি।

না মানুষের মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয় নি। শিক্ষিত হলেও স্বভাব টা রয়ে গেছে পুরোনো সেই কুসংস্বার যুগের মত। যেখানে নেই কোনো ব্যক্তি স্বাধীনতা, নাই কোনো সত্যকে জয় করার প্রচেষ্টা, নাই মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়াই করা। এমনকি কেউ এগিয়েও আসে না মানবতার কাজে।

নাহ! এইসব কি আসতেছে আমার মনের ভেতরে। আমিতো বেঁচে থেকেও মৃত।

ভেবেছিলাম ও বাড়িতে যে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করবো,  পরীক্ষা টা দিবো। কিন্তু সংসারের কথা চিন্তা করে সম্ভব হচ্ছে না আর।

আচ্ছা! আমি যদি আমার সব সমস্যার কথা কাউকে বলি, সে কি আমাকে সাহায্য করবে? না, করবে না হয়তো। আমাকে সাহায্য করে তার কি লাভ। সমাজে কত মেয়ের জীবনটা এইভাবে যাচ্ছে কই কেউ তো এগিয়ে এলো না। সার্থ ছাড়া কেউ কারো পাশে থাকে না কখনও। থাক প্রতিবাদ করার ভাষা আমি হারিয়ে ফেলেছি,  কেউ কারোর জন্য নয়। আজ আছে তো, কাল চলে যাবে।

*

গত প্রায় দশ দিন ধরে মা আমার পেছনে লেগে আছে শুধুমাত্র আমার মনমরা থাকার কারনটা বের করবে বলে।  আমাকে বার বার বলে এত ধুমধাম করে পাড়ার লোকদের কে দাওয়াত দিয়ে তোর বিয়ে দিলাম। আর চার মাসের মাথায় তুই যদি ফিরে চলে আসিস তাও আবার বর ছাড়া, সমাজের কাছে পাড়া প্রতিবেশীর কাছে কোন মুখে দাড়াই বলতো?

ঝগড়া করেছিস? না কেউ কিছু বলেছে? ইত্যাদি ইত্যাদি……………

আমি জানি একদিন মাকে সব বলে দিতে হবে। এভাবে ভয়ে, আতঙ্কে, ঘেন্নায় বাঁচা যায় না।

কোন মুখে বলব সে সব কথা? তবুও আমাকে বলতেই হবে। সাহস সঞ্চয় করে বলতেই হবে আমাকে।

একদিন মা-র চোখের পানি দেখে আর থেমে থাকতে পারলাম না। মায়ের কাঁদো কাঁদো চোখের করুন সুর শুনে বলেই ফেললাম সব।

মা! ও মা! আমি পারি না ওর শক্তি সামর্থ্য আর ইচ্ছার সঙ্গে পাল্লা দিতে। এই একটা ক্ষেত্রে ও খুব আনাড়ী। আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই ওর কাছে। আমিও তো মানুষ। আমারও তো স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। আমি পারি না সইতে মা। আমি যে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করিনি তা নয়। বাঁধা দিলেই তো বাবা-মা তুলে যা তা বলা শুরু করে। কি করে আমি তোমাকে বলবো এসব কথা? বলতে পারো?

রোজ রাতে আমার অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও আমাকে একরকম ধর্ষণ করে। আমি মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে, সাত পাকে বাঁধা পড়েছি বলে, আমার সারাজীবনের ভাত কাপড়ের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিয়েছি বলে কি আমার ইচ্ছার অনিচ্ছার কোনো মূল্য থাকবে না? সেগুলাও বিসর্জন দিতে হবে?

আমি পারছি না মা। আমি মুক্তি চাই।

মা কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকলো, কিছু না বলে উঠে চলে গেলো। আমিও লজ্জায় ঘেন্নায় চুপচাপ বসে থাকলাম।

*

পরের দিনই জরুরি তলবে আমার ও বাড়ির সকলকে দাওয়াত দিয়ে ডেকে আনলো। আমি ভাবলাম মুরব্বী, বিশিষ্ট ব্যক্তিজনকে ডেকে কিছু একটা মিমাংসা করবে। এইভাবে তো আর বেঁচে থাকা যায় না। আজ খুব অবাক হচ্ছি। ওদের সাথে আমাকে শ্বশড় বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।

যাওয়ার আগে শুধু একবার আড়ালে ডেকে বলেছিলো- “ অবন্তী মেয়ে আমার! তুই মেয়ে! স্বামীকে খুশি রাখা প্রথম ও প্রধান কর্তব্য বলে মনে করবি। আমাকে যা বলার বলেছিস আর কাউকে কোনদিন এসব বলে লোক হাসাস না।“

মা-র কথা গুলো শুনে নিজেকে সামলাতে পারতেছি না। আমিও হাসছি। খুব হাসছি।

একদিন সব অভিমান, অবহেলা দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিব!

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Exit mobile version